সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মানচিত্র খাওয়ার নেশায় উন্মত্ত মেঘনা

মানচিত্র খাওয়ার নেশায় উন্মত্ত মেঘনা

মানচিত্র খাওয়ার নেশায় উন্মত্ত মেঘনা

আশ্রাফ আলী: এ বছর মেঘনা ২১টি পয়েন্টে ভাঙন ঘটিয়েছে।গত কয়েক বছরে কেড়ে নিয়েছে রামগতির প্রায় ১৬ হাজার পরিবারের বাড়িঘর।স্বয়ং মেঘনা মিলে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের এই উপজেলায়  ভাঙন কবলিত মানুষের আহাজারিতে ক্রমেই ভারি হচ্ছে এ অঞ্চলের আকাশ-বাতাস।মেঘনার নিষ্ঠুর থাবা ভেঙ্গে দিচ্ছে হৃদয়ের বন্ধন।রাত পোহাতেই যাদের সাথে ভাবের লেন-দেন, তাদের এমন নির্মম পরিনতি ভোক্তভুগি ছাড়া করো জানবার কথা নয়।ঘরবাড়ী ছেড়ে মাথা গুজাবার ঠাই খোঁজতে বের হবার সময় এ অসহায় মানুষগুলো একে অপরের গলা জড়িয়ে বুকফাটা আত্মনাদ আর চিৎকারে যে করুন দৃশ্যের অবতারনা হয়, তা’ পাথুরে হৃদয়কেও বিগলিত করবে। ভরাবাড়ী থেকে একটি পরিবারের চলে যাওয়া যেন এক একটি হাশর-নশর! তাদের অশ্রুডেউ তখন মেঘনাকেও হার মানায়। চোখের সামনে শত স্মৃতি বিজড়িত বসত ভিটা ভেঙ্গে যাবার দৃশ্য দেখে হৃদয়টাও ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়।নিজ হাতে সাজানো স্বপ্ন নিবাস তলিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে কিন্তু বোবা কান্না ছাড়া কিছু করার নাই। স্বামী-স্ত্রী’র স্নেহ সোহাগের নীরব সাক্ষী পায়ের তলার মাটি চলে যাওয়া দীর্ঘ অতীতকে দারুনভাবে নাঁড়া দেয়। মায়ের মুখের দিকে সন্তানদের করুন দৃষ্টি আর খেলার সাথী হারানোর মর্মবেদনা সোনামনিদের মূর্তিসম করে তুলে। প্রতিবেশিদের বিয়োগ ব্যথা, হাজারো স্মৃতি আর অডেল সম্পদ হারানোর দুঃখ বোঁঝা মাথায় নিয়ে অজানায় তাদের যাত্রা।কঙ্কালসার এ মানুষগুলোর দেহ থেকে প্রান বেরিয়ে যায় আরেক বার; যখন ভাবতে হয় বাড়ীর দরজায় বাপ-দাদার কবর গুলোকেও রেখে যেতে হবে রাক্ষুসী মেঘনার হাতে।আর কখনো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মা’বুদের দরবার একটু দোয়াও করতে পারবে না।

বংশীয় ঐতিহ্যের ধারক শেষ চিহ্নটুকুও কেড়ে নিচ্ছে মেঘনার প্রবল ভাঙ্গন। বন্যায় প্লাবিত অঞ্চলে মানুষের কষ্ট দেখে হৃদয় ঢুকরে তাদের কষ্ট লাগবে ছুটে যায় মিড়িয়া, সরকার এবং দেশি-বিদেশি সংস্থা।বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা এক সময় পিরে পাবে তাদের সহায় সম্পত্তি।কিন্তু ভাঙন কবলিতদের ঠাই কোথায়? কোথায় তাদের ফসলের মাঠ আর সন্তাদের শিক্ষার সুযোগ? রাস্তা বা বেঁড়ির কিনারা ছাড়া তাদের আর কোন ঠিকানা অবশিষ্ট থাকে না।বংশ-মর্যাদাশীল হাজারো মানুষ কারো কাছে হাতও পাততে পারেন না।লোক লজ্জার ভয়ে সরকারী সহযোগীতা থেকেও বঞ্চিত তারা।কেউ তাদের খোঁজও রাখে না।দুঃখের কথা গুলো মনে ভেতরেই মাটি চাপা দিতে হয়।অনাহারে অর্ধাহারে পুরনো ঘরের চার্বা ই বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তাদের। রামগতির এমন লাখো মানুষের আত্ম কাহিনী জম্ম দিয়েছে একেকটি বিষাদসিন্ধুর।

এছাড়া অব্যাহত ভাঙনে ‘রামগতি থানা’ নামকাওয়াস্তে থাকলেও অক্টোপাসের মত ধরে ফেলেছে সর্বগ্রাসী মেঘনা।বাজারটির দক্ষিনাংশে বাকী নেই কোন স্থল ভূমি।ওঁৎ পেতে আছে বিবিরহাট ও রামদয়াল বাজারের মত জনাকীর্ন হাট বাজার ধ্বংসের নেশায়। ক্রমাগত আঘাত হানছে রামগতি আছিয়া বালিকা বিদ্যালয় ও রব্বানীয়া ফাযিল মাদ্রাসার মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোতে।খেয়ে ফেলবে ঐতিহাসিক ভবানিশাহার মঠও। ইংরেজ বেনিয়া নীলকরদের লোভনীয় বানিজ্য কেন্দ্র ও লবন আন্দোলন খ্যাত এ রামগতিকে শত বছর পূর্ব থেকে সরকার এবং এলাকার গুণি সন্তানরা সাজিয়েছেন আপণ মহিমায়।আজ সেই সাজানো গুছানো শান্তির আবাস ভূমির সবকিছু এক এক করে খেয়ে ফেলেছে মেঘনা। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে হারীয়ে গেছে রামগতি-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, সেবাগ্রাম বাজার, ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (সিন্নিরহাট), পল্লীমঙ্গল হাই স্কুলসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দিরের মত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

পাশ্ববর্তি উপজেলা কমলনগরেও থেমে নেই মেঘনার তান্ডবলিলা।ভাঙন মুখোমুখি হচ্ছে সাহেবের হাট,কাদির পন্ডিতের হাট,পাটোয়ারীর হাট,বাংলাবাজার,নতুন বাজার ও মাতব্বর হাট সহ উপজেলার অগনিত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দু’ শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাজ হলেও দুই উপজেলায় প্রায় চল্লিশ কিমি উন্মুক্ত উপকূলে ভাঙন চলছে জ্যামিতিক হারে। পূরো এলাকায় বাঁধ নির্মান না হলে আগামী কয়েক বছরের ব্যবধানে হারাতে হবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।ধ্বংস হয়ে যাবে উপজেলার প্রশাসনিক কাঠামো।মানচিত্র থেকে একদিন হারীয়ে যেতে পারে রামগতি-কমলনগরের নামও।

 

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

মেঘনায় ৩০ জেলের জরিমানা

বলিরপোল বাজারে আগুনে পুড়লো ৮ দোকান: দেড় কোটি টাকার ক্ষতি

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কোটি টাকার ক্ষতি

মেঘনা নদীতে পৃথক দুটি ডাকাতি মামলার আসামী মঞ্জু গ্রেপ্তার

জাটকা নিধন বন্ধে মেঘনায় নৌ র‌্যালি

রামগতিতে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস অনুষ্ঠিত

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com