নিজস্ব প্রতিবেদক,লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর: বর্তমান সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষে নির্বাচন হলে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে তিন মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ঢের সময় বাকি। তবে এত দূরের ভোটকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে দেশ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মাঠে সরব হয়ে উঠছেন। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তাঁরা। সে সুবাদে তৃণমূলে দলগুলোর রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেও আগামী নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। তবে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা থাকলেও প্রচার বা জনসংযোগের চিত্র এখনো সেভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে আগাম প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি কৌশলে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি নেতারা সেভাবে সরব হতে পারছেন না।
এসবের প্রতি নজর রেখে লক্ষ্মীপুরে ভোটের রাজনীতি নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ ২য় পর্ব লক্ষ্মীপুর-২, রায়পুর আসন। আজকের পর্বে আওয়ামীলীগের রাজনীতি
লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসনে আওয়ামীলীগের আগের অবস্থান ছিলো তৃতীয়।তবে সময় যত যাচ্ছে ভোটের ব্যবধান অনেক কমে এসেছে, বেড়েছে ভোট।আগমি নির্বাচনে এই আসনে ভিআইপি প্রার্থীদের ভীড়ে নেতাকর্মীরা দিশেহারা। একদিকে আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এম পি হারুনুর রশীদ।
অন্যদিকে কুয়েত আওয়ামীলীগের আহবায়ক, তরুন রাজনীতিবিদ ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ি শহীদ ইসলাম পাপুল।জনাব পাপুল যিনি ইতোমধ্যে দলীয় কর্মীদের মাঝে মটর সাইকেল বিতরন এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সাংগটনিক গতি আনতে প্রতি মাসে নগদ অর্থ প্রদান করছেন।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক প্রার্থী ডাক্তার এহসানুল কবীর জগলুল। যিনি তার প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন রায়পুরের শত শত তরুণকে। জনাব জগলুল সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়ল ড্রাগসের এমডি। এর আগে গত সংসদ নির্বাচনে জনাব জগলুল সাহেবকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিলেও,পরবর্তীতে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির জনাব এম এ নোমান মনোনয়ন পান এবং এম পি নির্বাচিত হোন। যে কারনে রায়পুরবাসির ভাগ্য বিনষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় জনগন। এই তিন হেভিয়ট প্রার্থীর দাপটে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে।
তবে সব কিছুর উর্ধ্বে রায়পুর স্থানীয় আওয়ামীলীগ স্পষ্টতই এখন পাপুল আর হারুন এই দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে।মাঠ পর্যায়ে সে বিভক্তি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।গত কিছু দিন আগে জনাব হারুনুর রশীদের ডাকা সভায় উপস্থিত হননি রায়পুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইসমাইল হোসেন খোকন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আলতাফ হোসেন মাষ্টার। এই বিভক্তি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিরা। কিছু নেতা কর্মী মনে করছেন, সাবেক এম পি হারুন সাহেবের ব্যক্তি ইমেজ ভালো থাকলেও ভোটের মাঠে জনাব পাপুল সাহেবকেই বেশী প্রয়োজন।
তাদের মতে ‘ বিএনপি জামাত জোটের মোকাবেলায় আমাদের এমন প্রার্থী প্রয়োজন যিনি দল এবং নেতাকর্মিদের জন্য প্রয়োজনে উন্মুক্ত হাতে টাকা খরচ করতে পারবেন। সেটা জনাব পাপুল ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব না।পাপুলের অনকে অনুসারি মনে করেন, বিএনপি এবং জামাত জোটের সাথেআওয়ামীলীগের যে ভোটের ব্যবধান, সেই ব্যবধান কমিয়ে দলকে জেতানোর ক্ষমতা আছে শুধু জনাব শহীদ ইসলাম পাপুলের। আবার অন্য পক্ষের বক্তব্য, দল যদি এই নব্য নেতাকে মনোয়ন দেন তবে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমুল্যায়ন করা হবে। তাদের বিশ্বাস জনাব হারুনুর রশীদ কে মনোনয়ন দিলেই রায়পুর আসন আওয়ামীলীগের ঘরে যাবে।
রায়পুরের মাঠ পর্যায়ে হারুন ও পাপুল নিয়ে যে মাঠ গরম হয়েছে সে আসরে জনাব এহসানুল কবীর জগলুল টিকে থাকতে পারেন কীনা, এই নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। দলের মনোনয়ন নিয়ে সক্রিয় হচ্ছেন জনাব হারুনুর রশীদ, তিনি কোন ভাবেই তার মুল প্রতিদ্বন্দি জনাব শহীদ ইসলাম পাপুলকে স্পেস দিতে রাজি নন। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়ভাবে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জনাব শহীদ ইসলাম পাপুল। স্থানীয় ভোটাররা আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের এই মনোনয়ন দৌড়ের খেলাকে ভালোভাবেই উপভোগ করছেন। মনোনয়ন দৌড়ে কে হাসবেন শেষ হাসি, তাই এখন দেখার বিষয়।
আগামি পর্বে আসছে একঘরে জামাত নিয়ে কি সমীকরণ ?
আরো পড়ুন:
0Share