সানা উল্লাহ সানুঃ লক্ষ্মীপুরে ঐতিহাসিক দুটি বয়ার পাশে দানবাক্স স্থাপন করে ওড়ানো হয়েছে লাল সাদা নিশান(পতাকা)। ফলে যে কোন সময় বেদখলের অপেক্ষায় রয়েছে জেলার ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্তিক গুরুত্ব সম্বলিত বয়া দুটি। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের মৌলভীরহাট সংলগ্ন বয়ার চরে প্রায় শত বছর যাবত অযত্নে পড়ে আছে এ ঐতিহাসিক নির্দশন দুটি। স্থানীয়রা বলছে ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্তিক গুরুত্ব সম্বলিত বয়া দুটি সংরক্ষণ করা খুবই জরুরী।
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালি চরের মধ্যখানে জনমানবহীন এলাকায় কে বা কারা ওই বয়া দুটির পাশে দুটি খুঁটি গেড়ে চাঁদ তারা খচিত দুটি লাল সাদা নিশান উড়িয়ে নিচে একটি দানবাক্স ঝুলিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছে অদূর ভবিষ্যতে “বয়া শাহ” মাজারে পরিণত হবে বয়া দুটি। কারণ দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বয়া দুটি কে স্থানীয় কেউ কেউ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নানা বিশ্বাস করতেও শুরু করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বয়ার চরে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে মেঘনা নদী বর্তমান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শহর কসবা, ফরাশগঞ্জ, ভবানীগঞ্জের পাশ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত ছিল। প্রমত্তা মেঘনার এ শাখাটির নাম ছিল কুশাখালী নদী। সে কুশাখালী নদীর ভাঙ্গনে লন্ডভন্ড হয়েছে তৎকালীন বহু জনপদ। বয়ার চরের পাশে বর্তমান ফরাশগঞ্জ ছিল নৌ-বন্দর। এখানে বহু বড় বড় জাহাজ ভীড় করতো। সে সকল বড় জাহাজের জন্য বৃটিশরা এখানে স্থাপন করে কয়েকটি বয়া। ওই বয়ার মধ্যে বর্তমান বয়া দুটিও ছিল। কাছ থেকে দেখা যায় লোহার তৈরি বয়া দুটিতে আংটা আছে। বয়া দুটি যে জমিতে আছে সে জমিতে কোন ফসল দেখা যায়নি। পাশে রাখাল বালকদের গরু চরাতে দেখা গেছে।
স্থানীয় রহমান মিয়া জানান, এ বয়া দুটি কে দেখতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় লোকজন আসে। তবে সরকারি কোন লোকজন কে তিনি কখনো আসতে দেখেনি। রহমানের মতে এ বয়া দুটি সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, এ বয়া দুটি আমাদের কে অজানা অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক নজিব উল্লাহ জানান, ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে চর জাগতে জাগতে মেঘনায় চলে যায় প্রায় ওখান থেকে ৩৫ কিমি পশ্চিমে। শুরু হয় নতুন জনপদ। মাটিতে চাপা পড়ে যায় অসংখ্য বয়া। তবে শেষ রয়ে যায় মাত্র ২টি বয়া। বয়া দুটির নামানুসারে এ চরটির নামকরণ করা হয় বয়ার চর। তিনি জানান, শুধু লক্ষ্মীপুরেই না পাশের নোয়াখালী জেলাতেও আছে একটি বয়ার চর। তবে ওখানে এ রকম সরাসরি কোন বয়া দেখা যায় না। সে জন্যই তার মতে, এ বয়া দুটি ঐতিহাসিক গুরত্ব বহন করে। বয়াগুলো স্থাপনের বয়স শতাধিক বছর হবে বলে তার ধারণা এবং বয়াগুলো দেশের প্রত্নতাত্তিক গবেষণার জন্য খুবই মূল্যবান উপকরণ বলেও জানান তিনি। তিনিও এ গুলো সংরক্ষনের জন্য আহবান জানান। এ বিষয়ে জানার জন্য চেষ্টা করেও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, সরকারি ভাবে বয়া দুটিকে ওখানেই সংরক্ষণ করা খুবই জরুরী, কেননা এর মধ্যে লুকায়িত আছে আমাদের অতীত ইতিহাস।”
0Share