সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা: দেড় মাসেও খাদ্য পায়নি লক্ষ্মীপুরের জেলে

ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা: দেড় মাসেও খাদ্য পায়নি লক্ষ্মীপুরের জেলে

ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা: দেড় মাসেও খাদ্য পায়নি লক্ষ্মীপুরের জেলে

জুনায়েদ আহম্মেদ: ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকায় প্রজনন বৃদ্ধি ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পার হলেও বিশেষ ভালনারেবল গ্রুফ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্দের চাল এখনো পায়নি এ অ লের জেলে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন জেলেরা। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও দেড় মাসেও তা না পেয়ে পেটের দায়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকির মধ্যে মাছ শিকারে নদীতে নামছেন অধিকাংশ জেলেরা। এ কারণে গত ১৫দিনে নদীতে মাছ শিকারের দায়ে এ জেলায় ৩০ জন জেলেকে আটক করে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ২৫ হাজার ৯৪৭টি মৎস্যজীবি পরিবারের মাঝে বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত ৪ মাসের জন্য ৪১৫১.৫২০ মেট্রিকটন চাল বিতরণের জন্য চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৪৫ জেলে পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ১৩৩.৮০০মেঃটন, রায়পুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৯৬ জেলে পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ১৬৭.৮৪০মেঃটন, রামগতি উপজেলায় ১১ হাজার ২৬৫ জেলে পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ৪৫০.৬০০মেঃটন এবং কমলনগর উপজেলায় ৭ হাজার ১৪১ জেলে পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ২৮৫.৬৪০মেঃটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তবে প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তা ও জীবিকা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সবসময়ই পুনবার্সনের সহায়তা আসে দেরিতে এবং বিতরণেও রয়েছে নানা অভিযোগ ও অনিয়ম। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা যখন নদীতে মাছ শিকারে যান তখন সংশ্লিষ্টরা সরকারী খাদ্য সহায়তা দেন। ফলে সরকারী খাদ্য সহায়তা থেকে বি ত হয় প্রকৃত জেলেরা, এমনটিই দাবী করছেন এ অ লের জেলেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলেদের জন্য জানুয়ারি মাসে বরাদ্দের চাল ফেব্রুয়ারি থেকে বিতরণের জন্য দেয়া হলেও ১৪ মার্চ পর্যন্ত তা এখনো খাদ্য গুদামেই পড়ে রয়েছে। তবে ২/৩ দিন আগে সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়ন ও কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করলেও তা এখনো জেলেদের মাঝে বিতরণ করে নাই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি, জাতীয় মৎস্যজীবি, আওয়ামী মৎস্যজীবি ও মানবিক সহায়তা (ইউনিয়ন টার্স্কফোর্স) কমিটির সমন্বয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের মাঝে চাল বিতরণ করেন। আর এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বজনপ্রীতিরও আঁচ পাওয়া যায়। এদিকে গত বছর জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষ হওয়ার পর জুন-জুলাইয়ের দিকে জেলেদের পুনর্বাসনের চাল দেয়া হয়। এবছর জানুয়ারিতে বরাদ্দ পাওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে বিতরণের নীতিমালা থাকলেও দেড় মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের চলছে অনিশ্চিত জীবনযাত্রা। মাছ ধরার বাহিরে অন্য কোন পেশা জানা না থাকায় তারা জেল-জরিমানার ঝুঁকি নিয়েই নামছেন নদীতে।
কমলনগর উপজেলার কটরিয়া মাছঘাট এলাকার জেলে হাসান মাঝি জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি মাছ ধরে সংসার চালান। নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নদীতে নামছেন না। কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারের জেলে করিম মাঝি জানান, সরকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে, আমরা মাছ ধরে সংসার চালাই, এ ছাড়া আর কিছুই শিখিনি। কিন্তু এসময় জেলেরা কি করবে, কিভাবে তার সংসার চলবে তার কোন ব্যবস্থা করে না সরকার। এমন বহু জেলে আছে একদিন নদীতে না গেলে চুলোয় তার ভাতের হাঁড়ি বসবে না। গত বছরও দুই মাসের জাটকা অভিযানের সময় আমরা কোন কোনদিন এক বেলা ভাত খেয়েছি। অভিযান শেষ হওয়ার দুই মাস পর খাদ্য সহায়তার চাল দেয়া হলেও তখন আমরা মাছ ধরার জন্য নদীতে ছিলাম। এবারও দেড় মাস পার হলেও এখনো খাদ্য সহায়তা পাইনি।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোঃ নাজমুল হাসান জানান, মানবিক সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় জানুয়ারিতে জেলেদের জন্য সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল বরাদ্দ দেন। জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের মাঝে তা বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অঃ দাঃ) নয়ন জ্যোতি চাকমা জানান, জেলেদের জন্য বরাদ্দের চাল খাদ্য গুদাম থেকে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিজিএফ এর চাল নেয়া না হলে উর্দ্ধতন কর্র্তপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্ল্যাহ জানান, ইলিশ জাতীয় সম্পদ। সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রাথমিকভাবে সহায়তা ও উৎসাহ দিতে জেলেদের নিবন্ধন করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটি কালক্ষেপন করায় জেলেদের চাল বিতরণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশ আহরণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছেন বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার মেঘনা নদীর ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইলিশ উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণের জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরার ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

মেঘনায় ৩০ জেলের জরিমানা

বলিরপোল বাজারে আগুনে পুড়লো ৮ দোকান: দেড় কোটি টাকার ক্ষতি

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কোটি টাকার ক্ষতি

মেঘনা নদীতে পৃথক দুটি ডাকাতি মামলার আসামী মঞ্জু গ্রেপ্তার

জাটকা নিধন বন্ধে মেঘনায় নৌ র‌্যালি

রামগতিতে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস অনুষ্ঠিত

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com