সানা উল্লাহ সানু: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদমর্যদা দ্ধিতীয় শ্রেণীতে উন্নিতকরণ ও প্রকৌশলীর সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অন্তর্ভুক্ত করে ২০০৮ সালের বিতর্কিত গেজেট সংশোধন এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশের পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট গুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে। কয়েক দিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রবিবার প্রায় সারাদেশের সকল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট গুলো আন্দোলন হয়েছে। এতে ছাত্র,শিকক্ষক পুলিশসহ দুইশতাধিক আহত হয়েছে এবং কমপক্ষে অধশত গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। সারাদেশের পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট গুলোর আন্দোলনের উপর লক্ষ্মীপুর টুয়েন্টিফোর ডটকমের সংকলিত প্রতিবেদন।
লক্ষ্মীপুর:লক্ষ্মীপুরের ঝুমুর হলের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় রবিবার দুপুরে পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এতে ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দুই দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বোর্ড সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের ঝুমুর সিনেমা হলের সামনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ ও টায়ারে অগ্নি সংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সদর থানা পুলিশ আন্দোলনকারীদের অবরোধ তুলে নিতে বলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ৬/৭টি সিএনজি অটোরিক্সা, তিনটি ট্রাক ও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।এতে ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও লক্ষ্মীপুর আধুনিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ফয়সাল, সবুজ, দীপ্ত ও রবিন নামে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ওপর হামলা করায় পুলিশ যা করার দরকার ছিল তাই করেছে।
চাঁদপুর:পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সারাদেশের পলিকেটনিক কলেজে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের জুনিয়র পক্ষ ও সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষোভ করতে আসে। এ সময় ছাত্রলীগের সিনিয়র পক্ষের সভাপতি আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ তাদের কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের ১০জন আহত হন।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে কাগজপত্র তছনছ করে তাতে আগুন দেন। সংঘর্ষে ১০ জন পুলিশসহ ২০ জন আহত হন।
কিশোরগঞ্জ: পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারসেল ছুড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০জন আহত হয়েছে।
সাভার: দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদমর্যদা দ্ধিতীয় শ্রেণীতে উন্নিতকরণ নিশ্চিত করার দাবীতে সাভারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষানবীশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। তারা সকালে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা মোড়ের সামনে অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করে। বেলা ১১ টায় পৌরসভার মজিতপুর থেকে স্থানীয় কয়েকটি বেসরকারী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি পাকিজা মোড়ের সামনে এসে পৌছালে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১ ঘন্টা অবরোধের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিলে পুনরায় যানচলাচল শুরু হয়। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন অঅটকে পড়ে। ফলে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বরিশাল: নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে একটি বিআরটিসি বাসে ভাংচুর চালিয়েছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে বাস সুপার ভাইজার ও ড্রাইভারসহ অন্তত ১৫যাত্রী আহত হয়েছেন। রবিবার বেলা ১২টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বীকৃতিসহ দুই দফা দাবিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রোববার সকাল নয়টা থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা স্থগিতের দাবিতে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ বাধা দেয়ার চেস্টা করলে এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষর্থীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ মিছিল করে এ ভাংচুর চালায়। বরিশাল বিআরটিসির টাফিক ইনেসপেক্টর জুলফিকার আলী জানান, খুলনা থেকে (ঢাকা মেট্রে ব ১১-২৭৭১) বাসটি ৪০জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল ডিপোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এক পর্যায়ে বাসটি সিঅ্যান্ডবি রোডে গিয়ে পৌঁছালে অপরপ্রান্ত কাশিপুর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা মিছিল থেকে এলোপাতারি ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
পটুয়াখালী: দুই দফা দাবিতে পটুয়াখালী পলিটেকনিক কলেজের শিাক্ষার্থীরা ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত ছাত্ররা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, কাপ্তাই (রাঙামাটি), ঠাকুরগাঁও,গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও করিমগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
0Share