আলী হোসেন, নোয়াখালী থেকে ফিরে : নোয়াখালীর মাইজদীতে ডাকাতি ও জোড়া খুন মামলায় ১২ আসামিকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। এ মামলায় ২৩ আসামির মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ অপর ১১ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ মার্চ) বিকেলে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক এএনএন মোরশেদ খান এ রায় প্রদান করেন। ২৯২ পৃষ্ঠার রায়ের আদেশের কপি দুপুর ১২টায় পড়া শুরু করেন বিজ্ঞ বিচারক। পুর্ণাঙ্গ রায় পড়া শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র কামরুল হাসান ওরফে কামরুল ডাকাত ওরফে সোহাগ, তার ভাই কামাল হোসেন ওরফে আন্দু কামাল, জয়নাল আবেদীন চেয়ারম্যানের পুত্র মোফাজ্জল হোসেন প্রকাশ জাবেদ, দেওপাড়া গ্রামের আব্দুল মন্নানের পুত্র কামাল হোসেন প্রকাশ এলজি কামাল, আবু তাহেরের পুত্র মোঃ রাসেদ ড্রাইভার, সলিম উল্লাহ পাটোয়ারীর পুত্র জাফর হোসেন মুন্না, দেওপাড়া গ্রামের শামছুউদ্দিন ভুট্টু, ভবভদ্রী গ্রামের মৃত ফকির আব্দুল মন্নানের পুত্র আলী আকবর সুজন, হাফেজ নুরুল্যাহর পুত্র সাহাবুদ্দিন, ভবভদ্রী গ্রামের গোলাম মোস্তফার পুত্র নাছির উদ্দিন মঞ্জু, পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত সুজা মিয়ার পুত্র আবু ইউছুফ সুমন, জয়নাল আবেদীন চেয়ারম্যানের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল।
এছাড়া এ মামলার অপর আসামি আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মীর জুমলা মিঠু ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চুসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার পর জজ আদালতের পিপি এটিএম মহিব উল্লাহ ১৩ জনের মৃত্যুদন্ডের কথা জানালেও রায়ের কপি পাওয়ার পর ১২ জনের কথা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এই মামলার অন্যতম আসামি সোলায়মান উদ্দিন জিসান র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালীর মাইজদী শহরের মোবাইল ফেয়ার নামীয় দোকানের মালিক দায়রা ১৬৯/০৯ মামলার বাদি আবুবকর ছিদ্দিকের ১ম পুত্র ফিরোজ কবির মীরন (৩৫), ২য় পুত্র সামছুল কবির রুবেল (২৮) ও দোকানের ম্যানেজার সুমন পাল (২৫) বেচাকেনা শেষে দোকান বন্ধ করে একই রিক্সাযোগে দোকান সংলগ্ন বাসায় রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে উডল্যান্ড হাসপাতালের কাছে পৌঁছলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদেরকে প্রতিরোধ করে।
এ সময় ডাকতরা মীরন, রুবেল ও সুমন পালকে টাকা ও মালামালসহ অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক মারধর করে মাইক্রোবাসে তুলে উত্তর দিকে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসের ভিতরই ডাকতরা ৩ জনকেই চুরিকাঘাত করে রাস্তার পার্শ্বে ফেলে দেয়। ব্যবসায়ী মীরন ও ম্যানেজার সুমন পাল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর জখমী রুবেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ্য হয়। ডাকাতিকালে ডাকাত দল নগদ টাকা, মোবাইল সেট, সিম কার্ড, প্রি-পেইড কার্ডসহ আনুমানিক দশ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
ঘটনার পরদিন নিহত মীরনের বাবা আবুবকর ছিদ্দিক বাবুল মিয়া বাদি হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে সুধারাম মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদি নিহত ফিরোজ কবির মীরনের পিতা আবু বকর ছিদ্দিক এ রায়ে সন্তেুাষ্টি প্রকাশ করেছেন।
0Share