সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিপন্নতার দিকে কমলনগর

বিপন্নতার দিকে কমলনগর

বিপন্নতার দিকে কমলনগর

little-journalistমো.জুনাইদ আল হাবিবঃ উপকূলের বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ জনপদ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কিংবা উপকূলের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন আর অনগ্রসর জনপদ থাকলেই এটিই অন্যতম।যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষের জন্মগত পাঁচটি মৌলিক অধিকারের কথা বলা থাকলেও কোনটিই বর্তমানে কার্যকর নয়।এই প্রান্তিকের বেশির ভাগ পরিবার দরিদ্রের বেড়াজাল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা।যার মূল কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ।প্রতিবছর একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে ঘাঁড় সোজা না করতেই আরেকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুক্ষীণ হতে হয় এই বিপন্ন জনপদের সাধারণ জীবিকার সন্ধানী মানুষগুলোকে।কমলনগরের প্রধান সমস্যা নদীভাঙ্গন। দীর্ঘ দিনের অনিয়ন্ত্রিত মেঘনার করাল তান্ডবে লক্ষ্মীপুরের
মানচিত্র থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে কমলনগর।ফলে, নদীভাঙ্গা মানুষগুলো ভিটে মাটি হারিয়ে বর্তমানে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও কেউ এখন খোলা আকাশের নিচে। কেউবা লক্ষ্মীপুর টু রামগতি মহাসড়ক এবং ভাঙ্গন কবলিত পার্শ্ববর্তী গ্রামে ঘনবসতি গড়ে তুলছে।অনিয়ন্ত্রিত নদীভাঙ্গনে কমলনগরের বহু সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা বর্তমানে মেঘনার রাক্ষুসে থাবায় বিলীন। এখনোও থামেনি মেঘনার রাক্ষুসে ভয়াবহ তান্ডব।এতে, মেঘনাতীরবর্তী হাজারো ব্যাক্তিগত,সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা মেঘনার করাল ভাঙ্গনের মুখে।সরকার লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভাঙ্গন রোঁধে বাঁধ নির্মাণে ১শ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকার বাজেট করলেও এখনো কমলনগরের উন্নয়নে প্রতিফলন হয়নি।নদীভাঙ্গা মানুষগুলো বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিলেও বর্তমানে তাদের আশ্রয়টিও স্থায়ী নয়। যেকোনো সময় আবারো আশ্রয়হীনতার কবলে পড়ার সম্ভাবনা শতকরা ৮৫%।বাস্তুহারা
পরিবারগুলোর সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নের পথে।আজীবন আত্বীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ থাকা স্বজনরা এখন বছরে একবারও দেখা করার সুযোগটা যেন হারিয়ে পেলেছে। অসহায় বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো এখন সৃষ্টি কর্তার করুণার দিকে তাকিয়ে আছে। এই অঞ্চলের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ায় হাজারো শিক্ষার্থী আলো হারা হয়েছে। অনেক শিক্ষক বেকার সমস্যায় বর্তমানে ঘুরপাক খাচ্ছেন। বিলীন হওয়া কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে মেঘনার পাড়ে টিনসেটের তলায় মাটিতে বিছানা বিছিয়ে পাঠদান করতে দেখা যায়। কি অন্যায় করেছে এই উপকূলের মানুষে ? কখন থামবে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন ? কখন হাসি ফুটবে বাস্তুহারা অসহায় মানুষগুলোর মুখে ? কোন দিন কাঁটবে এই উপকূলে বেকার সমস্যার সমাধান ? এছাড়াও এই উপকূলের প্রান্তিক জনপদের সমস্যাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ- ১*ঝুঁকি বেড়িবাঁধ ও অপর্যাতপ্ত বেড়িবাঁধঃ উপজেলার মেঘনাতীরবর্তী গ্রামগুলো প্রায়ই সময় জোয়ারের প্লাবনে পানি ডুকে পড়ে।উপজেলার চর মার্টিন ও চর কালকিনির মাঝামাঝি একটি বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।কোন ভাবেই সঠিক তত্ত্বাবধান হচ্ছেনা বেড়িবাঁধটির। এছাড়াও নদীতে জোয়ার আসলেই মার্টিনের কিছু রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এসব রাস্তায় বেড়িবাঁধ জরুরী। ২* আশ্রয় কেন্দ্রর অভাবঃ কমলনগরের চর কালকিনি,চর মার্টিন,চর লরেন্স,সাহেবের হাট,চর ফলকনসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে হাজারো মানুষ বিভিন্ন সময় ঘুর্নিঝড় মোকাবেলায় মোটেও প্রস্তুত নয়।মেঘনার অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গনে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বিলীন হওয়ায় কমলনগরে আশ্রয় কেন্দ্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে, যে কোন সময় ঘুর্নিঝড়ে প্রানহানি ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়।     ৩*ঝুঁকিপূর্ণ সড়কঃ তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার সড়ক, ইসলামগঞ্জ থেকে নাছিরগঞ্জ দীর্ঘ ৯ কিলোমিটার সড়ক, ৪নং চরমার্টিনের দক্ষিণ মার্টিন থেকে উত্তর মাটিন সড়ক অন্যতম। ৪* শিক্ষা বঞ্চিতঃ কমলনগরের
মধ্যমার্টিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে দেড় শতাধিক পরিবারের শিশু  শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত,মার্টিন ৩নং ওয়াডে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না
থাকায় শত পরিবারের শিশু শিক্ষা বঞ্চিত। ৫*বিধ্বস্ত সেতুঃ কালকিনি জনতা বাজার সংলগ্ন একটি এবং মধ্যমার্টিন বলিরপোল মুখি একটি এই মোট দুইটি সেতু বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ৬*জোয়ারে  ভাঙ্গা রাস্তাঃ ৪নং চর মার্টিন ইউনিয়ের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ প্রান্তে একটি রাস্তা দেড় বছর আগে বিধ্বস্ত হলেও এখনো মিলেনি সংস্কারের উদ্যেগ, গত ২১মে ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে কালকিনির ৫নং ওয়ার্ড অর্থাৎ ইউনিয়ন বাসীর প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম রাস্তাটি বিধ্বস্ত হয়ে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এখনো মিলেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন প্রয়োজনীয় বরাদ্দ।  ৭*বিধ্বস্ত সেতুঃ চর মার্টিন ৮নং ওয়ার্ডের হাজি শাহে আলম মেম্বারের দোকান ও উত্তর পশ্চিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মুখী একটি সাঁকো দীর্ঘ দিন বিধ্বস্ত থাকার কারণে এলাকাবাসী ও কোমলমতি প্রাথমিক বিদ্যালয় গামী শিক্ষার্থীদের বর্তমানে চলাচল বন্ধ। ৮*মৎস্য উধাওঃ গত ২১মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝুর্নিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে মার্টিন ৮নং ওয়ার্ড বাসিন্দা মাকছুদুর রহমান কিরণের পুকুরের প্রায় ৬০ হাজার টাকার মাছ উধাও হলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিলেনি কোন সহায়তা। ৯*ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ উপজেলার উত্তর পশ্চিম চর মার্টিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয়ে বর্তমানে শ্রেণী পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে।বিদ্যালয়ে নির্মাণকৃত টয়লেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিদ্যালয়ের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বর্তমানে সমস্যাগ্রস্থ।এসকল সমস্যাগুলোর মধ্যে তোরাবগঞ্জ
টু মতিরহাট সড়ক  পরিদর্শন করলে দেখা যায় মতিরহাট সংলগ্ন সড়কটির পাশ দিয়ে ঘেষে গেছে একটি খাল।এ কারণে সড়কটির বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে,জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী যানবাহন ও এই উপকূলের হাজার হাজার স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

