সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শনিবার , ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাংবাদিক পলাশের মৃত্যু মারধরে না সড়ক দুর্ঘটনায়?

সাংবাদিক পলাশের মৃত্যু মারধরে না সড়ক দুর্ঘটনায়?

0
Share

সাংবাদিক পলাশের মৃত্যু মারধরে না সড়ক দুর্ঘটনায়?

বাংলা ট্রিবিউন থেকে: ঢামেকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা রোড ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট ঢামেকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা রোড ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ (২৮)। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে চাচাতো ভাইদের মারধরে আহত হওয়ার পর তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার স্বজনদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নথিতে লেখা হয় ‘সড়ক দুর্ঘটনার রোগী’। এ নিয়েই জটিলতা শুরু। বিষয়টির সমাধানে দুদিন ধরে ঘুরছেন সাংবাদিক পলাশের স্বজনরা। এখন মারধরে নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে–ডেথ সার্টিফিকেটে কী লেখা হবে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে আগামী শনিবার সকালে। ঢামেকে নিহত সাংবাদিক পলাশের বন্ধু আকাশ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসব তথ্য জানান।

স্থানীয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট স্থানীয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট হাসপাতাল থেকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর ময়নাতদন্ত শেষে পলাশের লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। আকাশ জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাইদের মারধরে মাথায় আঘাত পান পলাশ। সেই আঘাতের কারণেই তাকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আকাশ আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় সাংবাদিক পলাশের। পলাশের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার নাছিমনগর ফকিরবাড়ি গ্রামে। তার বাবা মনিরুল ইসলাম, মা মাকসুদা খাতুন। তিনি রূপবাণী পত্রিকার প্রতিনিধি এবং চ্যানেল টুয়েন্টিফোর-এর জেলা প্রতিনিধির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিএ পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

আকাশ জানান, পলাশের মৃত্যুর কাগজপত্র নিতে গিয়ে স্বজনরা দেখতে পান তার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে— সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু। এটি নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার কথা বলেছেন। এ টেবিল থেকে সে টেবিলে ছুটেছেন। তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ থানা পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে। এরপর পলাশের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। শনিবার সকালে সব কাগজপত্র পেলে তাকে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘সকালে ঢামেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তারা ডেথ সার্টিফিকেট পরিবর্তন করে দিতে পারবেন না। তারা লক্ষ্মীপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে লিখিত আনতে বলেছেন।

পরে বাড়ির লোকজন গিয়ে সেখান থেকে একটি লিখিত কপি ইমেইল করে পাঠায়। কিন্তু থানা-পুলিশের স্বাক্ষর বা নম্বর না থাকায় সেটি গৃহীত হয়নি। পরে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ শাহবাগ থানাকে ঢামেকে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলেছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর ঢামেক কর্তৃপক্ষ পলাশের ডেথ সার্টিফিকেট দেবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’ শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা তো তদন্ত করি না। আমরা পোস্টমর্টেম করে দিই। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়গুলো আইডেনটিফাই করি।

