মহিউদ্দিন মুরাদ ॥ আজ ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে প্রকাশ্য লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন লক্ষ্মীপুরে। এর আগে ৯মাস যুদ্ধকালিন সময়ে পাক সেনারা রাজাকার আল বদর ও এদেশীয় দোষরদের সহযোগিতায় তৎকালীন নোয়াখালীর জেলার বর্তমান লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণসহ হাজার হাজার নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও এ সব হত্যা কান্ডের বিচার পাননি অনেক পরিবার। সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কাছে জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর ১৭টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চলে। এ সব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আলী আহম্মদ (ইপিআর), আবু ছায়েদ, মেস্তাফিজুর রহমানসহ ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই সময়ে রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাজাকার কমান্ডার সফিক উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, লুৎফুর রহমান প্রকাশ লুতু কমান্ডার ও হারিছ মিয়া। এ সব রাজাকারদের সহযোগিতা নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী আরো নাম জানা অজানা কয়েক হাজার মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। লুটপাটসহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, মুক্তিকামী মানুষদের হাজার হাজার ঘরবাড়ী। পরবর্তীতে ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও প্রয়াত সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হন। প্রত্যেকটি দলে ৮/১০ জন করে দল গঠন করে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালান দুঃসাহসিক এ সব মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭০/৮০জন সশ¯্র রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। সেদিনই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী মুক্ত করেন লক্ষ্মীপুরকে। ”জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের “লাল সবুজের পতাকা”। যুদ্ধকালিন সময়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে, জেলা শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর, সারের গোডাউনে পরিত্যাক্ত টর্চারসেল, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু-বাজার গনকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুরে গণ কবর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি। এ ছাড়া নানান স্থানে আরো অনেক বদ্যভূমি রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আজো ওই সব বদ্যভমি সংরক্ষিত হয়নি।
তবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে জানাানো হয়েছে, কেন্দ্রিয় দপ্তরে ওই সব তালিকা পাঠানো হয়েছে।
মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও ’৭১ এর এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পাননি লক্ষ্মীপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। এ ধরণের এক পরিবার রয়েছে, লক্ষ্মীপুরের মজুপুর এলাকায়। নিজের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কারনে পরিবারের ৬ সদস্যকে হত্যা, ৪ জনকে পঙ্গু ও বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হলেও এখনো বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন, ভুক্তভোগী শহীদ পরিবারের সদস্য দ্বীন মোহাম্মদ। বর্তমান সরকারের কাছে প্রিয়জনকে হত্যার বিচার দাবী করে তিনি জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানান। অভিযোগ করে তিনি জানান, তৎকালের কুখ্যাত খুনি মওলানা আব্দুল হাই আজো পলাতক রয়েছে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপেক্ষের সরকার সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে অদ্যাবধি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। একই দাবী জানান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড আনোয়ারুল হক মাস্টার। মুজিব বাহিনী যুদ্ধকালীন বাহিনী ডিপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদিন বলেন, এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা এখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলো সরকারের অনেক সুযোগ সুবিদা বঞ্চিত। তিনি তাদেরকে সবাইকে পূনর্বাসনের দাবী জানান। একই সঙ্গে কুখ্যাত খুনিদের বিচার দাবী তোলেন তাঁরা এ দিনটি যথাযথভাবে পালনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে জানান সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুর রহমান মাহবুব।
34Share