সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরের চর রমনীমোহন: দুর্যোগ-তাড়িত মানুষের ঠাঁই 

লক্ষ্মীপুরের চর রমনীমোহন: দুর্যোগ-তাড়িত মানুষের ঠাঁই 

0
Share

লক্ষ্মীপুরের চর রমনীমোহন: দুর্যোগ-তাড়িত মানুষের ঠাঁই 

রফিকুল ইসলাম মন্টু: দুপুর গড়িয়ে বিকেল; কারও ঘরেই নেই রান্নার আয়োজন। সকলেই ব্যস্ত কাজে। নারী-শিশুদের কেউ গরু-মহিষের খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। আবার কারও ব্যস্ততা রান্নার জন্য জ্বালানি কুড়োতে। কারও সময় কেটে যাচ্ছে অলস। আর পুরুষেরা সকলেই রোজগারের খোঁজে বাইরে। কেউ জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে; কেউবা নদী পেরিয়ে শহরে।

এ চিত্র চোখে পড়লো চর রমনীমোহনে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার #কালকিনি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মৎস্যকেন্দ্র #মতিরহাট পেরিয়ে নদীর ওপারে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ছড়ানোর ছিটানো বাড়িঘরে প্রায় শ’খানেক পরিবার বসবাস করছে। কোন পরিবার লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভিটে হারিয়ে এখানে এসেছে, আবার কেউবা একইভাবে সর্বস্ব হারিয়ে এসেছে মেঘনার ওপারের ভাঙ্গণ কবলিত গ্রাম থেকে। দ্বীপের প্রায় সবগুলো পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার।

দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে আলাপে জানা গেল, নদী ভাঙণ, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে পরিবারগুলো অন্তত ৫-৬ বার বাড়ি বদল করে অবশেষে এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছে। বসবাসের উপযোগিতা না থাকা সত্বেও মানুষগুলো নিরূপায় হয়ে এখানে এসে বসতি গড়েছে। বর্ষায় গোটা দ্বীপ ডুবে থাকে ৭-৮ ফুট পানির নিচে। পরিবারগুলো তখন ঘরের উপরে মাচা পেতে বসবাস করে। আর এক ঘর থেকে আরেক ঘরে; কিংবা হাটবাজারের জন্য শহরে যেতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।

মেঘনার বুকে জেগে ওঠা এই দ্বীপে রয়েছে দু’টো অংশ। একটি চর #রমনীমোহন নামে পরিচিত; অপরটি চর #সামসুদ্দিন নামে। দক্ষিণ দিকে মেঘনার ভাঙণপ্রবণ এলাকায় চর সামসুদ্দিনের অনেকটা এরইমধ্যে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এই অংশে একটি আবাসান করা হয়েছিল। সেটি এখন নেই। আবাসনের কিছু পরিবার নিরূপায় হয়ে মাটি আঁকড়ে দ্বীপেই আছে; কেউ কেউ আবার চলে গেছে অন্যত্র। চর সামসুদ্দিনের কিছু অংশ আর চর রমনীমোহন মিলে শ’খানেক পরিবার এখন অত্যন্ত মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

মৎস্যকেন্দ্র মতিরহাট থেকে অনিয়মিত খেয়া পারাপার চর রমনীমোহনে। ভর দুপুরে এক সন্তান কোলে মতিরহাট ঘাটে খেয়ার অপেক্ষায় লাইলি বেগম। বয়স ৩০ পেরোয়নি এখনও। কোলের শিশুটির বয়স ৩-৪ বছর। কিন্তু ৭ বছর বয়সী বড় ছেলে সুমন ক’দিন আগেই অকালে প্রান হারিয়েছে। পুকুরের কাছে তরকারি সংগ্রহ করতে গিয়ে পানিতে ডুবেই তার মৃত্যু ঘটে। লাইলি বেগমের সঙ্গে খেয়া পার হতে হতে আলাপ হলো চরের সার্বিক অবস্থা নিয়ে। বললেন, মানুষগুলো অত্যন্ত কষ্টকর জীবন কাটাচ্ছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে এরা এখানেই পড়ে আছে।

