তাবারক হোসেন আজাদ: প্রায় ৭ বছর ধরে সড়ক ও জনপথের রায়পুরের কার্যালয়টি পরিত্যক্ত। রাতে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ অসামাজিক কর্মকান্ড চলে। রামগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়টির একই অবস্থা। অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে চত্বরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে সংকুচিত হয়ে এসেছে কার্যক্রম। রামগতি উপজেলা কার্যলয়টি নদীতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া এলজিইডিতে গুরুত্ব বাড়িয়ে সওজ থেকে কর্তৃপক্ষের নজর সরিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সওজ লক্ষ্মীপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭৪টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩২টি। শূন্যপদগুলো হলো- উপ-সহকারী প্রকৌশলী ৩ জন, সহকারী প্রকৌশলী ২ জন, উচ্চমান সহকারী ৩ জন, ওয়ার্ক সুপাভাইজার ২ জন, সিনিয়র হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা ১ জন, অফিস সহকারী ৩ জন, দপ্তরী ১ জন, ড্রাফ্স ম্যান ১ জন, বিটুমিন মেস্তরী ২ জন, স্টক গার্ড ৫ জন ও মালি ২ জন। বিভাগীয় অফিস ১টি, উপ-বিভাগীয় অফিস সদর ও রামগঞ্জ, সেকশনাল অফিস ৪টির মধ্যে সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, চরআলেকজেন্ডার। প্রায় ১২ দিন আগে ১২জন শ্রমিক নতুন যোগদান করেন। তাও তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ্য, কেউ বৃদ্ধ। রামগঞ্জ উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ে ১৫ কর্মরত থাকার কথার থাকলেও তারা সদরই দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) অনুসন্ধানে দেখা যায়, রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের রায়পুর শহরের বাসটার্মিনাল ও থানার মধ্যখানে কার্যালয়টি অবস্থিত। প্রায় ৫ বছর ধরে এ কার্যালয়ে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকে না। যার ফলে রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আড্ডা ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপসহ মানুষ মল-মূত্র ত্যাগ এবং সিএনজির স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের আটকও করছেন।
রামগঞ্জ কার্যালয়টি রামগঞ্জ-সোনাপুর সড়কের ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। সেখানেও কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকে না। সবাই সদরে বসে দায়িত্ব পালন করছেন। রাতের বেলায় অসামাজিক কার্যকলাপের স্থানে পরিণত হয়েছে।
রামগতি উপজেলার আলেকজেন্ডার কার্যালয়টি প্রায় ৭ বছর আগে নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। কাগজে কলমে সেই কার্যালয়ের নাম থাকলেও তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সদর কার্যালয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেন।
৪ টি উপজেলার উপবিভাগীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক উন্নয়নে ব্যবহৃত দুটি রোলার, একটি বিটুমিন ও পাথর মিকশ্চার মেশিন, একটি ট্রাক ও একটি গাড়ি অফিস চত্বরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে জরুরি প্রয়োজনে ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতের স্টিলের রেলিং, প্লেটসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। স্থানীয় ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, কার্যক্রম না থাকায় অফিস ভবনের পাশাপাশি বিভিন্ন মালামাল ও যন্ত্রপাতিসহ প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন মালিক জানান, শুধু লক্ষ্মীপুরেই নয়, পুরো দেশেরই সড়ক বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে ১৯৯৬ সালের পর। তৎকালীন সরকার গ্রাম উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নিতে সড়ক বিভাগকে মন্থর বানিয়ে এলজিইডিকে সক্রিয় করে তোলে। ক্রমেই বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ জেলার উপজেলা শাখা অফিসের কার্যক্রম।
তারা আরো বলেন, এলজিইডিকে সক্রিয় করতে সড়ক বিভাগের অনেক রাস্তা কেটে ওই দপ্তরের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে কমে গেছে টেন্ডার, বিভিন্ন ধরনের কাজের ফান্ড। এ পরিস্থিতিতে অনেক ঠিকাদারই সড়ক বিভাগের কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন। কাজ করে ঠিকমতো বিল না পাওয়ারও অভিযোগ অনেকের।
লক্ষ্মীপুর সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত জানায়, এখানে বর্তমানে পুরো জেলায় ৭৪ জনের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে আছে মাত্র ৪২ জন। ৭ জন উপসহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ। লোকজন না থাকায় অফিস ভবনের পাশাপাশি কোয়ার্টার ভবনগুলোও সংস্কারের অভাবে প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।
0Share