নিজস্ব প্রতিবেদক:: লক্ষ্মীপুরে এবার সুপারির মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। চাষিদের অভিযোগ সুপারির আমদানি ও স্থানীয় সিন্ডিকেট বাজার দখল করায় দেশি সুপারির দাম ক্রমশ নিম্নমুখী। সুপারির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
জানা যায় আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দিন দিন এ অঞ্চলে বাড়ছে সুপারী চাষ। স্বল্প খরচে অতি লাভবান হওয়ায় বাড়ছে জনপ্রিয়তা। চলতি মৌসুমে সুপারীর বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই । কারণ এবার সুপারির দাম সব চেয়ে কম বিগত বছরের অর্ধেক।
লক্ষ্মীপুরের উৎপাদিত সুপারী যাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত বছর প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারী বিক্রি হয়েছিল ১৩’শ থেকে ১৫’শ টাকায়। যার পাইকারী বাজার মূল্য ১৬’শ থেকে ১৭’শ টাকা। কিন্তু এবার সে সুপারির দাম প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারী বিক্রি হয়েছিল ৮’শ থেকে ৯’শ টাকায়।ফলে অর্ধেক দাম ও পাচ্ছেনা কৃষক।
লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, মোল্লার হাট, রাখালিয়া বাজার, জকসিন বাজার, চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও ভবানীগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সুপারী কেনা-বেচায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন সুপারী চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছরের তুলনায় বাজার ধর কিছুটা কম হওয়ায় হতাশ কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
অনেক কৃষকদের অভিযোগ সুপারি আমদামি ছাড়াও বাজারে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সুপারীর দাম কমিয়েছে বলে অভিযোগ. সুপারী চাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। দালাল বাজারের সুপারী চাষী নিজাম জানান, এবার প্রায় ৩০ একর জমিতে সুপারী চাষ করেন তিনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর সুপারীর ফলন ভালো হওয়ায় খুশি হলেও ফলন অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় হতাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর মান্দারি বাজারের সুপারী ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, এ বছর তুলনা মুলক সুপারীর অনেক বেশী ফলন হয়েছে। তবে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে এবার দাম একটু কম।
ভবানীগঞ্জের সুপারি আড়তদার জানান, বিদেশি সুপারির আমদানি বন্ধ না হলে দেশি সুপারির বাজারে ধস নামবে। তিনি আরো জানান, দেশি সুপারি প্রতি ৮০টি সুপারি এবার ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, মান্দারি, জকসিন , চন্দ্রগঞ্জ এবং ভবানীগঞ্জ বাজারে সপ্তাহে ১০ কোটি টাকারও অধিক সুপারি বেচাকেনা হয়। এ সুপারি স্থানীয় আড়তদাররা সংরক্ষণ করে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করে থাকে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিককালে ভারত, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে সুপারি আমদানি করায় স্থানীয় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।যে জন্য এ বছর ভিজানো সুপারি ব্যবসায় ধস নামে। সে জন্য এবার সুপারির বাজার কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৬ হাজার ২’শ ৬৫ হেক্টর জমিতে সুপারীর আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে রায়পুর উপজেলায় ৩ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮শ ৭৫ হেক্টর, কমলনগরে ৩শ ৫০ ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ করা হয়ে থাকে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১২ হাজার ৫’শ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৩’শ কোটি টাকারও বেশী। বিগত বছরও একই লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দা নিজেদের বসতভিটায় সুপারি বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চলতি মৌসুমে এবার সুপারী বাম্পার ফলন হওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। নারিকেল-সুপারি আর সয়াবিন উৎপাদনে বিখ্যাত জেলা লক্ষ্মীপুর। অন্য চাষা বাদদের মত কোন রকম ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় সুপারি চাষের দিকে বেশী ঝুঁকেছেন তারা।
সুপারি চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত মৌসুমের চেয়ে এবার দ্বিগুণ ফলন হয়েছে। সুপারি মৌসুমি অর্থকরী ফসল। লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সুপারির আবাদ করে আসছেন। স্থানীয়ভাবে সুপারি কেনা-বেচার জন্য তিনটি বড় হাট রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন পলাশ জানান, এবার লক্ষ্মীপুরে আশানুরূপ সুপারির ফলন হলেও বিদেশি সুপারির আমদানিতে দেশি সুপারির বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ কারণে চাষিরা সুপারির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
বিদেশি সুপারিতে বাজার দখল, ভালো ফলনেও হতাশ চাষিরা”
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, উৎপাদিত এ সুপারী থেকে ৩’শ কোটি টাকারও বেশী আয় হবে, এখানে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থাকলে সুপারী বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো। তবে শীঘ্রই এ অঞ্চলে সুপারীর প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
0Share