চরে রমনীমোহন খেয়াঘাটে নেমে লাইলি বেগম তর্জনী উচিয়ে দেখিয়ে দিলেন দ্বীপের মাঝখানে টিনের ঘরের পাশে ছোট ভাঙা ঘরটাই তার। স্বামী আলাউদ্দিন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। কোন কাজ করতে পারেন না। বাইরের কাজ লাইলিকেই গোছাতে হয়। ছেলেটি মাকে সাহায্য করছিল; কিন্তু সেও নেই। লাইলি এখন একেবারেই অসহায়। লক্ষ্মীপুরেই তাদের মূল বাড়ি ছিল। বেশ কয়েক স্থানে বসতি বদল করে অবশেষে এই চরে এসে ঠাঁই নিয়েছেন।

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা বিবি সুলতানা (২৫)। স্বামী মো. হানিফ। নদীতে মাছ ধরেন। মূল বাড়ি ছিল লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটারীহাটের কৃষ্ণপুরায়। কয়েকবার নদীর ভাঙণের শিকার হয়ে অবশেষে এখানে এসেছেন। এখানে চরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন। শিশুরা গরু-মহিষ লালন পালনের কাজে মালিকের কাছ থেকে কিছু মজুরি পায়।

বিবি সুলতানার ঘরে সদস্য সংখ্যা ৫জন। স্বামী এবং তিন ছেলেমেয়ে। বড় ছেলের বয়স ৯ হলেও স্কুলের পাঠানোর সুযোগ হয়নি। জীবিকা নির্বাহের জন্য সে এখনই কাজে যোগ দিয়েছে। এভাবেই চলছে সংসার। ঘরে গিয়ে দেখা যায় ছোট্ট ঘরের এককোনে হাড়িপাতিল, একপাশে কাঁথাবালিশ। পাশের বারান্দায় গরু রাখার জায়গা। ঘরের উপরে কাঠঘড়ির মাচা পাতা রয়েছে। প্রচন্ড শীতেও ঘরের মাটিতেই বিছানা পেতে রাত কাটিয়ে দেন মানুষগুলো। উঠোনে খড়ের গাঁদার দিকে আঙুল তুলে সুলতানা জানালেন, বেশি শীতে বিছানার নিতে খড় বিছিয়ে নেন। আর বর্ষায় যখন জোয়ারের পানিতে ঘর তলিয়ে যায়, তখন মাচার উপরে ওঠেন।

আরেকজন ইয়ানুর বেগম (৩৫)। স্বামী কামাল হোসেন নদীতে মাছ ধরেন। ভোলার ইলিশার চর আনন্দ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে এখানে এসেছেন। সেখানাকার বাড়িঘর মেঘনায় ভেঙে গেছে। চর আনন্দতে এক সময়ে ব্যাপক গোলযোগ হতো। এ কারণে বহু পরিবার অন্যত্র চলে যায়। কামাল হোসেনের এই পরিবারটিও চলে আসতে বাধ্য হয়।

ইয়ানুর জানান, অন্যকোন স্থানে যাওয়ার কোন সুযোগ না থাকায় এই পরিবারগুলো এখানে পড়ে আছে। আমরা কেমন আছি, তা জানতে হলে বর্ষাকালে আসতে হবে। ছিন্নমূল মানুষদের জন্য সরকারের কাছে অনেককিছু আছে। আমরা তো কিছুই পাইনি। শুকনোর কয়েকটা মাস একটু ভালো থাকলেও বর্ষায় আমাদের দুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে।

গোটা দ্বীপ ঘুরে দেখা গেল, ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর। চরের সমতল জমিতে মাটি দিয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু ভিটে তৈরি করে বানানো হয়েছে ঘরগুলো। কোন ঘরে টিনের চালা, আবার কোন ঘরে খড়ের ছাউনি। অধিকাংশ ঘরে পাতার বেড়া। ছোট ছোট নড়বড়ে ঘরগুলোর একই মেজেতে পরিবারের সকলে গাদাগাদি করে বসবাস করে।

কালকিনি ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মেহেদি হাসান লিটন বলেন, বাইরে জমি কেনার সামর্থ্য নেই, এমন পরিবারগুলোই আসলে এখানে পড়ে আছেন। এদের জীবনযাপন অত্যন্ত মানবেতর। চর সামসুদ্দিনে একটি আবাসন থাকলেও সেটি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। আমরা ভাঙণ প্রতিরোধের জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

  রফিকুল ইসলাম মন্টু, বাংলাদেশে উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃত এবং দেশে উপকূল দিবসের প্রবর্তক। এ বিষয়ে আরো জানতে দেখুন:

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

কমলনগরে হিফজুল কুরআন ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com