নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়পুর: পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিদ্যালয়ের মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে কুরবানির পশুর হাট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উপজেলার একাধিক কুরবানির পশুর হাট বসানোর চাহিদা থাকলেও প্রথম শ্রেণির পৌরসভার নিজস্ব কোন হাট নেই। এনিয়ে পৌরসভার নির্লিপ্ততার সুযোগ নেয় একটি চক্র। একটি বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় তা বাতিল করেন এবং সাতটি বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে নিষেধ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। গত কয়েকবছর ধরে পৌরবাসীকে কুরবানির পশু কিনতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
গতবছর শহরের কুরবানির পশুর সংকট থাকায় অনেকে ঈদের দিন কুরবানি দিতে পারেনি। নিরুপায় হয়ে তারা রায়পুরের বাইরে থেকে পশুর ব্যবস্থা করে পরের দিন কুরবানি দেয়। স্থানীয় প্রশাসন শহরের ‘যত্রতত্র কুরবানির পশুর হাট বসানো যাবেনা’ মর্মে ঘোষনা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। ঈদের তিন চার দিন আগে শহরের যত্রতত্র কুরবানির পশুর হাট বসানোর প্রভাব পড়ে শহরে থাকা রায়পুরের সর্ববৃহৎ পশুর হাট রায়পুরের নতুনবাজার। সারাবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ বাজারে গরু-ছাগল নিয়ে আসে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদুল আজহার সময় তারাও হন বিড়ম্বনার শিকার। ট্রাক ভরে নতুন বাজার সহ বড় বাজারগুলোতে যাওয়ার পথে তাদের ট্রাক আটকে লাঠিয়াল দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা হাটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু নিয়ে আসা ব্যপারীরা শহরে প্রবেশ পথেই অবৈধ হাটের লাঠিয়ালদের কবলে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ হাট বসানো হয়। অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। ঈদুল আজহার আর মাত্র ৮ দিন। রাজনীতিতে বিরোধ থাকলেও রায়পুরে কুরবানির পশুর অবৈধ হাট বসাতে তারা থাকেন ঐক্যবদ্ধ।
এবার উপজেলার রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বাসাবাড়ি বাজার, চরবংশি খাসের হাট বাজার, কেরোয়া সুনামগঞ্জ বাজার, মীরগঞ্জ বাজার, জোড়পোল সড়ক, লুধুয়া ভূঁইয়ার হাট, আব্দুর রহমান জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, তোরাব পাটওয়ারী বাড়ীর দরজায়, পরাশগঞ্জ বাজার, বামনী সাইচা আনন্দ বাজার, কাজিরদীঘির পাড় বাজার ও ১০ নং রায়পুর সবুজ সংঘ ক্লাব মাঠ, হায়দরগঞ্জ, মোল্লারহাট বাজার সহ ১৫টি গরুর হাট বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন থেকে ১৩ টি এবং ২টি জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈধ হাটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবছরই হাটে আসা গরু ভর্তি ট্রাক জোর করে অবৈধ হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। এবারো এমন আশংকা করছেন তারা। রায়পুরের নতুন বাজার, হায়দরগঞ্জ, মোল্লারহাট বাজার, রাখালিয়া বাজারই হচ্ছে বৈধ প্রধান পশুর হাট। এহাটে গরু নিয়ে আসেন দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যপারীরা। তবে প্রতিবারই নতুন বাজারগামী গাড়ী থেকে জোর পূর্বক গরু আটকে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও কোন কাজ হয়না বলে জানান হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। নিজস্ব জায়গা না থাকার অজুহাতে শহরের কোথাও অস্থায়ী পশুর হাট উদ্যোগ নেয়নি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। যদিও শহরে একাধিক পশুর হাট বসানোর চাহিদা রয়েছে বলে মনে করে শহরবাসী। তারা মনে করেন পৌরসভা উপজেলা প্রশাসন চাহিদা অনুযায়ী হাট বসালে অবৈধভাবে হাট বসানোর পাঁয়তারা কিছুটা হলেও বন্ধ হবে।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র ইসমাইল হোসেন খোকন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রায়পুরে এবার কুরবানির পশুর হাট ১৫টি করা হয়েছে। কাজিরদিঘির পাড় বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় তা বাতিল করেন এবং সাতটি বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে নিষেধ করেছেন তবে শহরের যত্রতত্র যাতে পশুর হাট না বসে সে ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share