সানা উল্লাহ সানু: সারা পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যখন মরণব্যাধি ক্যান্সারের নিরাপদ ঔষধ আবিস্কার নিয়ে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামের ছেলে কমল কান্তের বিশেষ পলিমার আবিষ্কার সারা পৃথিবীকে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরো একধাপ এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। গবেষণা জার্নাল সায়েন্স ডাইরেক্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অতি সম্প্রতি জাপানের হিয়োগো বিশ্ববিদ্যালয় এন্টিক্যান্সার ঔষধ তৈরিতে পলিমার (Polymer) নিয়ে গবেষণার জন্য কমল কান্ত সরকারকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। ড. কমল কান্ত সরকার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রুহিতা ইউনিয়নের চর লামছি গ্রামের মধুসূদন সরকারের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপের আওতায় হিয়োগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির গবেষক হন ।
তার আবিস্কৃত ‘‘পলিমার’’ ক্যান্সার চিকিৎসাসহ বিজ্ঞানের আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে গবেষণাটি Stimuli-responsive Linear and Star Polymers in Aqueous Solutions শিরোনামে কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ও গুগল স্কলারে প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে এ অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাপানের হিয়োগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবেও গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন। লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ড. কমল কান্ত সরকার জানান, বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় আক্রান্ত ক্যান্সার কোষে এন্টিক্যান্সার ঔষধ প্রয়োগ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ সকল এন্টিক্যান্সার ড্রাগ প্রয়োগে শরীরের বহু নরমাল কোষের ক্ষতিসাধন করে। রোগী ঔষধ গ্রহনের পর আরো বেশি দুর্বল হয়ে যায়। এক সময় ঔষধ প্রয়োগের পরেও রোগের নিয়ন্ত্রন রাখা যায় না।
কিন্ত সম্প্রতি নতুন আবিস্কৃত বিশেষ ধরনের একটি পলিমার ব্যবহার করে যে এন্টিক্যান্সার ড্রাগ তৈরি হবে, সে ঔষধ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ছাড়া অন্য কোষের কোন ক্ষতি সাধন করবে না। নতুন এ পলিমার আবিষ্কার সারা পৃথিবীকে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরো একধাপ এগিয়ে নিবে। কারণ এতদিন এ বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিকট অজানা ছিল।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুরের এ কীর্তি ছেলে ছোট বেলা থেকে দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে আসছিলেন। বাবা মা নিজেরা নিরক্ষর হলেও সন্তানের জন্য সব সময় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বাবা শ্রী মধুসূদন সরকার এবং মা শ্রীমতি সরকারের ত্যাগ স্বীকারে পাড়া-প্রতিবেশী এবং শিক্ষকদের সহায়তা কমল কান্ত এখন বিজ্ঞানী।
কমল কান্ত লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরকে জানান, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। ২০০৩ সালে রসুলগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৫ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। পরে ২০০৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিষয়ে স্নাতক এবং ২০১১ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর রসায়ন বিভাগ হতে মাস্টার্স অব ফিলোসফি ডিগ্রি অর্জনের পর ২০১৭ সালে জাপান সরকার প্রদত্ত মনবুশো স্কলারশিপের আওতায় তিনি হিয়োগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির গবেষক হন ।
ড. কমল কান্ত সরকার ভবিষ্যতে medicinal applications নিয়ে গবেষণা করবেন বলে জানান তিনি।
637Share