দেশে করোনা ভাইরাসের অজুহাতে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, সেই সাথে বেড়েছে বিকিকিনিও। অসচেতনতা আর আতঙ্কে অনেকেই চাহিদার অতিরিক্ত চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হাট-বাজারগুলোতে ভিড় করছেন।
অপরদিকে এ সুযোগে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে করে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। যদিও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শনের কাজ চলছে। তবুও প্রশাসন সরে গেলেই ব্যবসায়ীরা আগের মতোই দাম হাঁকাচ্ছেন আর ক্রেতাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ পাইকারি দোকানদারদের কাছে জিম্মি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো অধিক দামে বিক্রি করছেন তারা। এতে বেশি বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রশাসনের নিয়মিত বাজার তদারকি ও কয়েকটি দোকানির জরিমানা করেও দ্রব্যমূল্যের দামের উর্দ্ধগতি রোধ করতে পারছেন না প্রশাসন।
গত শুক্রবার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ নারীরা ৫০ কেজি ওজনের ৪/৫ বস্তা চাউল, ১৬ কেজি ওজনের সয়াবিন তৈল, ৫০ কেজি আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে ক্রয় করছেনন। তাদের আশঙ্কা করোনার প্রার্দুভাব ঠেকাতে দেশে লকডাউন হলে চাল পাওয়া যাবে না। তাই তারা চালের বস্তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া পেঁয়াজের বাজারে গিয়েও লক্ষ্য করা গেছে একই চিত্র। যারা আগে এক থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করতেন তারা এখন ৫/১০ কেজি করে পেঁয়াজ ক্রয় করছেন। তাদেরও আশঙ্কা করোনায় ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধি পাবে পেঁয়াজের। আর এ সুযোগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। তবে ওই সময় বাজারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে দেখা যায়।
সোমবার শহরের কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও বাজারে পুরুষের তুলনায় নারীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। ভবিষ্যতের জন্য অতিরিক্ত পণ্য মজুত করতে তাদের আগ্রহ ছিল বেশ। যাতে করোনায় পণ্যের সংকট দেখা দিলেও তাদের কোনো সমস্যা না হয়।
বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি স্বর্ণা-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে। শুধু চাল নয়, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনেছেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা আর এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর এ বর্তমান সময়ে মাছ, মাংস ও শাকসবজির বাজারেও কিছুটা ঊর্ধ্বগতি বলে জানান তারা।
শহরের চাল ব্যবসায়ী মন্নান ডিলার জানান, গত সপ্তাহ থেকে প্রতি কেজি চাল পাঁচ থেকে সাত টাকা বেশি ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কেননা পাইকারি বাজার ২৫ কেজির এক বস্তা চাল ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে কিনে আনতে হয়।
এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন, দ্রব্যমূল্য তদারকি ও পর্যবেক্ষণে মাঠে নেমেছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। প্রতিদিন জেলার হাটবাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করার ফলে অর্থদ- দেওয়ার পর ভ্রাম্যমান আদালত সরে যাওয়ার পর বোল পাল্টায় দোকানিরা।
এদিকে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য মজুত থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করে আসছে। এমতাবস্থায় জেলা পুলিশের পাশাপাশি সব থানা পুলিশ হাট-বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানালেন পুলিশ সুপার ড.এএইচএম কামরুজ্জামান।
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, করোনাভাইরাসের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা যাতে করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এসময় জনগণের সচেতনতা বাড়ানোরও তাগিদ দেন তিনি।
1.3KShare