সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
একুশে বই মেলায় লক্ষ্মীপুরের মাইন উদ্দিন পাঠানের "চেতনার চার নাটক"

একুশে বই মেলায় লক্ষ্মীপুরের মাইন উদ্দিন পাঠানের “চেতনার চার নাটক”

0
Share

একুশে বই মেলায় লক্ষ্মীপুরের মাইন উদ্দিন পাঠানের “চেতনার চার নাটক”

জুনাইদ আল হাবিব: নাটক সমাজে মানুষের মাঝে ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি, নেতিবাচক কাজ থেকে দূরে থাকার এক অনন্য মাধ্যম। নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সামাজিক কুসংস্কার, সমাজের অন্ধকার, সামাজিক সচেতনতার ঘাটতি, ধর্মান্ধতা, অবহেলিত জনগোষ্ঠী, শোষণ বঞ্চনার শিকার মানুষের গল্প। যা সমাজকে ইতিবাচক পরিবর্তনে সাহায্য করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সুপ্রাচীন কাল থেকে নাটকের সূত্রপাত। বিখ্যাত নাট্যকারদের লেখনির ধারাবাহিকতায় আজ সমাজে নাটক প্রদর্শিত হয়। সমাজের অন্ধকারের এসব চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যান নাট্যকারগণ। তাদের মধ্যে একজন অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান।

নাটক লেখেন, নাটক নির্মাণে দেন নির্দেশনা। আর এভাবেই নাটক লিখে নিজের নামের সাথে নাট্যকার শব্দটির মিশেল করার খ্যাতি লাভ করেন তিনি। লিখে পেলেন বেশ কয়েকটি নাটক। আর সেরা চারটি নাটক নিয়ে এখন বের করেছেন “চেতনার চার নাটক” নামে একটি বই। “দহল, সংক্রান্তি, দিন বদলের পালা, ১৯৪৬” এই চারটি নাটক নিয়ে বের হয় বইটি। বইটি এবারের বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে।

নাটক দহলে উঠে এসেছে, তারুণ্যের বিপথগামিতা। সহজ, সরল মেধাবী তরুণরা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সম্পদ ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের চক্রান্তে বিপথগামী হয়, তার এক আখ্যান এ নাটক।

নাটক সংক্রান্তিতে দেখানো হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কীভাবে একটি মেধাবী তরুণের সম্ভাবনাময় জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হিংসাত্মক কর্মকান্ডের সামনে আজ অসহায়।

নাটক “দিন বদলের পালা”তে উঠে এলো, একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে পর্যদুস্ত করে তাদের পরাজয়ের বদলা নিতে চায়। অনেকটা সফলও হয়েছে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আশা পূরণ হয় না। কারণ দিন যে বদলে গেছে৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে চলেছে।

আর শেষ নাটক ১৯৪৬ এ তুলে ধরা হয়েছে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের কথা। ১৯৪৬ সালে হীন উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে মানুষকে উত্তেজিত করে নোয়াখালী অঞ্চলে এক নির্মম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিলো। এতে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়, জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়, বিনষ্ট করা হয় ধন-সম্পদ।এ সময়ে শান্তির বার্তা নিয়ে এ অঞ্চলে গ্রামের পর গ্রাম পায়ে পায়ে ঘুরেছেন মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু দাঙ্গায় যে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে, তা আর ফিরে আসেনি। দাঙ্গার পটভূমিতে মানবিকতার জয়গান গাওয়া হয়েছে এ নাটকে।

“চেতনার চার নাটক” বইটির ভূমিকা লিখেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। আর প্রসঙ্গ কথা লিখেছেন এবার বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত, ড. রতন সিদ্দিকী।

রামেন্দু মজুমদার ভূমিকা লিখতে গিয়ে বলেন, অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান আমার বিশেষ প্রীতিভাজন, আমার জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুঘটক৷ পাঠান নাটক লেখেন ও নির্দেশনা দেন। তার রচিত ও নির্দেশিত চারটি নাটক নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ‘চেতনার চার নাটক’। চারটি নাটকের বক্তব্যই আমাদের সমাজের জন্য জরুরি।

