নিজস্ব প্রতিনিধি: সাংবাদিকতার পথিকৃৎ দেশ বরেণ্য সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মরহুম সানাউল্লাহ নূরীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও ইফতার মাহফিল গত ১৬ জুন সাহিত্য সংসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংসদ ও লক্ষ্মীপুর জেলা রিপোটার্স ইউনিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন- সাহিত্য সংসদের সভাপতি ডা. মোঃ সালাহ্উদ্দিন শরীফ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- সাহিত্য সংসদের উপদেষ্টা কবি মুজতবা আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান, জেলা রিপোটার্স ইউনিটির কার্যকরী সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক এম এ মালেক ও লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তপন।
আলোচনায় অংশ নেন- ফেনী সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার ইউসুফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর জাকির হোসেন আরজু, রিপোটার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন নিজামী ও আনোয়ারের রহমান বাবুল, সাহিত্য সংসদের যুগ্ম সম্পাদক কবি মিঞা মাহবুব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পৌর আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রশীদ চৌধুরী, বিটিভির ভিডিও সম্পাদক আলাউদ্দিন সাজু, এনজিও ব্যক্তিত্ব নুর মোহাম্মদ, লক্ষ্মীপুরটোয়েণ্টিফোরের প্রধান নির্বাহী ও কমলনগর প্রেসক্লাব যুগ্ম সম্পাদক সানা উল্লাহ সানু, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান টিপু, নুরুল আলম বাবু, রবিউল ইসলাম খাঁন, কবি জাকারিয়া আলমগীর, কবি অ. আ. আবীর আকাশ ও কবি আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ সাহিত্য সংসদ নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা মরহুম সাংবাদিক সানাউল্লাহ নূরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন- সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের ইতিহাসে নূরীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর কর্ম ও জীবনাদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবশেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংবাদিক সানা উল্লাহ নূরী সাহিত্য পুরস্কার ও শিক্ষাবৃত্তি লক্ষ্মীপুরে চালু করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
জানা যায়, ভাষা সৈনিক বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানা উল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃত।
১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের মূখপত্র অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা “ইহসানের” সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্বের মধ্য দিয়ে জনাব নূরীর সংবাদিকতা হয় । এরপর তিনি এক নাগাড়ে দীর্ঘ ৫০ বছর সাংবাদিকতার জীবনে দৈনিক সংবাদ (১৯৫২-৫৭), দৈনিক আজাদ(১৯৪৮), দৈনিক সৈনিক, দৈনিক নাজাত,দৈনিক ইত্তেফাক(১৯৫৮),মাসিক সওগাত (১৯৬০), দৈনিক বাংলা, দৈনিক গণবাংলা, দৈনিক কিশোর, দৈনিক দেশ, দৈনিক জনতা, দৈনিক দিনকালসহ তৎকালীন অসংখ্য দৈনিকে সম্পাদক, সহযোগী সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৯৭ সালের মে মাসে দৈনিক দিনকালের সম্পাদক থাকাকালীন অবস্থায় অসুস্থ হলে তিনি আর আরোগ্য লাভ করেন নি। অবশেষে ২০০১ সালের ১৬ জুন মাত্র ৭৩ বছরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য গল্প, ছোট গল্প, ছড়া কবিতা এবং উপন্যাস। এ পর্যন্ত তার ৫০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং অপ্রকাশিত রয়েছে আরো ৫০টি পান্ডুলিপি।
তার লেখা “দারু চিনি দ্বীপের দেশে” গল্পটি নব্বইয়ের দশকের মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য আড়োলন সৃষ্টিকারী একটি রচনা ছিল। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য রচনা নোয়াখালীর ভাষায় লিখিত উপন্যাস “আনধার মানিকে রাজকন্যা”,নিঝুম দ্বীপের উপাখ্যান, রোহিঙ্গা কন্যা, ইতিহাস গ্রন্থ বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, নোয়াখালী-ভুলুয়ার ইতিহাস ও সভ্যতা ইত্যাদি।
এই কালজয়ী সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের জন্ম ১৯২৮ সালের ২৮ মে লক্ষ্মীপুর জেলার সাবেক রামগতি (বর্তমান কমলনগর) উপজেলার চর ফলকন গ্রামে।
0Share