নিজস্ব প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর : আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরেও টান টান উত্তেজনা চলছে। দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হবে নাকি তিনি খালাস পাবেন, আর সাজা হলে কেমন হবে পরিস্থিতি তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পর আবার মুখোমুখি দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ৮ ফেব্রুয়ারি মাঠ দখলে মরিয়া উভয় দল। পাল্টাপাল্টি প্রস্তুতি চলছে দুই পক্ষেই। রায় নেতিবাচক হলে প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আর রাজপথে কোনো ধরনের সহিংসতা করতে না দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ওইদিন গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলারও ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরে কোন রকম কর্মসূচীর খবর পাওয়া যায়নি।
আবার যে কোন অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই আলোকে লক্ষ্মীপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোববার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিএনপি, যুবদল ও জামায়াতের ৩১ নেতাকর্মীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
সোমবার সকালে রামগতিতে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিনসহ বিএনপি-জামায়াতের ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী রামগতি থানার এসআই মাঈন উদ্দিন জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বালুরচর এলাকায় জামায়াত নেতা আবুল ফারাহর বাড়িতে গোপন বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কনস্টেবল মজিবর রহমান ও কাজী ইকবাল হোসেন আহত হন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে তিনজন গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়কে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকামুখী বিভিন্ন গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর থেকে চলাচলকারি ঢাকাগামি কয়েকটি বাস চালক। চালকরা জানান, ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরে আসার সময় যাত্রী হচ্ছে তবে, তবে গত দুদিনে ঢাকা যাওয়ার যাত্রী কমে গেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধারণা, দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখতেই সরকার এ পথে হাঁটছে বলে তারা মনে করে। সে কারণে রায় নেতিবাচক হলেই আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই গুলশান বিএনপি নেত্রীর বাড়ি থেকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারের বিশেষ আদালত পর্যন্ত রাজপথে থাকবে দলটির নেতা-কর্মীরা। এ জন্য দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোকেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। গুলশান থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত খালেদা জিয়া যে পথ দিয়ে আদালতে যাবেন সে পথে মানববন্ধনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা ঢাকার শক্তি জানান দেবেন। তবে কোনো ধরনের উসকানি দেবে না তারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হবে বলে মনে করেন তারা। সে কারণে ওইদিন রাজপথে বিএনপি ব্যাপক সহিংসতা করতে পারে বলে তাদের কাছে খবর আছে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দিতে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রায়ের দিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি না রাখলেও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের রাজপথে থাকার ঘোষণার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।
সাধারণ জনগণের ভাবনা হচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় হচ্ছে বৃহস্পতিবার। সম্প্রতি আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার বহর থেকে পুলিশের উপর হামলা এবং রায় নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
0Share