অন্যদিকে ড. রতন সিদ্দিকী প্রসঙ্গ কথায় বলেছেন, অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন পাঠান স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং আত্মনিবেদিত নাট্যজন৷ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে ওঠা সমতা প্রত্যাশী এক বলিষ্ঠ মানুষ। দ্রোহে দ্রোহী, রৌদ্রে রুদ্র, শান্তে প্রশান্ত দেশপ্রেমিক ও মানবিক এক অবিরাম যোদ্ধা৷ মাইন উদ্দিন পাঠান তাঁর যুদ্ধের হাতিয়ার করেছেন নাটককে। তাঁর প্রতিপক্ষ যারা যুব সমাজকে নষ্ট করেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে তারা। যারা সাম্য-সমতার, নীতি-নৈতিকতার, স্বপ্ন-সম্ভাবনার বিরুদ্ধে, মাইন উদ্দিনের সংগ্রাম তাদের বিরুদ্ধে।

মাইন উদ্দিন পাঠান একজন শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ। লক্ষ্মীপুর জেলার শিক্ষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মানুষ তিনি। ১৯৬১সালের জেলার বায়পুর উপজেলার উত্তর রায়পুর গ্রামের পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

‘চেতনার চার নাটক’ নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, নাট্যমঞ্চের সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘকালের। অভিনয়, সংলাপ, কস্টিউমস, লাইট, মিউজিক, দর্শক এ নিয়েই আমার কাজের জগত।
লক্ষ্মীপুর থিয়েটার আমাকে এই কাজের বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছে। মফস্বল শহরে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের খোঁজ খবর যারা রাখেন, তাঁরা জানেন যে, দলের নেতৃত্ব থাকলে দু-একজন ব্যক্তিকেই সব সামলাতে হয়। দল ও দলের সদস্যগণের কাছে যেন চরম দায়বদ্ধতা। এমনকি নাটকের পান্ডুলিপি সংগ্রহ বা রচনা করার দায়িত্ব বাদ যায় না৷ তেমনি একদিন নাটক রচনার সুযোগ এসে গেল। ১৯৮৯সালে বিটিভি’র একটি জেলা ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘নিবেদন’- এ লক্ষ্মীপুরের জন্য নাট্যাংশ রচনার দায়িত্ব পড়ল আমার ওপর। আমি সে সুযোগ কাজে লাগালাম। এতেই নাটক রচনায় আমার হাতেখড়ি। আমার এই আত্মবিশ্বাসের জন্ম হল, আমি নাটক রচনা করতে পারব।

এরপর বহু সময় পেরিয়ে গেল কিন্তু বসা আর হয় না। ২০১২সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সারাদেশে নাটকের পান্ডুলিপি সংকট দূর করার উদ্যোগ নেয়৷ সে লক্ষ্যে ৬৪টি জেলায় নাটকের পান্ডুলিপি তৈরি এবং নাটক নির্মাণ ও মঞ্চায়নের ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রথমে ‘মুক্তিযুদ্ধের নাটক’, ২০১৩সালে ‘স্বপ্ন ও দ্রোহের নাটক’ এবং ২০১৪সালে ‘সাহিত্যনির্ভর নাটক’ লক্ষ্মীপুর জেলার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো। এভাবে সুযোগ এসে গেল। তাকে আর হাত ছাড়া করিনি।

আর সে ধারাবাহিকতায় আজ আমার কাজের ফসল ‘ ‘চেতনার চার নাটক’ বইটি। আমি আশা করব, নাটকগুলোর মঞ্চায়নকে দর্শকগণ যেভাবে সাদরে গ্রহণ করেছেন, তেমনি আগামির নাট্যযোদ্ধা এবং পাঠকগণও নাটকগুলোর গ্রন্থিত সংকলন সাদরে গ্রহণ করবেন।

সাহিত্য | সংস্কৃতি আরও সংবাদ

রায়পুর সোসাইটি ইউ কে” এর উদ্যোগে “পিঠা উৎসব ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান

মঞ্চের শতাধিক শিল্পী নিয়ে আলাউদ্দিন সাজু’র নাটক “অন্যরকম খুশি” 

রামগতিতে নীল পোষাকে পাটোয়ারী বংশের ঈদ পুনর্মিলনীতে বংশ রক্ষার প্রত্যয়

বিজয়ের কবিতাগুচ্ছ ‘আমাদের নতুন ভোর’

লক্ষ্মীপুরে ১৩ শিল্পী পেলেন সম্মাননা

শোকাবহ আগষ্টের কাব্যগাঁথা “মুজিব চিরঞ্জীব”

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com