রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর:: শোকরের নেছা জীবনের মূল্যবান সময় পার করেন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে। এ সময় প্রতিবেশীদের বিপদে-আপদে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ মারা গেলে দাফন-কাফনসহ সার্বিক কাজে শারিরিক পরিশ্রম দিয়ে সহযোগিতা করতেন। গ্রামের নিরীহ ও নির্যাতিত মেয়েদের আইনগত সহায়তা পেতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন তিনি। এভাবেই স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। সে জনপ্রিয়তা থেকে হয়ে যান জনপ্রতিনিধি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ১,২,৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তিনি। ২০১৬ সালে নব গঠিত ৪নং চর মার্টিন ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডে হেভী ওয়েট এবং বিপুল অর্থশালী ৫ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিপুল ভোটে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এ স্বশিক্ষিত গ্রামীণ নারী। কিন্ত জনপ্রিয়তা থাকলেও তার জীবনের গল্পের প্রতি পদে পদে আছে চ্যালেঞ্জ। কারণ এ পর্যন্ত পথ আসতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু পথ। জীবনের শেষ সময়ে এসেও আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি শোকরের নেছা।
তিন তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথম দুইবার পরাজয় বরণ করেও থেমে থাকেন নি। অনবরত তৃতীয়বারের চেষ্টায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন শোকরের নেছা। শিক্ষা বঞ্চিত গ্রামীণ নারীদের মধ্যে তিনি একজন। ষাটের কোটা পার করা এই নারী জীবনের প্রতিটি পদেই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। দৃঢ় মনোবল আর ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করেছেন সেইসব চ্যালেঞ্জ।
১৯৫৮ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলাধীন চর মার্টিন ইউনিয়নের উত্তর চর মার্টিন গ্রামে তার জন্ম। গরীব বাবা গোলাম রহমান এবং মাতা নাম সুজিয়া খাতুনের বড় সংসারে অভাব অনটনে তার বেড়ে ওঠা। অর্থাভাবে দেখেননি শিক্ষার আলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত নতুন বাংলাদেশের সূচনালগ্নে বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হন তিনি। তিন মেয়েসহ তাকে দূরবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় তার স্বামী। এরপর শুরু হয় তার সামাজিক চ্যালেঞ্জিং জীবন। স্বামীর অধিকার আদায়ের জন্য থানা পুলিশের দারস্থ হয়েও দুষ্টু স্বামীর সাথে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারেন নি তিনি।
২০০৩ সালে প্রথমবার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নে এবং ২০১১ সালে ২য়বার চর মার্টিন ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন। ২০১৬ সালে ৩য় বার নব গঠিত ৪নং চর মার্টিন ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডে হেভী ওয়েট এবং বিপুল অর্থশালী ৫ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিপুল ভোটে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।
তার অভিযোগ চেয়ারম্যান ইউসূফ আলী (মিয়া ভাই) ও তার লোকজনের নির্যাতন, নিপীড়ন আর অবহেলায় পরিষদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এই নারী জনপ্রতিনিধি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রকাশ্যে তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেই। ঘটনার বিচার চেয়ে গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখায় একটি নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পরের দিন খবর পেয়ে চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে উত্তর চর মার্টিন বাজারে প্রকাশ্যে তাকে মারধর করে। তার আরো অভিযোগ এটুকুতেই ক্ষান্ত না হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে হুমকি-ধমকি ও প্রাণ নাশের ভয় দেখায় চেয়ারম্যানের লোকজন।
তবুও চ্যালেঞ্জ নিতে সদায় প্রস্তুত প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষা বঞ্চিত এ জনপ্রিয় নারী জনপ্রতিনিধি। কারণ তিনি যেন চ্যালেঞ্জিং জীবনের এক বাস্তব গল্পের নাম। সমাজের ভালো মানুষদের কে শোকরের নেছার পাশে থাকার আকুতি। তিনি জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চান।
0Share