নিজস্ব প্রতিনিধি: মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার মতো বড় নদীতেও নিয়ম লঙ্ঘন করে স্পিডবোট ও ছোট ট্রলার চলাচল করছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ১৫ মার্চ থেকে খারাপ আবহাওয়ার মৌসুম শুরু হয়েছে। অথচ লক্ষ্মীপুরের বড় নদী মেঘনাতে এসব নৌযানের চলাচল বন্ধে এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী বড় নদীতে ২০ মিটারের নিচের লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ। ট্রলার চলাচল আরও বিপজ্জনক। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাটে এবং নদীতে প্রচুরসংখ্যক ছোট লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোট দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ হাজার লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করছে, যেগুলো দৈর্ঘ্যে ২০ মিটারের নিচে। এগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক চলাচল করছে লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকার নদীতে। ১৬ অশ্বশক্তির নিচের নৌযানের নিবন্ধন লাগে না বলে এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, একএকটি স্পীডবোট ১২-১৩ জন যাত্রী নিয়ে ভোলা , বরিশাল যাচ্ছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী একটি স্পিডবোট আটজনের বেশি যাত্রী ওঠাতে পারে না। সেখানে বিআইডব্লিউটিএ বা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকার অভিযোগ রয়েছে। একটি স্পিডবোটে এই প্রতিবেদকসহ ১০ জন যাত্রী ওঠেন। ডেকে আরও একজন যাত্রী ওঠানো হলো। ছিলেন একজন হেলপারও। রবিউল নামের এক যাত্রী আপত্তি জানাতেই স্পিডবোটটির চালক বলেন, কোনো ভয় নেই।
একজন যাত্রী আস্তে চালাতে বললে চালক বলেন, ‘স্পিডবোট স্পিডেই চলার নিয়ম।’ নিয়মিত যাত্রী জাহেদুল ফেরদৌস জানান, মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
লক্ষ্মীপুরের সাথে ভোলার ইলিশা ঘাট এবং বরিশালের মধ্যে ছোট-বড় অনেক লঞ্চ ওস্পীডবোট চলাচল করে । লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট থেকে যাচ্ছে ট্রলার ও স্পিডবোট আছে ইঞ্জিনচালিত অনেকগুলো ছইনৌকা (ছোট ট্রলার) আর স্পিডবোট। ট্রলারে ভালোভাবে বসলে ৩০ জনের বেশি যাত্রী বসা সম্ভব নয়। কিন্তু ওঠানো হয় শতাধিক।
একটি ট্রলারের চালক মফিজুর রহমানের কাছে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন, আরও ৫০ যাত্রী উঠলেও সমস্যা হবে না। ওই সময় দুটি স্পিডবোট ছাড়ল। নির্ধারিত সংখ্যার বেশি যাত্রী নেওয়া হয়েছে। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি বোটই ফিরে আসে। বেশি ওজন হওয়ায় মাঝনদীতে থেমে গিয়েছিল। ফিরে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে দুই চালকই বলেন, সব যাত্রী মোটা। চিকন যাত্রী নিতে হবে। এরপর দুজন করে যাত্রী কমানো হলো।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী হাট এবং ভোলার ইলিশা ঘাটের ইজারা পেয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন সদস্য ও লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ সদস্য মো. আলমগীর। তিনি কয়েকটি নৌযানের মালিকও। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বড় নদীতে ছোট নৌযান বেপরোয়াভাবে চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ মার্চের পর স্পিডবোট চলবে না। তবে ট্রলার চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. নাসিম উদ্দিন জানান, খারাপ আবহাওয়ার মৌসুমে ছোট নৌযান চলাচল করতে দেওয়া হবে না। লক্ষ্মীপুর ও পুরো বরিশাল বিভাগে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মাত্র একজন পরিদর্শক রয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএর একজনও নেই। ফলে নিয়ম না মেনে বেপরোয়াভাবে চলা এসব নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো জনবলও নেই।
আসছে: সীট্রাকে অনুমোদনের বেশি যাত্রীপারাপার
0Share