চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সরকারি চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিশনের প্রধান কে হবেন? সঙ্গে কারা কারা থাকবেন তার কোনো তথ্য এখনও জানানো হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
একইসঙ্গে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অনুমতি দেয়া-সংক্রান্ত ধারাটি (১৯৮২ সালের দ্যা মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরি (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্সের ৪ ধারা কেন অসাংবিধানিক, বে- আইনি ও অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার নিবন্ধিত কোনো চিকিৎসকরা তাদের অফিস সময়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেনের (বিএমএ) সভাপতিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা-সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহসান ও কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান, সরকারি চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে সরকারি ডাক্তারদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
আইনজীবীরা হলেন- আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সালাহ উদ্দিন রিগ্যান, সুজাদ মিয়া, আমিনুল হক ও কাউছার উদ্দিন মন্ডল। আবেদনে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতিকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে সরকারি চিকিৎসকদের সম্পূর্ণরূপে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের সব কার্যক্রম তদারকি করার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
একইসঙ্গে, রিট আবেদনে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা গঠনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আরজি জানানো হয়েছিল।
এর আগে অফিস সময়ে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধে গত ২৯ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
নোটিশে বলা হয়েছিল, সরকারি চিকিৎসকদের থেকে চিকিৎসা পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সম্প্রতি নিজ কর্মস্থল সরকারি হাসপাতাল রেখে অনেক চিকিৎসক তার ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের কর্মঘণ্টা চলাকালে সরকারি চিকিৎসকদের এমন অসদাচরণ আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাই সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের এই নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আজ রিটের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন আদালত।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, ২৮ জানুয়ারি তারিখে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাকের অবহেলায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ান এবং সালাহ উদ্দিন রিগ্যানের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সোমবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় মো. বাবুল হোসেন (৪০) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি কার্ডিওলোজি সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু ঘটনার সময় হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক (কনসালটেন্ট কার্ডিওলোজি) ভবাণী প্রসাদ রায় উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তার ব্যক্তিগত চেম্বার দক্ষিণ তেমুহনী এলাকায় ছিলেন। তার অনুপস্থিতির কারণেই রোগী মারা গেছেন বলে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
0Share