সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে ধর্মঘটী পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থী, গাড়ির চালকসহ নানা শ্রেণির মানুষ লাঞ্ছিত হয়েছে রোববার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় একটি কলেজ বাসের চালকের মুখে পোড়া মবিল মেখেছে এবং শিক্ষার্থীদের গায়ে পোড়া মবিল ছুড়ে মেরেছে শ্রমিকরা।
একই স্থানে তারা প্রধানমন্ত্রীর এক ব্যক্তিগত সচিবের গাড়ি আধাঘণ্টা আটকে রাখে।
পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইলসহ বিভিন্ন স্থানে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা দফায় দফায় লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্যা তাসলিম হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা যাওয়ার সময় শিমরাইল মোড়ে প্রধানমন্ত্রীর পিএস-১ সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় শ্রমিকদের কবল থেকে রক্ষা পায় গাড়িটি।
“পরে আমরা খবর পেয়ে তার গাড়ি উদ্ধার করে মেঘনাঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেই।”
শ্রমিকদের বাধা থেকে অ্যাম্বুল্যান্সও রক্ষা পায়নি। রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিব বলেন, দুপুর ১২টার দিকে শিমরাইলে তাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাস পরিবহন শ্রমিকেরা আটকে দেয়। এ সময় শ্রমিকরা ওই বাসের গ্লাস ভাংচুর করে এবং চালক মজিবুর রহমানের মুখে পোড়া মবিল মেখে দেয়।“এ সময় বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের দিকে পোড়া মবিল ছুড়ে মারে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কালেজ ড্রেস নষ্ট হয়েছে।”
যারা ছাত্রীদের গায়ে কালি ছুড়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, “শ্রমিকরা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িতে ঢিল ছুড়ে ভাংচুর করেছে বলে শুনেছি। পরিবহন শ্রমিকের ছোড়া পোড়া মবিল ছাত্রীদের গায়ে লেগেছে।”
তবে কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে পরিবহন বন্ধ থাকায় অফিসগামীদের পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রোগীদের স্বজন ও বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রীরা ভিড় জমায়। টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ ও বাস গুলো এলোপাতাড়ি পড়ে থাকায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বিকল্প পরিবহনের খোঁজ করে। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশায় গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাস চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা সড়ক পরিবহন আইন পাস করে।
ওই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেগুলো বাতিল করার দাবি তুলেছে পরিবহন শ্রমিকরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা।
এই দাবিতে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
0Share