সারোয়ার মিরন:: রামগতি উপজেলার নাগরিক হিসেবে আমার চেয়ে বয়সে বড় অনেকের হয়তো স্পষ্ট মনে আছে সেবাগ্রাম আদর্শ হাসপাতালটির কথা। নামটি আমার স্পষ্ট মনে পড়ছেনা। তবে এ ধরনেরই হবে নামটা। নাম যাই হোক এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রামগতির সিংহপুরুষ
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব এবং সাবেক সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ আবদুর রব চৌধুরী। সুনিবিড় ছায়াঘেরা মনোরম একটা প্রতিষ্ঠান ছিলো এটা। এখনো চোখে ভাসছে বড় বড় কড়ই গাছ, উঁচু পাড়ের পুকুর, এল সাইজের লম্বা টিনশেড ঘর। একেবারে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির জন্য যথোপযুক্ত স্থাপনা।
বর্তমান-অবর্তমান সময় মিলিয়ে রামগতির ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহদায়তন দাতব্য চিকিৎসালয় এটিই। সময়ের পরিক্রমায় রামগতির মানচিত্র প্রায় অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। মেঘনার করাল গ্রাসে প্রায় দেড় যুগ আগেই জনকল্যানকর এ দাতব্য প্রতিষ্টানটির বিলুপ্তি ঘটেছে। হয়তো সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারায় জনাব চৌধুরী দ্বিতীয়বার এ প্রতিষ্ঠানটির পুন:প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তবে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা না করতে পারলেও তৈরি করে গিয়েছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রামগতি উপজেলা চত্তরের পূর্ব পার্শে এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রব চৌধুরী গণ পাঠাগার। আরো একটি গণ পাঠাগার পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে মেঘনার ভাংগনপ্রায় সেবাগ্রাম ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে।
বলছিলাম রব চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামগতির একমাত্র দাতব্য প্রতিষ্ঠান তথা হাসপাতালটির কথা। আমার বয়স যখন সাত-আটের কোটা পার হয়নি তখনকার সময়ে একাধিকবার এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা আমি গ্রহন করেছি। দল বেঁধে মায়ের সাথে অনেকেই মিলে যেতাম পায়ে হেঁটে। কোন এক শারিরীক সমস্যাজনিত কারনে জনাব চৌধুরীর লিখিত একটা টোকেনে আমার চিকিৎসা সেবা হয়েছিলো খুব আন্তরিক ভাবে। আজকের এ বহমান সময়ে সেসব কথা ও প্রতিষ্ঠানের কথা ভীষন মনে পড়ছে। রামগতির মাটিতে ভীষণ অভাববোধ করছি এমন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের।
উল্লেখ করার মতো কোন ধরনের দাতব্য প্রতিষ্ঠান রামগতি উপজেলায় নেই। রামগতি অনেক গণমানুষ ও নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অগ্রসরমান ক্রমধারা বহু বছর ধরে বাড়ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়েছে রামগতির মানুষ। জনাব চৌধুরীর পরে রামগতিবাসী তিন জন সংসদ সদস্য এবং বহু নেতার আগমন দেখেছে। কিন্ত কোন নেতাই এমন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিতে পারেনি। যার জন্য আমরা গর্ব করে করতে পারি।
অনেকেই হয়তো দু একটা এতিমখানা বা ছোটখাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে চালাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে জনাব মো: আবদুল্যাহ (আল মামুন) উল্লেখযোগ্য। যতদুর জানি তিনি একটি এতিমখানা ও একটি জুনিয়র স্কুল পরিচালনা করছেন। সম্প্রতি রামগতির শেখের কেল্লা নামক স্থানে একটি বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মো: সালা উদ্দিন দোলন। কিন্তু আর কেউ নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি দাতব্য হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি রামগতিতে। অনেকেই হয়তো বলতে পারেন সাবেক সাংসদ জনাব আশরাফ উদ্দিন নিজান রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন। তা মানছি। কিন্তু রামগতির আড়াই লক্ষ নাগরিকের জন্য মাত্র ত্রিশ শয্যার এ হাসপাতালটি ঠিক কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারছে। জনবল সংকটের কথা না হয় বাদই দিলাম। স্থাপনের পর থেকে দু এক মাস ব্যতিক্রম ব্যতিত এম্বুলেন্স সেবা দেখেনি এ হাসপাতাল। অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা তো বাদই দিলাম।
আদর্শ সমাজ বিনির্মানে দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে হাসপাতাল, পাঠাগার, সেবাশ্রম ইত্যাদি তো ভীষন জরুরী। একথা স্বীকার করছি যে বহু গুনীজন আছেন যারা অদৃশ্য কিংবা দৃশ্যমান থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাজ সেবা করছেন, করে যাচ্ছেন তাঁদের সাধুবাদ না জানালে অকৃতজ্ঞতা পরিলক্ষিত হবে। আবার একথা বলতেও কার্পণ্য নেই যে, প্রয়োজনের তুলনায় সে সব সমাজসেবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেকেই বিচ্ছিন্ন ভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে যাচ্ছেন সাধুবাদ তাঁদের জন্যও। কিন্তু বৃহদায়তন আকারে সমাজসেবা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ আজ সময়ের দাবি। দরদী সমাজ গঠনে সেবাব্রতের লক্ষ্যে দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য আর্থিক ভাবে সক্ষম সকল ব্যক্তিবর্গের প্রতি বিশেষ অনুরোধ থাকলো।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী
0Share