প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৎস্য চাষে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে উন্নত ও আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বুধবার ( ২২ জুলাই) গণভবন লেকে পোনামাছ অবমুক্ত করে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২০’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
কিন্ত নদী, খাল, বিল, পুকুর আর দিঘী সমৃদ্ধ জেলা লক্ষ্মীপুরে শতাধিক প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ওইসব মাছের স্বাদ ভুলে যাচ্ছে জেলাবাসি। আর বর্তমান প্রজন্ম দেশী মাছ বলতে এখন পাঙ্গাস আর তেলাপিয়াকেই জানছে। কারণ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ায় এখন চাষের তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, রুই, সিলভার ইত্যাদি কার্প জাতীয় বাণিজ্যিক চাষের মাছের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ।
কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবায় প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মিষ্টিপানির মাছ পাওয়া যেতো।
স্থানীয়রা জানান, বিলুপ্ত হওয়া মাছের এলাকা ভিত্তিক নাম মেনি (ভেদা),পাবদা, বাইন, রয়না, খৈলশে,সরপুঠি, টেংরা,বেলে,ষোল, বোয়াল, গজাল, তিতপুঠি, চান্দা, পাতা চেলা, মলা, ঢেলা, চাঁন্দা, কাঁচকি, টাকি, বেলে, গুলশা, বাতাশি, কাজরি, চাপিলা, কাকিলা, কুচো চিংড়িসহ প্রভৃতি মাছ গুলো হাট বাজারে আগের তুলনায় এখন অনেকটাই কম দেখা যায়।
স্থানীয় সমাজকমী মো: সাহাব উদ্দিন জানান, বিল-জলাশয় পুকুর ভরাট হওয়া ও দুষণের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব মাছ। এক সময় দেশীয় মাছে ভরপুর থাকতো জলাশয়গুলো। যা আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, আর এ কারণে এখন জেলার মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে চাষের মাছের উপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ জলাশয় গুলো ভরাট বা দখল হয়ে গেছে। ফলে এসব দেশীয় মাছ প্রায় শূণ্য হয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া শস্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন জলাশয় থেকে পানি সেচ দেওয়ার কারণে শীত ও খরা মৌসুমে এসব জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ।
জনসংখ্যার চাপের কারণে অতিরিক্ত মাছ আহরণ, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আহরণ, অবাধে কীটনাশক ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে মাছের উৎপাদন হারিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি গবেষক আবদুল আহাদ জানান, মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই ছোট যার ৫ টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯ টি সংকটাপন্ন বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কলেজ শিক্ষক আহসান উল্লাহ অভিযোগ করে জানান, দেশীয় এসকল মাছ রক্ষায় জেলা মৎস্য বিভাগের কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না। তিনি জানান, মৎস্য বিভাগ প্রতি বছর বিভিন্ন জলাশয়ে দেশী মাছের পোণা অবমুক্ত করে এ জাতগুলো সংরক্ষণ করতে পারতো। কিন্ত তারা সেদিকে খেয়াল করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
0Share