সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বুধবার , ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যোগ্যতার মাপকাঠি যখন গায়ের রঙ...

যোগ্যতার মাপকাঠি যখন গায়ের রঙ…

যোগ্যতার মাপকাঠি যখন গায়ের রঙ…

সানজিতা শারমিনস্বামী স্ত্রী দুজনের গায়ের রঙের দিক থেকে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একজন একদম ফর্সা অন্যজন একদম কালো(!)। বলছিলাম আমার বাবা-মায়ের কথা। জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা ভাইবোনের ও বাবা অথবা মা অথবা আমাদের বংশের কারো মত হওয়াই স্বাভাবিক। সেদিক থেকে আমি পেয়েছি আমার মায়ের গায়ের রঙ অর্থাৎ শ্যামবর্ণ (কালো)। আমার রঙ নিয়ে আমার বা আমার বাবা মা কারোরই কোন মাথাব্যথা ছিল না কখনো।

লেখক; সানজিতা সারমিন

১. আমি আর আমার মা ছাড়া আমার বাড়ির সবাই ফর্সা(সুন্দর)। এখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা দুজন সবার থেকে আলাদা। খেলতে গেলেও আমি কালো বলে আমার কাজিনরা আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত অথচ আমি খেলতাম ও ভাল আর খেলার সামগ্রীও আমার। আম্মু স্কুল থেকে ফিরলে কেঁদে কেঁদে কত নালিশ করতাম যে তারা আমাকে কালো বলে ক্ষেপায়। কিন্তু আমার মা হাসিমুখে সব সময় বলত ওরা তোমাকে মিথ্যে কথা বলে মা। তুমি খুব সুন্দর। মন খারাপ কর না। ওদের সাথেও খারাপ ব্যবহার কর না যাই হোক শৈশব আমার ‘কালো মেয়ে’ শব্দটি শুনতে শুনতেই কাটিয়ে দিয়েছি। ওদেরই বা দোষ কি সারা বাড়ির সবাই ফর্সা এক আমি ছাড়া। স্বাভাবিকভাবেই তারা আমাকে অবহেলা করবে। প্রাইমারী লেভেললে আমি আমার সম বয়সী বাচ্চাদের মুখে শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমি কালো এবং অসুন্দর।

২.

প্রাইমারীর গণ্ডি পেরিয়ে যখন আমি মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম আমার চলার পথ আরো বড় হয়ে গেল তখন এই শব্দটি আমি আগের চেয়ে বেশি শুনতে লাগলাম। ভেতরে ভেতরে ভীষণ কষ্ট পেতাম। বাবা তখন স্কুল কমিটির সদস্য। বাবাকে এলাকার সবাই চিনে। স্কুলেও উনার মেয়ে হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেলাম। অনেককেই বলতে শুনতাম মেয়েটা বাবার মত হলনা। বাবা কত সুন্দর। একদিন বাবাকে বললাম বাবা আমি কি খুব বিশ্রী দেখতে সেদিন তিনি আমার মাথাটা উনার বুকে চেপে ধরে বলেছিলেন ‘তুমি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়ে। যারা এসব বলে তাদের জ্ঞান বুদ্ধি কম মা। মানুষ সুন্দর হয় তার আচার আচরণে, কর্মে’। আমার মন ভাল হয়ে গেল। বহুদিন আমার মন খারাপ হয়নি এ ব্যাপারে। বাবার কথা মাথায় এলেই আমি নিজেকে ঠিক করে নিতাম এই ভেবে যে বাবার কথাই ঠিক। কিন্তু প্রতিনিয়ত এসব শুনতাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে। এক শুধু কলেজের সময়টাতে কেন জানি এসব কথা আমি শুনিনি। হয়ত ওখানে আমার চেয়েও কালো বর্ণের কেউ ছিল নয়ত বাবা এবং আমাকে পাশাপাশি কেউ দেখেনি।

৩.

নার্সিং কলেজে এডমিশন ফর্ম তুলতে শহরে গেলাম। তো সেখানেই আমার ফুফুর বাসা। আমার ফুফু ভীষণ সুন্দরী(ফর্সা) মানুষ.। তো উনার মেয়েরাও উনার মত। বাবাকে আমার এক বোন সরাসরি বলেই ফেলেছে মামা আপনি কত সুন্দর কিন্তু আপনার মেয়েটা এমন বিশ্রী কেমনে হল। সেই আপুটা তখন একটা গভমেন্ট জব করে বিদেশে ছিল বহুবছর। পড়াশোনা ক্যারিয়ারেও অনেক এগিয়ে। আমার ভীষণ লজ্জা লাগল যে সে আমার সামনে না বললেও পারত। বাবা চুপ করে থেকে উঠে সোজা আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন। অতিরিক্ত রেগে গেলে বা কষ্ট পেলে আমার বাবা কথা বলতে পারেন না। এই আপু আমাকে এখনো খুব আদর করেন কিন্তু আমি সেদিনের কথা আজ ও ভুলতে পারিনা। সে যতই আদর করুক দগদগে ঘাটা আমার শুকায়নি। হয়তো বাবার ও না। অথচ আমার মা বাবাকে ভীষণ ভালবাসে আপুটা।

৪.

