সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর মঙ্গলবার , ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তালিকায় লক্ষ্মীপুরের “গিগজ মুড়ি”

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তালিকায় লক্ষ্মীপুরের “গিগজ মুড়ি”

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তালিকায় লক্ষ্মীপুরের “গিগজ মুড়ি”

সানা উল্লাহ সানুঃ গিগজ ধানের মোটা মুড়ি; লক্ষ্মীপুরসহ বৃহত্তম নোয়খালীর একটি ঐতিহ্যবাহী দেশীয় প্রাচীন খাবার। বাঙ্গালী খাদ্য তালিকায়ও অন্যতম স্থান দখল করে আছে এ মুড়ি। মুড়ি খায়না এ রকম বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তাই প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহ্যের সাথে এখনো লড়াই করে টিকে আছে এ জনপ্রিয় খাবারটি। লক্ষ্মীপুরসহ বৃহত্তম নোয়খালীর গ্রামীণ জনপদে এর চাহিদা এখনও ব্যাপক। তবে রমজান আসলে সে চাহিদা বেড়ে যায় আরো বহুগুন।

গিগজ ধান: ছবি সানা উল্লাহ সানু

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর বা বৃহত্তম নোয়াখালীর চরাঞ্চলে উৎপন্ন বিশেষ জাতের ‘গিগজ’ ধানের মুড়ি স্বাদ বৈশিষ্টের জন্য দেশ বিদেশে বিখ্যাত। দেশীয় পদ্ধতিতে ভাজা এ মুড়ির রং খুব হালকা গোলাপী আভা, দেখতে সুন্দর, খেতে মচমচে এবং সুস্বাদু। সব চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ মুড়ি তৈরিতে পরিমিত লবণ ছাড়া অন্যকোন কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় না।

কমলনগরের কর্ণজিৎ দাস জানান, কয়েকটি ধাপে এসব মুড়ি উৎপাদিত হয়। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী গিগজ ধান দুইদিন ভিজিয়ে তা সিদ্ধ করে আবার রোদে শুকানো হয়। এরপর তৈরি করা হয় চাল। মুড়ির চাল পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর লবণ দিয়ে রাখা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজতে হয়।
তাই ইফতারে লক্ষ্মীপুরসহ বৃহত্তম নোয়াখালী অঞ্চলে অবিচ্ছেদ্য বিশেষ খাবারটির নাম গিগজ মুড়ি। এ অঞ্চলের অনেকের কাছে মুড়ি নেই তো মনে হয় ইফতারী করা হলোই না।


সে জন্য রমজানের বাজার কে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে চলছে দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজার তোড়জোড়। মুড়ি তৈরির সাথে জড়িতরা জানান, সাধারন ধানের চাল দিয়েও মুড়ি ভাজা যায়। তবে গিগজের মুড়িই সবার কাছে জনপ্রিয়।
এ মুড়িকে ঘিরে হুতারি নামের একটি স¤প্রদায় ও গড়ে উঠেছে। এদের বেশীর ভাগই হিন্দু স¤প্রদায় ভূক্ত। আবার যারা মুড়ির কাজ করে তারা অধিকাংশই নারী। নারীরা বাড়িতে মুড়ি ভাজে, পুরুষরা তা বাজারে বাজারে বিক্রি করে। যুগযুগ ধরে পৈত্রিক ব্যবসা হিসাবে তারা একাজ কে বেছে নিয়েছে। নারীরা কয়েকটি ধাপ শেষে উৎপাদিত করে গিগজ মুড়ি।
লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলার মধ্যে কমলনগরের হিন্দু অধ্যুষিত করুণানগর এলাকা মুড়ি তৈরির অনন্যা স্থান হিসাবে সারা দেশে পরিচিত। অর্ধ শতাব্দীকালেরও অধিক সময় ধরে মুড়ি ভেজে জীবনধারণ করে আসছে উপজেলার হাজিরহাট ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ গ্রামে প্রায় ৯০ পরিবার, উত্তর গ্রামে ২০ পরিবার এবং মাইজগ্রামে প্রায় ৪০ পরিবার।


