এমআর সুমন, রায়পুর: ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের যানজটে নাকাল হচ্ছে রায়পুর পৌরবাসী। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয়সহ যত্রতত্র এসব যানবাহন অঘোষিত স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী পরিবহন করায় মূল সড়কগুলোতে লেগে থাকে তীব্র যানজট। শহরের অলি-গলিতে এসব যানের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা। উপরন্তু চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় এসব যানে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এটা নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা ট্রাফিক বিভাগের কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। তবে চলতি মাস থেকে অবৈধ এসব বিপজ্জনক যানকে পৌর কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের উপজেলা সড়কের সোনালি ব্যাংক এলাকা, থানার দুই পাশে সড়কে, গাজী মার্কেটের সামনের এলাকা, আলিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মাছ বাজার এলাকা, নতুন বাজার সড়কসহ অর্ধ শতাধিক স্থানে যত্রতত্র এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় পথচারীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সড়কের ওপরে স্ট্যান্ড হওয়ায় এসব এলাকায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এসব যান চলাচল করায় শহরের ব্যস্ততম রায়পুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়ক ও রায়পুর-হয়দরগঞ্জ সড়কে সারা দিনই ব্যাপক যানজট লেগে থাকে। এসব যান বিপজ্জনক গতিতে চলাচল করায় অহরহ ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। পাশাপাশি এসব যানের বেশির ভাগেই উচ্চমাত্রার শব্দের হর্ন ব্যবহার করায় বাড়ছে শব্দদূষণ।
পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার রিয়াজ উদ্দিন মন্সী বলেন, অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত দুই আসনের অটোরিকশার বেপরোয়া গতির কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এ ছাড়া এসব যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করায় মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে মানুষ। এসব যানের চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা যায়, নতুন ইজিবাইকের লাইসেন্সের জন্য ৮ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ব্যাটারিচালিত দুই আসনের রিকশার জন্য ৪ হাজার ৫০ টাকা ফি নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর দুই আসনের রিকশার লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে ইজিবাইকের লাইসেন্স নবায়নের জন্য ফি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এই নির্ধারিত ফি দিয়ে ৫’শ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার অনুমোদন দিবে পৌর সভা। তবে এখন পর্যন্ত ১৫টি আবেদন জমা পড়েছে পৌর সভায়।
রায়পুর পৌরসভার লাইসেন্স শাখার কর্তৃপক্ষ পীরজাদা আরমান হোসেন জানায়, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে শহরে যানজটের সমস্যা হওয়ায় এসব রিকশা ও ইজিবাইকের চলাচল বন্ধের জন্য কয়েকবার মাইকিং করা হয় এবং অভিযান চালানো হয়। তবে এসব অভিযানে কোনো কাজ হয়নি। এ জন্য শেষ পর্যন্ত পৌর পরিষদের সভায় এসব যানকে লাইসেন্স দিয়ে বৈধতার সিদ্ধান্ধে দেওয়া হয়েছে। এতে পৌরসভার আয় বেড়ে যাবে।
এ ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার পৌর কর্তৃপক্ষের আছে কি না, জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর উপপরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, ‘এটা যানবাহনের আওতায় পড়ে না। এ জন্য পৌরসভা কোনোক্রমেই এর লাইসেন্স দিতে পারে না। যদি দিয়ে থাকে, তবে তা অবৈধ। কোনো পৌর কর্তৃপক্ষ এটা দিলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে রায়পুর পৌরসভার সচিব আব্দুল কাদের বলেন, ‘এসব যান বিপজ্জনক ও অবৈধ এটা ঠিক। আমরা কয়েকবার এসব যান বন্ধের জন্য অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু নানা কারণে বন্ধ করা যায়নি। এ জন্য আমরা এসব যানবাহনের লাইসেন্স দিয়েছি। এতে পৌরসভার রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এ ধরনের যান নিষিদ্ধ করে তাহলে আমরা লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেব।’
186Share