এমআর সুমন, রায়পুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে উপজেলার হাটবাজারগুলো ইলিশে ভরপুর হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার মাছবাজারগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা দেখা যায়। গত বছর বর্ষায় ভরা মৌসুমেও এতো ইলিশ জালে ওঠেনি। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। তবে ইলিশে বাজার ভরপুর হলেও দাম চড়া।
বাজারে দুই কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ১৮০০ টাকা। আর এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। তবে জাটকা সংরক্ষণে প্রশাসনিক তৎপরতার কারণেই ঝাঁকে ঝাঁকে বড় ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চরবংশী ইউনিয়নের আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমের সবচেয়ে বেশি ইলিশ এখন এই ঘাটে আসছে। ঝুড়িভর্তি ইলিশ ও চোখেমুখে তৃপ্তি নিয়ে তীরে নামছেন জেলেরা। মাছ ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ইলিশ গোছাতে। কেউ ইলিশের স্তূপে দিচ্ছেন বরফ, কেউ কেউ ঝুড়িতে গুনে গুনে ভরছেন ইলিশ। জেলে, ব্যবসায়ীদের হই-হুল্লোড়ে চারদিক উৎসবমুখর। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার মণ ইলিশের সরবরাহ হচ্ছে এই ঘাটে।
শুক্রবার সকালে রায়পুর বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঘাট থেকে ঝুড়ি ভর্তি প্রচুর ইলিশ নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বসে বিক্রি করছে জেলেরা। বাজারগুলোতে বেচাকেনাও ছিল জমজমাট। এরমধ্যে বেশিরভাগই বড় ইলিশ। এ সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে পরিবারগুলোতে উৎসব বিরাজ করছে।
হাজাীমারা মাছ ঘাটের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, আগের চেয়ে ইলিশের দাম কিছুটা সাধ্যের মধ্যে এসেছে। তবে মেঘনার ইলিশের দাম এখনও কমেনি। ঘাটে এখন যেসব মাছ আসছে তার বেশিরভাগই সাগরের। রায়পুরের মেঘনা নদীর মাছ কম দেখা যাচ্ছে। তাই হয়তো লোকাল ইলিশের দাম এখনও কমেনি।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, রায়পুর উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫টি মাছ বিক্রির ঘাট রয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার জেলে রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার জেলের কার্ড আছে। এবার অন্য মাছের চেয়ে ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে নদীতে। গত পাঁচ বছরেও এতো ইলিশ ধরা পড়তে দেখেননি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মাষ্টার ঘাটের মালিক আবুল হোসেন বলেন, আমাদের ঘাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। ইলিশ বেশি হওয়ায় এখন দামও কম। এখান থেকে অনেক ব্যবসায়ী ইলিশ কিনে নিয়ে জেলারসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এভাবে আরও কয়েক দিন ইলিশ এলে মাছ ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতা ও জেলেদের হতাশা কেটে যাবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, জাটকা সংরক্ষণে প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবর ইলিশ পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। এতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। জাটকা নিধন বন্ধ ও জেলেরা সচেতন হলে সারাবছরই ইলিশ পাওয়া যাবে। সামনে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
498Share