জুনায়েদ আহম্মেদ: মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। ধান, সয়াবিন, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের জন্য এ জেলার খ্যাতি দীর্ঘদিনের। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া কাটিয়ে চলতি মৌসুমে রবি শস্য আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অ লের কৃষকরা। এ মৌসুমে ৯৩ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ জেলায় ৫৩ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়েছে। আর এজন্য প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষক। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও আশানুরূপ হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরো পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে ১৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে রবি শস্যের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৯৪৪ হেক্টরের বিপরীতে ১৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, সয়াবিন ৫০ হাজার ৫০৫ হেক্টরের বিপরীতে ২৫ হাজার ১৩৫ হেক্টর, চিনাবাদাম ৪ হাজার ৮১৮ হেক্টরের বিপরীতে ৯৬৮ হেক্টর, শীতকালিন শাকসবজি ৪ হাজার ৪৭০ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ৭৫ হেক্টর, মরিচ ২ হাজার ৪৫ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ১৩৩ হেক্টর, ফেলন ১ হাজার ৫৭৫ হেক্টরের বিপরীতে ৬৪৫ হেক্টর, মুগ ১ হাজার ৪৪ হেক্টরের বিপরীতে ৯৩ হেক্টর, সরিষা ৩৩২ হেক্টরের বিপরীতে ২ শত হেক্টর, মসুর ১০০ হেক্টরের বিপরীতে ৮৫ হেক্টর, খেশারী ৪৯৫ হেক্টরের বিপরীতে ৬৫৫ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৪১০ হেক্টরের বিপরীতে ২১৮ হেক্টর, ইক্ষু ৩৮ হেক্টরের বিপরীতে ১৯৫ হেক্টর, আলু ৩৮০ হেক্টরের বিপরীতে ১৫৫ হেক্টর, গম ১৫ হেক্টরের বিপরীতে ১২ হেক্টর, মাসকলাই ৬১হেক্টরের বিপরীতে ৫০ হেক্টর, মটর ৮০ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৬২ হেক্টরের বিপরীতে ৭০ হেক্টর, রসুন ১৫৮ হেক্টরের বিপরীতে ১২৪ হেক্টর, ধনিয়া ৯০ হেক্টরের বিপরীতে ১৬৫ হেক্টর, তরমুজ ৬৯ হেক্টরের বিপরীতে ৫৩ হেক্টর, ক্ষিরা ১৬৩ হেক্টরের বিপরীতে ১৮১ হেক্টর এবং বাঙ্গী ৬৩ হেক্টরের বিপরীতে ৮ হেক্টর জমিতে এসব কৃষিজাত শস্যের আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ছোলা ১৫ হেক্টর, তিল ১১ হেক্টর, তিসি ১০ হেক্টর ও সূর্যমুখী ৭৮ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা একেবারেই শূণ্যের কোটায় রয়েছে।
কিছু কিছু শস্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় প্রধান প্রধান অর্থকরী ফসলগুলোর কাঙ্খিত আবাদ নিয়ে এখানো শঙ্কিত কৃষক। গত বছরের প্রতিকূল আবহাওয়ায় সয়াবিন আবাদে ব্যাপক লোকসান হওয়ায় এবং ডিসেম্বরে অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে মৌসুমী ফসলসহ শাকসবজি ও বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়েছে কৃষক। ফলে অনেক ফসলের ক্ষেত এখনো অনাবাদি হয়ে রয়েছে, এমনটিই দাবী এ অ লের কৃষকদের।
সদর উপজেলার চরমনসা গ্রামের কৃষক হামিদ মিয়া। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বীজতলা জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের চাষকৃত বোরো ধানের ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের কৃষক কামরুল হোসেন জানান, তিনি বর্গা নিয়ে ৮ একর জমিতে ধান ও সয়াবিনের চাষ করেছেন। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে বীজ বপনে বিলম্ব হলেও তিনি এ মৌসুমে ৫ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান ও তিন একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন।
রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের চাষী ইদ্রিস আলী জানান, প্রাকৃতিক গোলযোগের কারণে তিনি দেরীতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার আশায় এখন তিনি দিন গুনছেন।
রামগতি উপজেলার চরবাদাম গ্রামের কৃষক মফিজ উল্ল্যাহ জানান, গত বছর তিনি ৩ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিনি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। এর মধ্যে গত বছর ডিসেম্বরে অতিমাত্রায় বৃষ্টিতে শাকসবজির ক্ষেত ও বোরো বীজতলা প্লাবিত হওয়ায় লোকসান গুণতে হয় তাঁর। তাই এখনো তিনি সয়াবিন চাষ শুরু করতে পারেননি তিনি।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা এলাকার সয়াবিন চাষী সফিউল্ল্যাহ। তিনি জানান, গত বছর তিনি ৫ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। সয়াবিন চাষে লাভ বেশি হলেও গত বছর লোকসানের কারণে চলতি মৌসুমে তিনি ২ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন। আর তিন একর জমিতে শীতকালিন শাকসবজি চাষ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীদের সরকারী বিভিন্ন প্রণোদনা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে অতি বৃষ্টির কারণে শাকসবজির ক্ষেত, বোরো বীজতলাসহ রবি শস্যের আবাদি জমি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে রবি ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতো বলেও মনে করেন তিনি।
0Share