নিজস্ব প্রতিনিধি : কোনো ধরনের ডাক্তারী বিদ্যা ছাড়াই লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে মিনি হাসপাতাল খুলে বসেছেন হাতুড়ে ডাক্তার প্রণব শর্ম্মাধিকারী। চন্দ্রগঞ্জ সমতা সিনেমা হলের পাশেই শর্ম্মা মেডিকেল হল নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগিয়েছেন বিশাল কয়েকটি সাইনবোর্ড। নামের আগে লিখেছেন ডাক্তার। ডিগ্রীও আছে ডিএমএস, বিএইচই (স্বাস্থ্য)। সপ্তম শ্রেণি পাশ স্ত্রী সুমিতা রানী শর্ম্মাধিকারী, তিনিও ডাক্তার লিখেছেন নামের আগে। কন্ট্রাকে চিকিৎসা করা হয় এখানে। রোগীর ধরণ বুঝে চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। ৫ হাজার, ১০ হাজার, ২০ হাজার টাকা কন্ট্রাকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে রোগীদের সাথে চলছে চরম প্রতারণা। দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে এমন প্রতারণা চলে আসলেও কেউ তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিতরে রোগীদের জন্য বেডের ব্যবস্থাও আছে। রীতিমত রোগী ভর্তি করা হয়। মাঠে কাজ করার জন্য এবং রোগী ভাগিয়ে আনার জন্য মোটা অংকের বেতনে রিপ্রেজেন্টেটিভ রেখেছেন কয়েকজন। প্রতিষ্ঠানের ঘরের মালিককে মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়া এবং ৬ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়ে মিনি হাসপাতাল খুলেছেন। ডেকোরেশনে খরচ করেছেন ১৩ লক্ষ টাকা। দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। স্বাক্ষাৎকার নিতে গেলে সাংবাদিকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, কাগজে লিখে কিছুই করতে পারবেন না। সিভিল সার্জন অফিসসহ সবখানে লোক আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রণব শর্ম্মাধিকারী যেসব ডিগ্রী ব্যবহার করেছেন, এসব ডিগ্রীর বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এরকম কোনো ডিগ্রীও নেই।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কুমিল্লা সদরে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিনের প্রশিক্ষণে ৫’শ টাকা দিয়ে এরকম ডিগ্রী (সার্টিফিকেট) নাকী অনেকেই নিয়েছেন। স্ত্রী সুমিতা রানীর একাডেমিক কোনো সার্টিফিকেট নেই। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে তিনিও এখন ডাক্তার। তিনিও নামের পরে একই ডিগ্রী লাগিয়েছেন।
কথিত ডাক্তার প্রণব শর্ম্মাধিকারী সব রোগের প্রেসক্রিপশন (এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ) লিখেন। জ্বর, সর্দি, কাশি, বাত ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অর্শ, গেজ, ওরিশ ও ভগন্দর রোগসহ যাবতীয় চিকিৎসা করেন তিনি। কেউ বাড়াবাড়ি করলে দমন করার জন্য কয়েকজন ভাড়াটিয়া লাঠিয়ালও নিয়মিত পোষেন কথিত এই ডাক্তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডাক্তার জানান, আসলে এগুলো প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। যেদেশে ঝাড়, ফুঁক আর তাবিজ-কবজ দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। সেখানে এদেরমত কথিত ডাক্তাররা তো হাসপাতাল খোলার দুঃসাহস দেখাবেই। তারা বলেন, এসব প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে ডাক্তারদেরকে কলঙ্কিত করেছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তফা খালেদ আহ্মদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি এ জেলায়। অনেক কিছু এখনও খোঁজখবর নিতে পারিনি। তিনি বলেন, কোনো বৈধ ডাক্তারও অনুমোদনহীন এরকম হাসপাতাল চালু করার কোনো বৈধতা নেই। হাতুড়ে ডাক্তারের জন্য তো প্রশ্নই ওঠেনা। খোঁজখবর নিয়ে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, এগুলোর বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যেতে হবে। এদের সাথে কম্প্রমাইজ করার কোনো সুযোগ নেই।
0Share