সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
‘আলু পোড়া খাওয়ার নেশা’ আর ‘দৃশ্যপটের ম্যালা দশা’

‘আলু পোড়া খাওয়ার নেশা’ আর ‘দৃশ্যপটের ম্যালা দশা’

‘আলু পোড়া খাওয়ার নেশা’ আর ‘দৃশ্যপটের ম্যালা দশা’

মীর ফরহাদ হোসেন সুমন:  পুরোনো দিনের একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো আজ। ‘আলু পোড়া খাওয়ার নেশা’ নামক ওই গল্পটিতে এক পরিবারের বাপ-বেটা দুইজনের নেশাজনিত কারনে মানবিক দিশা হারানোর বর্ণনা ফুটে ওঠে। মূলতঃ নেশার প্রভাবে জাগতিক বিবেকশূণ্য হয়ে পড়া বাপ-বেটা একপর্যায়ে আত্মঘাতি বিপর্যয় ডেকে আনে নিজেদের সংসারজীবনে।

আত্মঘাতি বিপর্যয়ের ওই গল্পের সাথে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সম্প্রতী বহুল আলোচিত একটি ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যা ভাবিয়ে তোলে অতি আধুনিকায়ন যুগের বিবেকবান সমাজকে। এই যুগে সেই পুরান কাহিনীর চেতনায় উদ্ভুদ্ধ থাকে যদি কেউ, তাহলে আধুনিক সভ্য সমাজের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের এগিয়ে চলা রুদ্ধ হয়ে উঠবেনা কি!

এবার আসি মূল কথায়। প্রথমে গল্পের সেই পুরান কাহিনীর বর্ণণা—-অনেক অনেক আগে এক পরিবারের গৃহকর্তা ও তার পুত্র শখের বশে প্রতিদিন নিয়ম করে গোলআলু পুড়ে খাওয়া শুরু করলো। প্রথমে দিনে দুইবার খেতো। কয়েকমাস পর এরমাত্রা আরো বেড়ে গেলো। এভাবে দিন যেতে যেতে আলু পোড়া খাওয়ার নেশায় ধরে গেলো তাদের। একপর্যায়ে তারা সারাদিনমান আলুপোড়া খাওয়ায় বুদ হয়ে থাকতে লাগলো।

এ অবস্থায় সময়ের অভাবে আর কোন রকম কাজকর্মে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো তাদের। কাজকর্ম না করায় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেলো বাপ-বেটা দুইজনের। তাই বলে তো আলুপোড়া খাওয়ার নেশা দমে যায়নি আর। প্রতিদিনই তা খেতে হবেই তাদের। আর তাই আলু কিনতে তারা একে একে সংসারের সবকিছু বিক্রী করা শুরু করলো।

এরমাঝে ওই পরিবারের গৃহকর্তীর মারাত্মক বিমার দেখা দিলো। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য কোন টাকা পয়সার যোগান দিতে সম্পূর্ণ অক্ষম ওই বাপ-বেটা। অবশ্য এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপও নেই তাদের। ফলে গৃহকর্তী মহিলার বিমার বাড়তে বাড়তে মৃত্যুপথের যাত্রী হয়ে পড়লো। ততদিনে সংসারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করেও মিটেনি বাপ-বেটা আলু পোড়া খাওয়ার নেশা।

একদিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গে তারা দেখে বিমারাক্রান্ত মহিলা মারাই গেলো। আর কি করা। অন্ততঃ মরদেহটি দাফন করতে তো হবে। অথচ কাফনের কাপড় কেনার সামর্থ্যতো নেই তাদের। তাই নিশ্চুপ পড়ে রইলো তারা। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরাতো বসে থাকতে পারেনা। মানবিক কারনে তারা মৃত মহিলাকে দাফনের জন্য কাপনের কাপড় কিনে দিয়ে যায়। ওইদিকে সকাল থেকে কয়েকঘন্টা সামর্থ্যরে অভাবে আলুপোড়া না খাওয়ায় অস্থির হয়ে আছে বাপ-বেটা।

