সানা উল্লাহ সানু: কয়েক বছর আগেও লক্ষ্মীপুর জেলা শহর, রামগতি, রায়পুর, কমলনগর, রামগঞ্জের বিভিন্ন বাজারসহ স্কুল, কলেজের সামনে দেখা যেত অস্থায়ী কিছু দোকান । রমজানের ঈদকে সামনে রেখে তৈরি হতো অস্থায়ী ঈদ কার্ডের এ সব দোকান। পাড়ার স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া বন্ধরা মিলে গড়ে তুলতো সে দোকান গুলো। বিক্রি করতো পোস্টকার্ড সাইজের কাগজে ছাপা ঈদকার্ড । ছিল বাহারী মিউজিক ঈদকার্ডও। নানান ডিজাইন, প্রচ্ছদ আর পছন্দসই রঙের মাঝে খুঁজে নিত প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর ঈদকার্ড। পোস্টকার্ড সাইজের কাগজে ছাপা ঈদকার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর মজাটা ছিল আলাদা। রমজানের মধ্যভাগ থেকে শুরু হতো বেচাকেনার ধুম।
স্কুল পর্যায়ের কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বেশ কদর ছিল এই ঈদকার্ডের। তারা এক বন্ধু আরেক বন্ধকে ঈদকার্ড দিতে অনেক দূর পর্যন্ত পায়ে হেটে পৌছে দিতো। এতে তারা সবচেয়ে আনন্দ বোধ করতো।
কিন্তু এর বাহিরে বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কিংবা সুসর্ম্পক আছে যাদের সঙ্গে এমন মানুষদের কাছে ঈদ কার্ড পাঠিয়ে ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাত সবাই। ঈদ কার্ড ছাড়া যেন আনন্দই জমতো না ঈদে।
রমজান মৌসুমে ডাকঘর গুলোও ঈদকার্ডে চাপে হিমশিম খেতো। দেশ-বিদেশী দূরের বন্ধুদের কাছে ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠানো হতো ঈদকার্ড।
অথচ কালের পরিক্রমায় আবহমান গ্রাম বাংলার এ সংস্কৃতিটি হারিয়ে গেল ইন্টারনেট ও এসএমএসের এর আড়ালে। ফলে এখন ঈদ কার্ড’র ব্যবহার কমে গেছে। তাই অলিগলিতে এসব দোকানও বসে না আর আগের মতো।
ঈদকার্ড প্রসঙ্গে সদর উপজেলার চর উভুতির ইসরাত জাহান বলেন, এখন ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে তরুণ-তরুনীরা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো নতুন প্রযুক্তির দিকে বেশি ঝুঁকছে। বলতে গেলে ঈদ কার্ডের কোন চাহিদাই এখন নেই।
লক্ষ্মীপুর শহরের দোকান মালিক রাসেল জানান, বছর কয়েক আগেও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে কার্ড বেশী বিক্রি হত। কিন্তু বর্তমানে ঈদ কার্ডই নয়, শুধু মাত্র বিয়ের কার্ড ছাড়া আর কোন কার্ডেরই চাহিদা নেই।
এক সময়ে ঈদকার্ড বেশি ব্যবহার করতেন রাজনৈতিক নেতারা। তবে বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মোবাইল এসএমএস দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছার কাজটা সেরে ফেলেন অল্পতেই।
এই ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা যুবলীগের এক নেতা বলেন, ভাই এত সময় কোথায়। মোবাইলে এসএমএস দিলে খরচ ও কম এবং অনেক দূরপ্রান্ত থেকে পৌঁছানো সহজ।
এ নেতা বলেন, শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ মন্ত্রী-এমপিরা কার্ডে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও সাধারণ মানুষের মাঝে কার্ড কেনার চাহিদা নেই। বর্তমান আধুনিকতায় এমনি ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যটি।
0Share