লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে চাঞ্চল্যকর শিশু কুলছুম (১০) হত্যা মামলার ঘটনার পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআই’কে আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে এ মামলায় লিগ্যাল এইড কর্তৃক নিযুক্ত বাদীপক্ষের আইনজীবি হাছান আল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে রবিবার (২০ডিসেম্বর) দুপুরে মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামী সনাক্ত না করেই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষের না রাজি আবেদন মঞ্জুর ক্রমে মামলাটি পুনঃতদন্তের এ আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত রামগতি এর বিচারক নুসরাত জামান।
নিহত শিশু কুলছুম উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান-হোসেন গ্রামের আবদুল কাদের ও বিবি জাবেদা’র মেয়ে। সে একই ইউনিয়নের গোলাপ রহমানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
মামলা ও স্থাানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ মে বিকেলে প্রতিদিনের ন্যায় খেলাধুলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন শিশু কুলছুম আক্তার। ৫ দিন পর অর্থাৎ ২০ মে ২০১৭ দুপুরে কুলছুমদের বাড়ী থেকে মাত্র প্রায় ৫০০ গজ দূরে পার্শ্ববর্তী মুরাদ মিয়ার ছাড়াবাড়ী থেকে কুলছুমের টুকরা করা অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, অজ্ঞাত কারণে সেই লাশ ময়নাতদন্ত না করে লাশ ফেলে চলে যায় পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে কুলছুমের পরিবার ও এলাকাবাসী পুলিশের উদ্ধারকারী ব্যাগসহ কুলসুমের টুকরা করা অর্ধগলিত লাশ দাফন করেন।
পরবর্তীতে এ বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার ও প্রকাশিত হলে এবং কুলছুমের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের লাশ উদ্ধার ও লাশ ফেলে আসার ঘটনা বাদ দিয়ে ওই বছরের ২৪ মে রামগতি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। তৎকালীন ওসি ইকবাল হোসেন ও এসআই মোঃ সাইদুর রহমানকেই মামলাটির তদন্তভার প্রদান করেন।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিাতিতে কবর থেকে কুলছুমের লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয় এবং ভিকটিম সনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়।
ইতোমধ্যে মামলার অনেক আলামত নষ্ট হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও মামলার তদন্তেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। পরে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে অর্পন করে পুলিশ হেড কোয়ার্টার।
সিআইডিতে স্থান্তারের পর কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হলেও বদল হয়নি মামলার তদন্তের অবস্থা। ইতোমধ্যে সিআইডি এ মামলায় রিয়াজ ও গিয়াস উদ্দিন নামের ভিকটিমের দুই প্রতিবেশীকে আসামী হিসাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েও কোন ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত রহস্য উদঘাটন ও আসামী সনাক্তে না করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন সিআইডি।
এদিকে বাদী দরিদ্র ও মামলার খরচ জোগাড়ে অক্ষম হওয়ায় আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থাা, লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটি বরাবরে আবেদন করেন। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী জজ ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী উক্ত মামলাটিতে বাদীকে আইনগত সহায়তা দেয়ার জন্য প্যানেল আইনজীবি হাছান আল মাহমুদকে নিয়োগ প্রদান করেন।
নিয়োগ প্রাপ্তির পর আইনজীবি বাদি পক্ষের আরজী, ১৬১ ধারার জবানবন্দীসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনাক্রমে সিআইডির দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন।
আদালত সরকার পক্ষ, লিগ্যাল এইড কর্তৃক নিযুক্ত বাদীর আইনজীবি ও সন্দিগ্ধ আসামীপক্ষের আইনজীবিগণের শুনানী শেষে সিআইডির দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না মঞ্জুর করে এবং বাদীর নারাজি আবেদন মঞ্জুর ক্রমে পিবিআই নোয়াখালীকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ প্রদান করেন।
0Share