আমি একটা নামীদামী অর্গানাইজেশনেও জব করেছি। একদিন বাবা আমাকে দেখতে গেলেন আমার কর্মক্ষেত্রে। সেই দেখতে যাওয়াটা আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমার অফিসের অধিকাংশই আমাকে বলেছে আমি এমন কেন? বাবার মত কেন না। এর কোন উত্তর কোন দিন ও আমি দিতে পারিনি। যদিও উত্তর দেবার মত উত্তর আমার কাছে ছিল।

৫. অবশেষে আমার বর্তমান কর্মক্ষেত্র ও এর ব্যতিক্রম রইল না। একদিন কোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার অফিসার স্থানীয় একজন বললেন নিজে তো পরিষ্কার নও। কাজে কর্মে অন্ততপক্ষে পরিষ্কার থাকো। অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই বললেন ভুল কিছু তো বলিনি তুমি কি অমুকের মত ফর্সা?! আমি এতটাই শকড হয়েছি যে উনাকে বলার মত কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু এতটুকু বলেছি আপনার সার্টিফিকেট গুলো একেকটা সাদা কাগজ। উপরের কথাগুলো জাস্ট উদাহরণ।

কতটা মানসিক নির্যাতন করা হয় একটা কালো মেয়েকে। অথচ আমার গায়ের রঙ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। ছিলও না। আমি কখনো বাজার থেকে হাজারটা রঙ ফর্সাকারী ক্রীমের ভেতর থেকে একটা ক্রীম কিনিনি। নিজেকে ফর্সা রাখার জন্য আলাদা কোন যত্ন আমি জীবনে নেইনি। কারণ আমার বাবা মা আমাকে আমার পড়া কোন বই আমাকে শেখায়নি যে গায়ের রঙ কোন যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে। এই আমি করিনা দৈনন্দিন এমন কোন কাজ নেই। আমার একাডেমিক ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট কেউ দেখল না। আমি যথেষ্ট ভাল রান্নাবান্না পারি। নিজে নিজে ইউটিউব থেকে দেখে দেখে অথবা কোথাও কোন কিছু দেখলে বাসায় বসে বসে তৈরি করি।

আমি সেলাইয়ের কাজ জানি, আমি হ্যান্ডিক্রাফটের বিভিন্ন কাজ জানি। আমার নিজের জামা আমি নিজে তৈরি করি। হোস্টেলে আমার নিজের ইউনিক ডিজাইনের জামা বানানোর জন্য একটা সুনাম ছিল। আমি বাজার করতে জানি, আমি দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নির্দ্বিধায় ছুটে বেড়াতে পারি কারো উপর নির্ভর না করেই। আমি একটা সরকারী চাকুরী করি, আমার নিজের ভরণপোষণ আমি নিজেই করতে পারি, কারো কাছে আমার হাতপাতা লাগে না কোন কিছুর জন্য।

আমি চাইলেই অন্য একজন মানুষকে আমার সাধ্যমত সাহায্য করতে পারি। আমি আমার জীবনে মায়ের হাত ধরে প্রায় হাজার দুই বই পড়ে ফেলেছি। যা আমার আচরণ চিন্তাভাবনাকে আরো শানিত করেছে বাস্তব জীবনে। কম্পিউটারের সমস্ত অফিসিয়াল অপারেটিং ইন্টারনেট ব্রাউজিং চমৎকার ভাবে পারি। অথচ এত কিছু জানা বা পারা সত্ত্বেও আমার যোগ্যতার মাপকাঠি আমার গায়ের রঙ!!! আমি ব্যক্তিজীবনে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসধারী মেয়ে। হতাশা আমাকে কখনো ছোঁয় না। জীবনে অনেক সমস্যা আমি কাটিয়ে উঠেছি কখনো আমাকে কিছুই ভেঙে ফেলতে পারেনি। আমার লেখা দেখে ভাবার কারণ নেই আমি গায়ের রঙ নিয়ে কষ্টে আছি।

কিন্তু আমি মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি তাদের আচরণে। আমার আত্মীয় হোক অনাত্মীয় হোক আমি ভেবে পেতাম না কি করে মানুশ এক জন আরেকজনকে গায়ের রঙের জন্য দোষারোপ করতে পারে।

লেখাগুলো সানজিতা সারমিনের ফেসবুক থেকে নেয়া

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

কৃত্রিম ভুলুয়া এখন রামগতি ও সুবর্ণচরের দানব

শতবর্ষী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

রিপোজটরি সাইট গিটহাবে বাংলাদেশী ডেভেলোপার আরমান হাকিম সাগরের কান্ট্রিবিউশন

নিবন্ধনের জন্য প্রথমদিকে আবেদিত নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন পেতে আর কত বছর?

স্বামীকে গলাকেটে হত্যা | ঘটনার এপিঠ-ওপিঠ

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশেও জেন্ড সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com