ঠিক এই সময়ে প্রতিবেশীদের কিনে দেয়া নতুন কাপনের কাপড় পেয়ে তারা যেনো অনাকাঙ্খিত কোন সুযোগ পেয়ে গেলো। বাপ-বেটায় যুক্তি করে ওই কাপনের কাপড় বাজারে নিয়ে স্বল্প দামে বিক্রী করে আলু কিনে এনে পুড়ে খেয়ে আপাততঃ নেশা ফুরালো। এরপর আবার মরদেহ দাফনের চিন্তা মাথায় এলো তাদের। কিন্তু কাপনের কাপড় ছাড়া কিভাবে দাফন করবে এইনিয়ে চিন্তা করতে করতে আর একটি রাত কেটে গেলো। এদিকে মরদেহ পঁচন শুরু হলো। পরের দিনের বেলা যতো এগিয়ে যেতে থাকে মরদেহ পঁচনের গন্ধ ততো ছড়াতে থাকে।

একপর্যায়ে তীব্র গন্ধে অতীষ্ঠ প্রতিবেশী কারন খুঁজতে খুঁজতে ছুটে এসে দেখে প্রকৃত পরিস্থিতি। প্রতিবেশীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাপ-বেটা দুই জনকে গণপিটুনি দিয়ে এলাকা ছাড়া করে….. এবার আসি কমলনগরের সাম্প্রতিককালে আলোচিত সেই কাহিনীতে।

প্রথম দৃশ্যপট:  সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে জানা কাহিনী এটি। দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে চলছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাঙতে ভাঙতে ইতিমধ্যে বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই নদীর তীরে এখনো যারা বাসিন্দা হয়ে টিকে আছে তাদের বুকে বিরাজমান থাকে প্রতি মূহুর্তে ভাঙনের শংকা। কখন জানি হারিয়ে বসে বাপ-দাদার ভিটা।

এরকম পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে স্থানীয় এমপির আন্তরিক উদ্যোগ ও বিশেষ সুপারিশে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালিন জরুরী তীর রক্ষা কাজের আওতায় উদ্যোগ নিয়ে বরাদ্দ দেয়। ওই কাজ বাস্তবায়নের নিযুক্ত ঠিকাদাররা নিয়মমোতাবেক কাজ সম্পন্ন করার মানসিকতা না রেখে বরং অনিয়ম করে নিজেদের পকেটভারির উদ্দেশ্যে তৎপর হয়ে উঠেন। ফলে কাজে ফাঁকিবাজি ও অনিয়ম করতে থাকেন।

এ পরিস্থিতিতে ভাঙনকবলিত এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদি ওইসব মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজে অনিয়ম করা বলবৎ রাখতে অসাধু ঠিকাদাররা স্থানীয় এক রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয় নেয়। অবশ্য এজন্য ঠিকাদাররা তাকে মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেয়। অর্থের প্রলোভনে প্রলুব্দ হয়ে ওই ব্যক্তি ঠিকাদারদের অনৈতিক ইচ্ছায় সাড়া দিয়ে নেপথ্য সহযোগীতা প্রদান করেন। অথচ তিনি একজন জনপ্রতিনিধিও বটে।

আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, যেই স্থানে তীর রক্ষা কাজের অনিয়মের পক্ষে তিনি মানুষের বিরুদ্ধে প্রভাব বিতরণ করেছেন, সেই স্থানেই ভাঙনের ঝুঁকিতে তার নিজের বাড়িও রয়েছে। কাজের অনিয়মে সাহায্য করলে পক্ষান্তরে কোন এক সময়ের ব্যাবধানে তার নিজের বসতভিটাটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়। এ বিষয়টি তিনি যেন লোভাতুর হয়ে বেমালুম ভুলে বসেছেন। এনিয়ে এলাকাবাসী তাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিরূপ মত সহ ঘৃণা প্রকাশ করেন। মুখে মুখে এসব কথা ওই ব্যক্তির কানে পৌঁছালেও তিনি এতে কোন কর্ণপাত করেননি।