করুণানগরের বেচারাম দাস, কৃঞ্চচন্দ্র দাস, প্রাণ গোবিন্দ দাস, নয়ন চন্দ্র দাস, অর্জুণচন্দ্র দাস, পার্থ চন্দ্র দাস, প্রিয়নাথ প্রাণ নাথের জন্ম মুড়ি তৈরির পরিবারে। মুড়ি তৈরি করেই শেষ নয় এ এলাকায় গড়ে ওঠেছে গিগজ মুড়ির আড়ৎ। করুণানগরের ধঞ্চয় দাস এবং শ্যামল দাস এ এলাকার সব চেয়ে বড় গিগজ মুড়ির আড়তের মালিক।
করুণানগর ছাড়াও চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের মধ্যচর লরেঞ্চ গ্রামের করইতোলা বাজার সংলগ্ন মুসলিমপাড়ায় আছে আরো গ্রায় ২০ পরিবার । যাদের মধ্যে কর্ণজিৎ দাস, স্বর্ণজিৎ দাস, আবুল কাশেম, আমছর আলী অন্যতম।
রামগতি উপজেলায় আছে আরো শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর শহরের সমসেরবাদ এলাকায় মুড়ি উৎপাদনে ৭০ টি পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে।
মুড়ি তৈরির শ্রমিক বা সুতারি, ব্যবসায়ী এবং আড়ৎদারদের সাথে কথা বলে জানান যায়, পুরো জেলায় মুড়ি উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত এক একটি পরিবার প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি মুড়ি উৎপাদন করে। বাজার চাহিদার পাশাপাশি এখন দামও বেশ ভালো। এখন হাতে তৈরি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রতি কেজি গিগজ মুড়ি স্থানীয় ভাবে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।
মুড়ি উৎপাদনকারী শ্রমিকরা জানায়, প্রতি বছর চেয়ে রমজান আসলে মুড়ি উৎপাদনের চাপ বেড়ে যায়। নিজেদের পাশপাশি বাড়ায় শ্রমিক দিয়েও মুড়ি উৎপাদন করে তারা। উৎপাদিত এসব মুড়ি লক্ষ্মীপুরের পুরো জেলার চাহিদা মিটিয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চট্টগ্রাম, ঢাকায় রপ্তানী করা হয়। বর্তমানে দেশের দুটি বহুজাতিক কোম্পানী লক্ষ্মীপুরের গিগজ মুড়ি কিনে প্যাকেটজাত করে দেশ ও বিদেশে রপ্তানী করছে বলে জানান, করুনানগরের এক মুড়ির আড়ৎদার।
বর্তমানে বাজার দখল করতে নি¤œমানের চালের মেশিনে ভাজা হয় মুড়ি। সেগুলো ভাজার সময় দেয়া হয় ইউরিয়া হাইপো ইত্যাদি যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দাম সস্তা দেখে বাজারে এগুলো খুব বিক্রিও হয়। দেখতে ও ধবধবে সাদা। বর্তমানে ক্যামিকেল মিশ্রিত মেশিনে তৈরি ডিজিটাল মুড়ি থাকলেও “গিগজ মুড়ি”র মুড়ির কাছে তা কিছুই না বলে জানান এখানকার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা।
করুণানগরের বেচারাম দাস জানান, তাদের উৎপাদিত মুড়িতে লবণ ছাড়া অন্য কোন কেমিক্যাল মিশ্রিত হয় না বলে জানান তিনি। বর্তমানে ডিজিটাল মুড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না তারা। তিনি আরো জানান তাদের গ্রাহক যারা গিগজ মুড়ি খেয়ে আসছে তারা কখনো অন্য মুড়ি খেয়ে তৃপ্তি পাবে না। সে রকম ক্রেতারাই তাদের এখন পূজিঁ।


লক্ষ্মীপুরের পাইকারি মুড়ি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুড়িতে হাইড্রোজ মেশানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু জনসাধারণ পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছে না। তারাও স্বীকার করেন গিগজ মুড়ি ক্যামিকেল থেকে নিরাপদ।
অন্যদিকে চিকিৎসকরা জানান, যে কোনো রাসায়নিক পদার্থ কোনভাবেই হজম হয় না। সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের দেহে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনি রোগের সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
তাই বাঙ্গালীর অতি জনপ্রিয় এ খাদ্যের মান নিশ্চিত করে এবং মুড়ি তৈরির গিগজ ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাঙ্গালীর স্বার্থেই টিকিয়ে রাখতে হবে গিগজ মুড়ি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য তা রপ্তানীর ও ব্যবস্থা করতে হবে। সেটাই প্রত্যাশা এ অঞ্চলের মানুষের।

ধর্ম ও জীবন আরও সংবাদ

রামগতিতে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করলেন ডিসি ও এসপি

মসজিদের ভেতরে তার কাটার বেড়া দেয়ার অভিযোগ লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে

রামগতিতে ৫দিন ব্যাপি ৯৭তম মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও মেলা শুরু

রামগতিতে নবান্ন উৎসব পালিত

রামগতিতে ৫দিন ব্যাপি ৯৬তম মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান শুরু

রামগতিতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালিত

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com