এ মুহুর্তে দেশের বহু এলাকায় নদী ভাঙ্গছে। যার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি এবং রায়পুর উপজেলাও রয়েছে। বর্ষাকাল আসলে নদী ভাঙ্গনের গতি বাড়ে। তখন স্থানীয়দের আর্তনাদ, আন্দোলন আর নেটিজনদের ফেসবুক বার্তা চোখে পড়ে। কিন্ত যুগযুগ ধরে এমন চলতে থাকলেও ভাঙ্গন কবলিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চোখে পড়ে না।
নদী ভাঙ্গনরোধ বিষয়ের যত পদক্ষেপ দেশে ছিল তার মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য প্রস্তুতকৃত ভাসান চরের নদী শাসনের বিষয়টি আলোচিত। ভাসান চরের ঢেউ গতিরোধক বাঁধটি নদী শাসনের অত্যন্ত কার্যকর বলেই মনে হচ্ছে।
সে কারণে উক্ত বাঁধের মডেলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন এলাকায়ও কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।
ভাসান চরের ঢেউ গতিরোধক বাঁধ কি এবং এর কাজ কি ?
ভাসান চরের অবকাঠামো গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চরের ঢেউ গতিরোধক বাঁধ । যে বাধেঁর কারণে ভাসান চর সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের আঘাত থেকে রক্ষা পাবে। ধীরগতির ভাঙন প্রতিরোধে চরের মূল ভূখন্ড থেকে ৪০০-৫০০ মিটার দূরে ওয়েভ স্ক্রিন পাইলিং, গ্র্যাভেল স্থাপন ও জিও ব্যাগ সংবলিত তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এ ঢেউ গতিরোধক বাঁধ। এ বাঁধ তৈরিতে নদীর বুকে পাইপের পিলার বসানো হয়েছে। যেটাকে বলা হয়েছে পাইলিং। ২৪ মিটার পাইলিং পাইপের ১৪ মিটার মাটির নিচে এবং ১০ মিটার উপরে রাখা হয়েছে।
প্রতি ২ পাইলিং পাইপের মাঝখানে কিছু বুম বসানো হয়েছে। বুমগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভেসে উপরে উঠে। আবার ভাটার সময় নিচে নেমে যায়। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এই বুমে এসে আছড়ে পড়ে তার গতি কমে যায়। এতে করে বুমের অন্য অংশ বা চরের কাছের পানি শান্ত থাকছে। অর্থাৎ ভাসানচরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করছে এ বাঁধ।
তিন কিলোমিটার ঢেউ গতিরোধক বাঁধে মোট ১২৯টি পাইল এবং ১২৭টি বুম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি পাইপের ঘনত্ব ১৬ মিলিমিটার।
পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে ৫১.৮ কিমি, হাতিয়া থেকে ২৪.৫ কিমি ও সন্দ্বীপ থেকে ৮.৩ কিমি দূরের ভাসানচরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য বঙ্গোপসাগরে গত ১৭২ বছরে হওয়া সব ধরনের ঝড়ের ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ১০ হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯ ফুট উচ্চতার ১২.১ কিমি বাঁধের নির্মাণ শেষ হয়েছে। এ বাঁধকে আট স্তরে কমপেকশন করা হয়েছে। বাঁধে রয়েছে ১৮টি স্লুইস গেট।
প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসানচর সংলগ্ন সমুদ্রতীর ও বাঁধসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ কোম্পানি এইচআর ওয়ালিংফোর্ড। বাংলাদেশ নেভির এ প্রকল্পে নির্মাণ সহযোগী হিসেবে ছিলেন চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি)। সিআরসিসি’র কোয়ালিটি কন্ট্রোলার (কিউসি) হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার ইসমাঈল আকন্দ।
আমরা জানি ভাসান চরের এ চোখ ধাঁধানো অবকাঠামো নির্মাণে আর্ন্তজাতিক কমিউনিটির আর্থিক সহযোগীতা আছে। কিন্ত ভাসান চরে নদী শাসনের যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং তাতে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কি দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চলে প্রয়োগ করা যায় না ?
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন
471Share