পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি মাত্র কয়েকদিন, এরই মধ্যে জমে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের ঈদ বাজার। ফুটপাত থেকে শুরু করে জেলার অভিজাত মার্কেটগুলোতে চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটা। দোকানে দোকানে ভিড় উপচেপড়া। রমজানের শুরুতে কেনাবেচা কম থাকলেও এখন দৃশ্যপট অন্যরকম।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপণি বিতান, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, চক বাজার মসজিদ মার্কেট, অঙ্গশোভা শপিংমল, লক্ষ্মীপুর পৌর সুপার মার্কেট, ল্যাকমি, আউট লুক, নগর বাজারসহ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আলোকসজ্জায় মার্কেটগুলো ঝলমলে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় বেশি নারী ও শিশু ক্রেতাদের। বাহারি পোশাক আর নতুন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও অধিক বিক্রি ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে জেলার কয়েকটি মার্কেটে রয়েছে র্যাফেল ড্র এর আয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর মেয়েদের জন্য দোকানিরা এনেছেন গ্রাউন্ড, বিবেক, বিনয়, বিশাল, পাখি, আশিকী, ব্লাক বুটিক, কিরণমালাসহ নানা ধরণের থ্রি-পিছ। আরো আছে হাফ সিল্ক, বেনারশি, কাতান, জরজেট, বি-প্লাস, কটন, সুতি, টাঙ্গাইল ও নকশী করা কাপড়-শাড়ি। রয়েছে ছেলেদের জন্য, বিভিন্ন ব্যান্ডের পাঞ্জাবি, ফরমাল শার্ট, শেরোয়ানি, টি-শার্ট, গেবাডিন ও নিত্যনতুন জিন্স প্যান্টসহ নানা রকমের ও ডিজাইনের পোশাক।
জেলা শহরের চক বাজার মসজিদ মার্কেটে ঈদের পোশাক ক্রয় করতে আসা জান্নাত আক্তারের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে পোশাকের কালেকশন অনেক ভালো। তাই কয়েকটি দোকান ঘুরে পছন্দের পোশাকটি ক্রয় করছেন। তবে একই পোশাক একেক দোকানে একেক দাম হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদের পোশাকের দাম একটু বেশি। তাই পছন্দের পোশাকটি প্রিয়জনদের জন্য কিনতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। তাই অনেক রাত পর্যন্ত বিপণি বিতানগুলোতে ঘুরে ঘুরে ঈদের পোশাক ক্রয় করার চেষ্টা করছি।’
ক্রেতাদের অনেকেরই ভাষ্য, জেলার সবচেয়ে উন্নতমানের কালেকশন রয়েছে শহরের অঙ্গশোভা শপিংমলে। এখানে পণ্য’র দামও চড়া। প্রতি বছরই বিক্রির শীর্ষে থাকেন এই প্রতিষ্ঠানটি। আলাপকালে মার্কেটটির মালিক মো. সেলিম জানান, গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। পণ্যর গুণগত মান ভালো, তাই দামও একটু বেশি। তবে ১০ থেকে ১৫% এর অধিক লাভ ধরা হয় না।
এদিকে শেষ সময়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে দর্জিরা। অধিকাংশ দর্জির দোকানই নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আগে নেওয়া কাজগুলো শেষ করা নিয়ে ব্যস্ত তারা। দর্জি শ্রমিক রাজু জানান, গত বছরের চেয়ে এবার কাজের চাপ বেশি। তাই তারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
আলো ঝলমলে মার্কেটে পোশাকের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের একমাত্র ভরসা ফুটপাত। সেখান থেকে নিজেদের সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন। পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনদের চাহিদা মেটান অনায়াসে।
ফুটপাত ব্যবসায়ী জাকির বলেন, ‘আমাদের এসি ও লাইট খরচ নেই, খরচও কম। তাই অল্প লাভে বিক্রি করছি। সব বয়সি নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিভিন্ন রংয়ের ও ডিজাইনের জামা কাপড় থাকায় এখানে ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি বেশি। ঈদের সময় যতো কাছে আসছে, বেচাকেনা ততই বাড়ছে।
আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘রমজান ও ঈদ উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন মার্কেটের সামনে পুলিশের ফোর্স রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
0Share