সচেতন বোধ জাগেনি তার। উল্টো ভিন্ন বক্তব্য প্রকাশ করেন আত্মপক্ষে। একপর্যায়ে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তার সহযোগীতা সফলতা পায়। ঠিকাদাররা ইচ্ছেমতো যাচ্ছেতাইভাবে কাজ সম্পন্ন করলেও এলাকার মানুষ ওই কাজে ফের প্রতিবাদের বাধা দিতে যায়নি আর। অনিয়মের নানান তথ্য পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পৃথক সময়ে ওইস্থানে ছুটে যায়। এ পর্যায়ে কোন কোন সংবাদকর্মী সেখানে ঠিকাদার ও প্রভাবশালীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হেনস্তার শিকার হন বলে জানা যায়।

দ্বিতীয় দৃশ্যপট:  শেষপর্যন্ত ঘটনা যাই হোক, অল্প কয়েকদিনের ভেতরে নদীর অব্যাহত ভাঙনের ধারা ধেয়ে এসে হামলে পড়ে উল্লেখিত ওই রাজনৈতিক প্রভাবশালীর বাড়ির সীমানায়। পরিস্থিতির বাস্তবতা এমন, যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে তার বসতবাড়িটি। এটির বাস্তব দৃশ্যপট এখন কেবল সময়ের ব্যাপার……।

অন্য দৃশ্যপট:  এমনিতেই যুগযুগ ধরে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে ওই জনপদে সর্বনাশের ঝুঁকিতে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতিদিনই নদী এলাকার কোথাও না কোথাও ভেঙে যাচ্ছে। যেখানেই ভাঙুক, যা-ই ভাঙুক খবর পাওয়া মাত্রই বেদনাহত হয়ে পড়ে সকলেই। তদুপরি নিজের সামনে ভাঙনের চিত্র দেখলেতো কেঁপে উঠে তারা, অনুধাবনটা এমন হয়-যেনো নিজেরই বুকের ভেতর আছড়ে পড়েছে নদীর প্রবল ঢেউ। অথচ নদী তীর রক্ষা কাজে অনিয়মের সহযোগী হওয়ায় কমলনগরের লুধুয়া এলাকায় এদিন নদীর তীর ভাঙতে ভাঙতে ওই লোভাতুর প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির সীমানার দিকে ধেয়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে করতে স্থানীয় মানুষ করতালিতে একযোগে উল্লাস ধ্বনি দিয়ে উঠেছে বলে খবর আলোচনায় মুখর হয়েছে।

দৃশ্যপটের শেষমত:  একজন লোভাতুর মানুষের বাস্তব গল্পের অমন কাহিনী কল্পগল্পের উল্লেখিত কাহিনীতে আলু পোড়া খাওয়ার নেশায় বুদ হয়ে পড়া বাপ-বেটার জীবন পরিণতির সাথে মিল খুঁজে পায় যেনো। কল্পগল্পের বাপ-বেটা নেশার চোটে স্বাভাবিক চৈতন্যজ্ঞানহীন হয়ে ঘৃণ্যকান্ডে প্রতিবেশীদের গণপিটুনিতে এলাকাছাড়া হয়।

আর বাস্তবগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তি লোভাতুর কান্ডে প্রতিবেশীদের গণঘৃণার শিকার হয়। সেই দৃশ্য তার দৃষ্টি এড়ালেও বিবেকের দায় এড়িয়েছে কিনা জানা নেই তা….।।

লেখক: লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি,  দৈনিক বাংলাদেশ জার্নাল

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

কৃত্রিম ভুলুয়া এখন রামগতি ও সুবর্ণচরের দানব

শতবর্ষী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

রিপোজটরি সাইট গিটহাবে বাংলাদেশী ডেভেলোপার আরমান হাকিম সাগরের কান্ট্রিবিউশন

নিবন্ধনের জন্য প্রথমদিকে আবেদিত নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন পেতে আর কত বছর?

স্বামীকে গলাকেটে হত্যা | ঘটনার এপিঠ-ওপিঠ

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশেও জেন্ড সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com