মাহাবুব আলম: ছয়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলা দেশ বছরের একেক সময় এক এক রূপ ধানর করে এদেশ। কালের পরিক্রমায় প্রতি বছরই হাজির হয় শীতকাল, সকালে ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের। আর এই শীত মৌসম আসলেই মেঘনার কূল গেসা উপকূল জেলা লক্ষ্মীপুরে দেখা যেত শীতে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে। কিন্তু বর্তমানে খেজুর গাছ না থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর থেকে খেজুরের রস।আর এনিয়ে কথা হয় কমলনগরের চর ফলকন এলাকার বাসিন্দা ডাঃ মিজানের সাথে তিনি বলেন আগে আমাদের এলাকায় প্রচুর খেজুরের রস পাওয়া যেত, কিন্তু এখন আর এ এলাকায় তেমন রস পাওয়া যায় না, আমরা আগে দেখতাম শীত এলেই গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুঁলে ঝুঁলে গাছে মাটির তৈরি হাঁড়ি গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে আবার সকালে রস সংগ্রহ করত। আর সেই রস সংগ্রহন করে নতুন আমন ধানের পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি ও পায়েশ তৈরিতে ধুম পরে যেতো। তাছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া,চিরার মোয়া, ও মুড়ি খেত সকলে। শীত যতো বাড়তে থাকতো খেজুর রসের মিষ্টি ও ততো বাড়তো। এক সময় খেজুর রসের মনমাতানো গন্ধে মৌ, মৌ করতো লক্ষ্মীপুরের অলি গলি, এবং রস থেকে গুড় তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করতেন গাছিরা , কিন্তু এখন তাও বাজারে পাওয়া যায় না। এদিকে আর কয়েক জন জানান আগে শীতের সকাল মানেই ছিল রস মুড়ির আড্ডা। সময় বয়ে চলার সাথে সাথে রস মুড়ি খাওয়ার আড্ডা বর্তমানে আর দেখা যায় না।এ নিয়ে কথা হয় কমলনগর চর জগবন্ধু ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রস সংগ্রহ কারি মোঃ ছামছুদ্দিন (৬৫) এর সাথে তিনি বলেন আগে আমি ২০-২৫ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতাম ।
কিন্তু আজ ২ বজর গাছ না থাকার কারনে এখন আর আমি গাছ কাটি না। আর কথা হয় মোঃ অজু ব্যাপারীর সাথে তিনি বলেন আগে আমাদের এলাকায় অনেক খেজুর গাছ ছিল আমারা খেজুরের রস সংগ্রহ করাল জন্য দুপুর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত গাছে হাঁড়ি দিতাম, আবার ভোর রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০-১১ টা পর্যন্ত রস সংগ্রহ করতাম। এবং বাজারে রস ও গুড় বিক্রয় করে ভালোবাবে পরিবার ও সংসার চালাতে পারতাম। তিনি আরো বলেন আগে প্রতি বছর শীত মৌসুমে নিজের গাছ ছাড়া ও নির্ধারিত অর্থ বা রস দেয়ার চুক্তিতে অন্যের ৫০-৫৫ টি গাছ ছিলতাম। কিন্তু এখন গাছ মরে যাওয়ার এবং নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে মাত্র ১০-১২ টি গাছ কাটছি। এদিকে গাছ কমে যাওয়ার কারনে গ্রাম বাসি খেজুরের রস থেকে বজ্ঞিত হচ্ছে। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে কমতে বিলুপ্ত প্রায়। হয়তো সে দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন খেজুর রসের কথা লক্ষ্মীপুর বাসির আর মন থাকে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের কাছে খেজুর রস রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে। তবে সচেতনরা মনে করছেন বাড়ির আনাচে কানাছে রাস্তার পাশে, পরিত্যক্ত স্থানে লক্ষ্মীপুরের সকলে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে খেজুর গাছ রোপন করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খেজুরের রস গুড় সম্পর্কে কোন গল্পের কথা বলতে হবেনা।
0Share