সানা উল্লাহ সানু: সবুজ উৎসবে, উপকূলে সবুজ বাঁচানোর আহবানের এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির নাম “সবুজ উপকূল” কর্মসূচি। সবুজ সুরক্ষায় সৃজনশীল প্রতিযোগিতা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, র্যালী, আলোচনা সভা, গাছের চারা রোপণ ও বিতরণসহ নানান বর্ণাঢ্য আয়োজন। পড়ুয়াদের সবুজ মনস্ক করার লক্ষে সবুজ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রচনা লিখন, কবিতা লিখন, ছবি আঁকা, সংবাদ লিখন, পত্র লিখার মতো সৃজনশীল প্রতিযোগিতা হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে উপকূল। পড়ুয়াদের তথ্যে সমৃদ্ধ আর উপকূলের অন্ধকারকে আলোয় আনার মাধ্যম দেয়ালপত্রিকা “বেলাভূমি”।
চারপাশের অজানা বিষয়গুলো দেয়ালপত্রিকাতে লেখে পড়ুয়ারা মিলে। কেউ সম্পাদক, কেউ উপ-সম্পাদক, কেউ প্রতিবেদক, কেউ ডিজাইনার, কেউবা আবার ওই পত্রিকার কার্টুনিষ্টের দায়িত্বে। ওদের লেখায়, ওদের কোমল হাতের অঙ্কনে বের হয় স্বপ্নের দেয়ালপত্রিকা “বেলাভূমি”। কেমন আছে চারপাশের পরিবেশ? ওই পরিবেশের মাঝে বেঁচে থাকা মানুষগুলো কীভাবে সংগ্রাম করছে? কোন সমস্যায় আছে কী তারা? কেন-ই-বা তাদের এই সংকট? এর পেছনের কারণ কী? এমনি কয়েকটি প্রশ্নের সমন্বয়ের প্রতিফলন কর্মসূচিরই অংশ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ।
গাঁয়ে “সবুজ উপকূল” নামের টি-শার্ট, গলায় কার্ড/পরিচয়পত্র, হাতে নোটবুক আর কলম। ২০জনের টিম। চারপাশের তথ্য সংগ্রহের জন্য ওরা বের হয় কোন এক বিপন্ন জনপদে। আর সেই সংগ্রহিত তথ্যের আলোকে ওরা প্রতিবেদন তৈরি করে। ওদের মধ্য থেকে একজন সবার সামনে তুলে ধরে তা। পথের পর পথ, সবুজ সুরক্ষার স্লোগানের মধ্য দিয়ে বের করা হয় র্যালী। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও জনসম্মুখে র্যালি সবুজের আহবানে। নিরাপদ উপকূল গড়ার প্রত্যয়ে।
আলোচনা সভার মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচির মূল আনুষ্ঠানিকতা। দু’জন খুদে পড়ুয়া উপস্থাপনা করে পুরো অনুষ্ঠান। ভাবতেও অবাক লাগে! সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। পবিত্র কুরআন থেকে তিলওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। কর্মসূচি উপলক্ষ্যে বের হওয়া দেয়ালপত্রিকা বেলাভূমি’র শুভ উদ্বোধন হয়। এরই মাঝে শিক্ষার্থীদের দুই-একজন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পায় অতিথিদের সামনে। তাদের সংকটের কথা তুলে ধরে বিশিষ্টজনদের সামনে।
পরিবেশ পর্যবেক্ষণে গিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন একজন উপস্থাপন করে। যা তার বাস্তব জীবন গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পরক্ষণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবুজ বৃক্ষ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গাছের চারা লাগানো হয়। পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। সবুজ নিয়ে সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। কর্মসূচির একপর্যায়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। যেখানে সবুজ সচেতনতা বিষয়ক নাটিকা, গান, অভিনয়, কৌতুকের প্রাধান্য থাকে। মোটকথা এভাবেই সবুজ মনস্ক হচ্ছে পড়ুয়ারা।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সবুজ সুরক্ষার আহবানের মধ্যদিয়ে ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এবং ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল কর্মসূচি। চলতি ২০১৭ সালেও কমলনগরের ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা লেখালেখির মাধ্যমে সচেতন হয়ে উঠছে।
স্কুলের যে সব ছেলে-মেয়ে পাঠ্যবইয়ের দিকেই ঝুঁকে থাকতো। আর সেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি যুক্ত বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও। অন্যদিকে কর্মসূচিটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে উপকূলের। যেখানে রোদে খাঁ খাঁ করতো, সেখানে এখন সবুজের রাজত্ব। তারই উদাহরণ- লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এবং একই উপজেলার ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০১৫সালে দু’দিনের মাথায় এ দু’টি বিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন হয়েছে। কর্মসূচিতে লাগানো গাছ এখন ছায়াও দিচ্ছে। উঁকি দিচ্ছে আকাশের দিকে। আর ঠিক এভাবেই সমগ্র উপকূলে পরিবর্তন ঘটছে। যার ফসল “সবুজ উপকূল” কর্মসূচি।
লেখক : সানা উল্লাহ সানু, সম্পাদক, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডটকম
0Share