ঢাকা মেডিক্যালে আঘাতজনিত ভর্তি রোগীকে সড়ক দুর্ঘটনার ডেথ সার্টিফিকেট দেয়, এমনটা আগে কখনও শুনিনি। এরকম সাধারণত হয় না। এটা রেয়ার কেস।’ তিনি বলেন, ‘তবে রোগীকে যে বা যারা ভর্তি করিয়েছিলেন, তারা কী বলেছিলেন, আর হাসপাতালের লোকেরা আসলে কী লিখেছে, কেন লিখেছে সেটা তারাই বলতে পারবে। এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না।’ ওসি বলেন, ‘এটা যেহেতু লক্ষ্মীপুরের ঘটনা, তাই সেখানকার পুলিশ এটা তদন্ত করবে।’ পলাশের আত্মীয় কোহিনূর বেগম বলেন, ‘পলাশকে ঢাকায় আনা হচ্ছে শুনে আমরা আগে থেকেই মেডিক্যালের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাকে ট্রলিতে উঠানোর সময় হাসপাতালের স্টাফরা তার নাম জিজ্ঞাসা করেন। আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এমনকি ওর বোনকেও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। তখনই হয়তো ভুলটা হয়েছে। যারা খাতায় এন্ট্রি করেছে, তাদের এই ভুল হয়েছে।’ পলাশের বোন নাসিমা বেগম বলেন, ‘ওকে হাসপাতালে আনার সময় এখানে তার বন্ধু ব্যাংকার জুয়েল উপস্থিত ছিল। সে-ই টিকিট কেটেছিল। সে বলেছিল অ্যাকসিডেন্ট। আর হাসপাতালের লোকেরা লিখে নিয়েছে রোড অ্যাকসিডেন্ট।’ পলাশের ভাতিজা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভর্তির সময় আমি ছিলাম। বলেছি অ্যাকসিডেন্ট। ওরা লিখেছে রোড অ্যাকসিডেন্ট।’ পলাশের ভাতিজা আরজু বলেন, ‘মাত্র একটা শব্দ আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে দিলো।’ পলাশের বন্ধু আল আমীন বলেন, ‘এখন আম​রা তাকে নিয়ে যেতে পারছি না। তার লাশটা হাসপাতালে পড়ে আছে। বাড়িতে তার অসুস্থ বাবা ছেলের লাশের জন্য অপেক্ষায় আছেন।’ পলাশের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকায় অবস্থানকারী তার এলাকার এবং স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনরা আসতে শুরু করেন। জাহিদ, সাইফুল ইসলাম স্বপন, মো. আলামীন, আকাশ—তারা সবাই পলাশের বন্ধু-ছোট ভাই। প্রত্যেকের একই কথা, পলাশ খুব ভালো ছিলেন। এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত রক্তদাতাও ছিলেন। কিছুদিন আগে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় পলাশের দল। মো. আলামীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘পলাশ ভাই নিজেই মানুষকে রক্ত দিয়ে বেড়াতেন। সেই মানুষটাকে রক্ত দেওয়ার আগেই তার জীবন শেষ হয়ে গেছে। ভাবতেই পারছি না।’ ঢাকা মেডিক্যালের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখন কিছুই করার নেই।

আপনারা লক্ষ্মীপুর থানাকে বলুন, তারা লিখিত দিলে আমরা সেটি দেখে সড়ক দুর্ঘটনার বদলে ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট লিখে দিতে পারবো।’ মর্গের কর্মী জহির বলেন, ‘এখানে শুধু আমরা ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিতে পারি। আর কিছু করার নাই। তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তখন লেখা হয়েছে আরটিএ (রোড ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট)। তাই আমরা ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট লিখতে পারবো না। এটা লেখার কোনও সুযোগ নেই।’ পলাশের বন্ধু আল আমীন বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে বিরোধ অনেকদিন ধরেই ছিল। পলাশ ভাই কখনোই এসবের মধ্যে যেতেন না।’ পলাশের বোন নাসিমা বেগম বলেন, ‘প্রথমে তাকে লক্ষ্মীপুরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সিটিস্ক্যান করার পর তাকে চিকিৎসক ঢাকায় আনতে বলেছেন।’

স্থানীয় ভাবে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে পলাশদের বাগান থেকে তার দুই চাচাতো ভাই গাছ কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা হলেন আবু ইউছুফ (৫০) ও আবু ছায়েদ (৪৫)। এ সময় তাদের বাধা দেওয়ায় তারা পলাশের বাবার দিকে ইট নিক্ষেপ করে। এতে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। পলাশ তার বাবাকে উদ্ধার করতে গেলে ওই দুই ভাই রড দিয়ে তার মাথায় ও বুকে আঘাত করে। মাথায় আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে পলাশ জ্ঞান হারান। এ সময় ভাইকে বাঁচাতে গেলে পলাশের বোন নাছিমা আক্তারকেও (৩৫) তারা মারধর করে ও গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে পলাশকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে নোয়াখালী হাসপাতালে পাঠান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযুক্ত আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ নাছিমনগর গ্রামের হাজী আক্তারুজ্জামানের ছেলে। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় আবু ইউছুফের স্ত্রী ফয়েজুন নেছাকে আটক করেছে পুলিশ। লক্ষ্মীপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পলাশকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com