সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশের ইলিশ

বাংলাদেশের ইলিশ

বাংলাদেশের ইলিশ

ইলিশের জীবনচক্র বৈচিত্র্যময়। এরা সাগরের লোনা পানিতে বসবাস করে; প্রজনন মৌসুমে ডিম দেয়ার জন্য উজান বেয়ে মিঠা পানিতে চলে আসে। একটি ইলিশ ৩-২১ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। মিঠাপানিতে ডিম দেয়ার পর ২২-২৬ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয় এবং ৫-৭ মাস এরা নদীতে থাকে। পরে আবার সাগরের দিকে ধাবিত হয়।

ইলিশ ১-২ বছর বয়সে (২২-২৫ সেন্টিমিটার আকারে পুরুষ; ২৮-৩০ সেন্টিমিটার আকারের স্ত্রী) প্রজননক্ষম হয়। তখন এরা আবার মিঠা পানির দিকে অভিপ্রায়ণ করে। ইলিশ সারা বছরই কম-বেশি ডিম দেয়; তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরই হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। অক্টোবর অর্থাৎ আশ্বিন মাসের প্রথম পূর্ণিমার ভরা চাঁদে এরা প্রধানত ডিম ছাড়ে।

(২০১৮) মা ইলিশ সুরক্ষায় আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগের ৪ দিন এবং পরের ১৭ দিন (৪+১+১৭) অর্থাৎ ২২ দিন (৭-২৮ অক্টোবর) ইলিশ আহরণ, বিতরণ, বিপণন, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হয়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, এ সময় প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ছিল ৯৩ ভাগ এবং এর মধ্যে ৪৮ ভাগ পরিপক্ব মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। ইন্সটিটিউট পরিচালিত গবেষণা ফলাফল অনুযায়ী গত বছর ২২ দিন মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকরণের ফলে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। এতে ৫০ ভাগ ডিমের সাফল্যজনক পরিস্ফুটন হলে এবং এর ১০ ভাগ বেঁচে থাকলে ৩৫ হাজার কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে দেশে ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে নিু মেঘনা নদী, শাহাবাজপুর চ্যানেল, তেঁতুলিয়া নদী, নিু পদ্মা নদী এবং বরিশাল জেলার সদর, হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কালাবদর নদী, গজারিয়া ও মেঘনা নদীতে (৮২ কিলোমিটার) মার্চ-এপ্রিল মাসে মাছ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইলিশের মোট আয়ুষ্কাল ৫-৭ বছর। আহরিত ইলিশের ৯০ ভাগ ৩০-৫০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মোট তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়; এর মধ্যে দুটি (চন্দনা ও গোর্তা ইলিশ) সারা জীবন উপকূল ও সাগরে কাটায় এবং অপর একটি মিঠা পানি ও লোনা পানিতে জীবন অতিবাহিত করে। ইলিশ স্রোতের বিপরীতে দৈনিক ৭০ কিলোমিটার অভিপ্রায়ণ করতে পারে। পৃথিবীর মোট ১১টি দেশে বর্তমানে ইলিশ পাওয়া যায়।

দেশগুলো হচ্ছে : বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৭০-৭৫ ভাগ বাংলাদেশ আহরণ করে; দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিয়ানমার এবং তৃতীয় অবস্থানে ভারত।

ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া অপর ১০টি দেশেই ইলিশ উৎপাদন কমেছে। সুষ্ঠু ও সঠিক ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল বাস্তবায়নের কারণে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণা তথ্যমতে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

পদ্মার শাখা নদী মহানন্দা ও তিস্তা নদী এবং মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়, গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে মৎস্য অধিদফতর, প্রশাসন ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় দেশব্যাপী ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বেড়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৭-১৮ সালে তা ৫.১৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ, যা বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য।

বাংলাদেশে ইলিশ প্রধান জেলা হল ১৭ টি।দেশের ইলিশ প্রধান ৮৫ টি উপজেলায় দুই লক্ষ ৩৮ হাজার জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চার মাস ধরে চাল দেয়া হয়েছে।

সেখানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে – যেমন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং মার্চ-এপ্রিলে ডিমের মৌসুমে – মা ইলিশ আর অপ্রাপ্তবয়স্ক জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধ।

২০০৩ সালের দিক থেকে বাংলাদেশে ইলিশ সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে।

ইলিশ উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশও বর্তমানে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে। গত ২০১৬ সালে ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের।

ইলিশ মাছের চর্বিতে প্রায় ৫০ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। ওই ফ্যাটি এসিডের প্রায় ২ শতাংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা মানবদেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া ইলিশের আমিষে ৯ ধরনের অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়, যা মানুষের পাকস্থলী তৈরি করতে পারে না। ইলিশের চর্বিতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ থাকে। এ জন্য ইলিশ স্বাস্থ্যবান্ধব মাছ হিসেবে অধিক পরিচিত।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেবে ১৫ বছর আগে দেশের ২৪ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও ডুবো চর এবং পদ্মা ও মেঘনার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে ইলিশের মিঠা পানিতে আসতে বাধা ও ইলিশের গতি পথ পরিবর্তন হচ্ছে।

 

মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দী পয়েন্ট, তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গণ্ডামার পয়েন্ট।

মা-ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরিয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপউর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী , মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীতে এসময় সকলপ্রকার মাছধরা বন্ধ থাকবে।

 

কৃষি | অর্থনীতি আরও সংবাদ

ডাকাতিয়া নদ ও খালে পানি নেই | বোরো নিয়ে চিন্তায় চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা

জাটকা নিধন বন্ধে মেঘনায় নৌ র‌্যালি

রামগতিতে বোট নিবন্ধনের লক্ষ্যে জেলেদের নিয়ে কর্মশালা

অবৈধ জাল অপসারণে রামগতিতে বিশেষ অভিযান

রামগতিতে অবৈধ জাল পুড়িয়ে বৈধ জাল বিতরণ

রামগতিতে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com