গরিব এবং নিরক্ষর এলাকাবাসী একাই ৩০ বছর একটি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংগ্রাম করে অবশেষে মুজিবশত বর্ষে রাষ্ট্রকে তাদের এলাকার শিশু শিক্ষার দায়িত্বটা দিতে চান। সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে হস্তান্তরের জন্য গত ১ মার্চ তারিখে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি লিখেন, ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন। সুখবরের বিষয় হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো সে পত্রটি, ২ মার্চ তারিখে গৃহিত হয়।
ওই পত্রে বিদ্যালয়ের সভাপতি লিখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী “৩০ বছর বহন করেছি, এবার দায়িত্বটা নিন।’’ দীর্ঘ ৩০ বছরের অবহেলিত সে বিদ্যালয়টি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৯ নং তেওয়ারী তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ আন্দারমানিক গ্রামে ।
স্থানীয় জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মধ্যে আন্দারমানিক অবহেলিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের একটি গ্রাম। উক্ত গ্রামের মানুষগুলি যুগ যুগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। নানাবিধ উদ্যোগ নিলেও তাদের তদবির করার মত কোন লোক নাই এবং অর্থও নাই। এর ফলে শিক্ষার জন্য সকল উদ্যোগই এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।
তথ্যে প্রকাশ ১৯৯১ সালে অত্র গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক গ্রামের শিশু-কিশোদের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি নিজে ৫০ শতাংশ জমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা সচিবের নামে ছাপ কবলা প্রদান করেন। বিদ্যালয় এলাকার মানুষ তার এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিদ্যালয়টির নাম করণ করে “দক্ষিণ আন্দারমানিক এ.জামান বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়”।
অজ্ঞাত কারণে বিদ্যালয়টি ২০১২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ঘোষণা থেকে বাদ পড়ে যায়। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা বিদ্যালয়টির নাম বাদ পড়ার সদুত্তর দিতে পারেননি। বিদ্যালয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বহুবার তথ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন জানান বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় শতাধিক পত্র দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি ইস্যু করার পর আর কোন জায়গা থেকো ইতিবাচক কোন খবর আসেনি। তাই বিদ্যালয়টি পরিচালনায় নানাবিধ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
বিষয়টি লক্ষ্মীপুর সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এ.কে.এম.শাহজাহান কামাল মহোদয় এর নজরে আসলে তিনি বিদ্যালয়টি জাতীয় করণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের বরাবর একটি ডিমান্ড নোট প্রেরণ করেন।
বিদ্যালয়টি প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৩৮.০০৭.০০৮.০৬.০০.০০৩.২০১৫.৪৫০, তারিখ ২২/০৬/২০১৫ এর অনুকূলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি জাতীয় করণের জন্য জেলা যাচাই বাচাই কমিটির সুপারিশ আহবান করে ।
জেলা প্রাথমিক অফিসারের কার্যালয়ের স্মারক নং ডিপিইও/লক্ষ্মী/১৫৭২, তারিখ ২৯/০৭/২০১৫ইং এর মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট পরিদর্শন প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রেরণ করে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্মারক নং উপশিঅ/সদর/লক্ষ্মী/১৫/১৩৯২ এর মাধ্যমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করে ।
বিগত ১০/০৯/২০১৫ইং তারিখে জেলা প্রশাসক লক্ষ্মীপুর এর সম্মেলন কক্ষে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সম্পর্কিত লক্ষ্মীপুর জেলার যাচাই বাচাই কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সাবেক জেলা প্রশাসক জনাব জিল্লুর রহমান চৌধুরী মহোদয়ের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়টি জাতীয় করণের জন্য সকল উপাদান বিদ্যামান থাকায় জাতীয়করণের সুাপিরশ করেন।
জেলা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় যাচাই-বাচাই কমিটির সুপারিশসহ সকল সুপারিশ ও প্রয়োজনী নথি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের স্মারক নং ডিপিইও/লক্ষ্মী/১৮৭৭/৪,তারিখ ২১/০৯/২০১৫ইং এর মাধ্যমে উপ-সচিব বিদ্যালয়-১, অধি-শাখা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা-১০০০ বরাবর প্রেরণ করা হয় ।
সুপারিশের প্রায় ৫(পাঁচ) বছর অতিবাহিত হলেও মন্ত্রলনালয় থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ বিষয়ে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন কিনা তা আমাদের জানা নাই।
বিদ্যালয়ের ৪জন শিক্ষকের বেতন -ভাতাদি না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্তমানে প্রায় ২শত শিশু-কিশোর বিদ্যালয়টিতে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যায়ন করছে। প্রতি বছর বিদ্যালয়টি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ১০০% শিক্ষার্থী পাস করে আসছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরকে বলবো ৩০ বছর আমরা দায়িত্ব নিয়েছি এবার আপনি দায়িত্বটা নিন।
অবশেষে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি মুজিব শতবর্ষে বিদ্যালয়টি সরকারের দায়িত্বে যে কোন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হোক, যাতে করে শত শত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার একমাত্র বিদ্যালয়টি টিকে রাখা যায়। বিদ্যালয়টি চালু রাখা গেলে আলোকিত হবে শত শত শিশুর জীবন-আলোকিত হবে একটি সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম।
0Share