এ সর্ম্পকে উপজেলার বলিষ্ট কণ্ঠস্বর,মার্টিন ইউনিয়নের তরুণ সমাজ সেবক মাকছুদুর রহমান মানিক জানান,আমাদের কমলনগর উপকূলের মধ্যে অনগ্রসর হওয়াতে  এলাকাকে বর্তমানে অন্ধকার জনপদ হিসেবে চিহ্নিত করায় অধিক শ্রেয়।  কারণ,এলাকায় বর্তমানে কোন সমস্যার সঠিক সমাধান হচ্ছেনা।এলাকায় বর্তমানে সামাজিক অপরাধ লক্ষ করার মতো।আমি আশা করি সরকার এই বিপন্ন জনপদের সমস্যাগুলো অনতিবিলম্বে আমলে নিবে।    বিষয়টি সর্ম্পকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম মজুমদারদের সাথে আলোচনা করা হলে তিনি জানান,বিশেষ করে উপজেলার মেঘনাতীরবর্তী চরমার্টিন,চর কালকিনি,চর লরেন্স,চর ফলকন,সাহেবের হাট এলাকাগুলোর সমস্যা সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসছি।আশা করি সবার সহযোগীতায় কমলনগরের সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে।  প্রিয় পাঠক বাংলাদেশের উপকূলের মধ্যে কমলনগরের মেঘনার ভাঙ্গন সমস্যার ফলে বর্তমানে এই এলাকার সমস্যাগুলো প্রতিক্ষণ বেড়েই চলছে।উপজেলার তালতলি বাজার বর্তমানে হচ্ছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে উপজেলার মতিরহাট বাজার,নাছিরগঞ্জ বাজার,কালকিনি জনতা বাজারসহ বহু সরকারী -বেসরকারী স্থাপনা হুমকির মুখে।এসকল সমস্যা প্রভাবিত
করছে ধনী-দরিদ্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবনে। এই উপকূলের শিক্ষার্থীদের জীবনকেও প্রভাবিত করছে। বন্যায় অনেক সময় বিদ্যালয় থেকে
বাড়ি ফেরার পথে আহত হয়ে কিংবা বই ভিজিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।এসব সমস্যা হয়তো শহরের শিক্ষার্থীদের জীবনকে প্রভাবিত করছেনা। ফলে,পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা এই উপকূলের পড়ুয়ারা।ঝুঁকিপূর্ণ বিধ্বস্ত সাঁকো,বিধ্বস্ত রাস্তা কিংবা ভাঙ্গা সেতু অতিক্রম করে বাড়ি ফেরা যে কতটা কষ্টসাধ্য তা হয়তোবা দূর্ভোগে পড়া মানুষগুলোই ভালো জানেন।  তাই অনতিবিলম্বে এই ঝুঁকিপূর্ণ বিপন্ন উপকূলের সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে প্রশাসন সমাধান করবেন এমনটাই প্রত্যাশা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুরবাসীর।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com