এম আর সুমন: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারি ঘর পেয়েছেন স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদর আত্মীয়-স্বজনরা। এ কাজে সহায়তাকারী ইউপি সদস্যরা ঘর পাওয়া ২৫ জনের নিকট থেকে ৬-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরজমিনে গিয়েও উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে ঘর বরাদ্দে অনিয়ম ও অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গত শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রায়পুরের ২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন, ভূমিহীন, হতদরিদ্র মানুষের জন্য রায়পুর সরকারী খাস জমিতে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে একেবারেই ভূমিহীন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকছেন এমন ২৫টি পরিবারকে পাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া কথা। সরকার নির্ধারিত নকশামতে প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ইউনুসের পোলের গোড়া নামক এলাকার আবদুর রহিম ভুঁয়ার স্ত্রী লাকি বেগম। ইউপি সদস্য লিটন গাইনের বোন হন লাকি বেগম। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ শতাংশ জমিজুড়ে একটি টিনশেড ঘর ও বাগান রয়েছে। তার বাবার বাড়ী থেকেও সম্পদের ভাগ পেয়েছেন। স্বামী থাকে সোনাপুর ইউপির রাখালিয়া গ্রামে। লাকির নামেও দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
তালিকার নাম রয়েছে এ ইউনিয়নের কালু বেপারির হাট এলাকার মুনর্শিদা ও তার স্বজন আয়েশা বেগমের নাম, যারা সম্পর্কে আপন নানি ও নাতিন। তাদের উভয় পরিবারের বসতভিটেয় টিনশেড ঘর রয়েছে। আবাদি জমি ও কর্মজীবী হওয়ায় তাদের পরিবারে সচ্ছলতা আছে। অথচ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের নামে।
কালু বেপারির হাট গ্রামের ইউপি সদস্য দুলালের বসতঘরের সামনে জয়নালের স্ত্রী তাজিয়া বেগম ও তার ২০০ গজ পাশেই মমিন তালুকদার। তারা দু’জনই ঘর বরাদ্দ হয়েছে, যারা মূলত সচ্ছল এবং তাদের ঘর ও জমি রয়েছে। আখনবাজার এলাকার লোকমান ফরাজি ও শুক্কর সর্দারের অবস্থা একই। শুক্কর সর্দারের মেয়েই জানেনা তাদের নামে ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ঘর বরাদ্দে অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়াসহ ইউনিয়নের সদস্যরাও। তাদের অভিযোগ, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রকৃত ভূমিহীনদের নামে ঘর বরাদ্দের কথা থাকলেও তা তারা জানেন না।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ চরবংশি ইউপির আ’লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ ঘর বরাদ্ধেই অনিয়মত হয়েছে। উপজেলা ভুমি অফিস ও ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। বিষয়টি আমার উপজেলা প্রসাশনকে জানালেও কোন কাজ হয়নি।
দক্ষিণ চরবংশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজি বলেন, বরাদ্ধের অপ্রতুলতার কারণে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। মেঝে ও বারান্দায় মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্ধ পাওয়াদের কাছ থেকে ৬-১০ হাজার টাকা করে মেম্বারদের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। নিজেদের ঘর হওয়ায় আবার অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমিকের কাজ করছেন।
রায়পুরের ইউএনও সাবরিন চৌধুরি বলেন, ‘ঘর বরাদ্দে কোনও অনিয়মের অভিযোগ আমার জানা নেই। এ নিয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। অনিয়মের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হবে। তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তি থাকলে তাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও তদন্ত করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ঘর বরাদ্দের অনুমোদন ও তালিকার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
এসব ঘর বরাদ্ধ অনেক আগেই হয়েছে। যেহেতু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু ইউএনও-কে তদন্তের জন্য বলা হবে। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে ঘর বরাদ্দ এবং সরকারের মহৎ উদ্দেশ বাস্তবায়নে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
487Share