রামগতি প্রতিনিধি: প্রকৃতি প্রেমীদের ভীড়ে এখন স্লুইস গেইট, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে আসতে দেখা যায়। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মধ্যে এই স্থানটি মিনি কক্সবাজার ও পতেঙ্গা’র মত পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে স্থান পেয়েছে।
ক্লান্তি, অলস সময় ও নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে অনেকেই প্রশান্তির ছোঁয়া খোঁজেন সবাই। তাই ছুটিতে ও অলস সময়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য আসতে স্লুইস গেইটে আসেন অনেকে। লক্ষ্মীপুরের অদূরে রামগতি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে।
রামগতি উপজেলার ৯নং চরগাজী ইউনিয়নের স্লুইস গেইট (তেগাছিয়া বাজার সংলগ্ন) এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে প্রায়সময়। আর হাতের কাছে এমন সুন্দর, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্লুইস গেইট। মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নিরিবিলি এই স্থানে যেকারো মন ভালো হয়ে যাবে। নদীর করকল ধ্বনি কানে আসলে কিযে ভালো লাগে তা না গেলে বুঝা যাবে না।
প্রবেশ মূল্য বিহীন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে প্রায় সবসময়ই বনভোজনের জন্য নিরিবিলি ওই স্থানটি নির্বাচন করছেন দর্শনার্থীরা।
স্লুইস গেইটের নদীর পাড়ের অসংখ্য ব্লক গুলোতে বসে আপন মনে ভাবতে পারেন এখানে আসা মানুষগুলো, দেখতে পারেন সূর্যাস্তের মত অপরুপ দৃশ্য, পাশে গভীর ঝাউ বন। ৪-৫ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ঝাউ বন, যা সৌন্দর্য কক্সবাজারকেও হার মানবে।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমাদের এই স্লুইস গেইটে বেড়াতে আসেন। প্রতিদিন মানুষের সমাগত দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। প্রায় এখানে পিকনিক করতে আসে এবং প্রয়োজনবোধে আমাদের সাহায্য নেয়। আমাদের এই অঞ্চলটি আরো বৃহৎ আকারে পরিচালিত হলে অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেক লাভবান হবো। এছাড়া এখানকার পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প করা জরুরি।
নদীতে ভ্রমন করার মত নৌকার ব্যবস্থা সবসময় না থাকলেও ওখানে থাকা নৌকার মালিকদের সাথে আলাপ করে তা ব্যবস্থা করা সম্ভব।
থাকার মত আবাসিক হোটেল হয়তো নেই কিন্তু এখানে টিম নিয়ে আসলে ঝাউ বনের মধ্যে অথবা খোলা আকাশের নিচে তাম্বু দিয়ে থাকার জায়গার অভাব হবে না।
বনভোজনের জন্য সুন্দর স্থান এটি, একসাথে কয়েক হাজার লোক এখানে পিকনিক করতে পারবে। যদিও আশেপাশে ভালো মানের বাজার নেই সেহেতু আসার সময় সব প্রস্তুতি নিয়ে আসাটাই ভালো।
স্লুইস গেইট যে ভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে লক্ষ্মীপুর হয়ে রামগতি বাজার নামতে হবে। পরে রামগতি বাজার থেকে রামগতি-মোহাম্মপুর অঞ্চলিক সড়কের ব্রিজের মাথা এলাকায় নেমে রিক্সায় বেড়ী দিয়ে ১কি.মি অথবা তেগাছিয়া বাজার পর্যন্ত সোজা গাড়ি চালিয়ে বেড়ী দিয়েও ওই স্থানে যাওয়া যায়।
যদি নোয়াখালী দিয়ে আসেন তাহলে সোনাপুর থেকে মন্নাননগর চৌরাস্তা হয়ে ভূঁয়ারহাট পোলের একটু সামনে রাস্তার মাথা নামক স্থান দিয়ে পূর্ব দিকে টাংকী বাজার হয়ে বেড়ী দিয়ে আসা যায়।
সরকারি অথবা বে-সরকারি সঠিক উদ্যোগে স্লুইস গেইট হয়ে যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলে সরকারি অথবা বেসরকারি কোন রিসোর্ট নেই তাই স্লুইস গেইটের এই স্থানটিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটু সুদৃষ্টি দিলে এ অঞ্চলের উপকূলের বঞ্চিত মানুষগুলো কিছু সুবিধা পাবে।
ইতিপূর্বে বিষয়টি প্রশাসনে নজরে এসেছে, প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তারা স্লুইস গেইট এলাকাটি ঘুরে গেছেন। রিসোর্ট হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসনে পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, যা চলমান। এছাড়া লক্ষ্মীপুর-৪(রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল্ল্যাহ আল মামুনের উদ্যেগে একটি বিশেষজ্ঞ টিম এলাকাটি দেখে গেছেন।
উপকূলীয় অঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে সরকারি অথবা বে-সরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে হয়ে যেতে পারে নিদারুণ রিসোর্ট। উপকূলের প্রকৃতিক নিদর্শন রিসোর্টে রূপদান করার লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেঘনার পাড়ের অবহেলিত লোকজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
0Share