আতোয়ারা রহমান মনির:: রামগতি উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ৭ হাজার পরিবার বাস করে। তিন-চার বছর আগেও এসব পরিবারের ভাগ্য জিম্মি ছিল লবণাক্ত পানির জোয়ারভাটার প্লাবন আর জলাবদ্ধতায়। জমিতে চাষাবাদ বা ঘেরে মাছ চাষ সবই ছিল বন্ধ। জোয়ারের পানির তোড়ে গত কয়েক বছরে শিশুসহ পাঁচজনের প্রাণহানিও হয়। কিন্তু সরকারি অর্থায়নে মাত্র ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি স্লুইসগেট বদলে দিল গ্রামবাসীর জীবন। এখন জলাবদ্ধতা ও জোয়ারভাটার অভিশাপ থেকে মুক্ত এই এলাকা। পাশাপাশি জমিতে ধানসহ শাক-সবজির চাষ হচ্ছে। প্রায় ৫০টি ঘেরে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার মানুষ। রামগতি বড়খেরী ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের রঘুনাথপুর এলাকায় ৭ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫০০ জেলে পরিবার রয়েছে। মাছ চাষই ছিল তাদের প্রধান জীবিকা।
কিন্তু জলাবদ্ধতা ও জোয়ারভাটার কারণে ১০-১২ বছর ধরে মাছ চাষ ছিল বন্ধ। স্থানীয় ইউপি সদস্য বালা রানী দাস জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ে বড়খেরী ইউনিয়নে রঘুনাথপুর গ্রামের সমস্যা তুলে ধরেন তিনি।
পরে পরিষদের সিদ্ধান্তে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে স্লুুইসগেট নির্মাণ করে দেয় সরকার। ইউপি সদস্য নয়ন মজুমদার, নুরুল ইসলাম, গোপাল মাঝি ও বাবর মিয়াসহ অনেকে জানান, রঘুনাথপুর গ্রামে স্লুইসগেট হওয়ায় তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়েছে। গত ১০-১২ বছর ধরে জোয়ারের পানিতে তাদের ভাগ্য জিম্মি ছিল।
পানিতে ডুবে মারা গেছেন তাহের মাঝির ছেলে, বেছু দাসের ৪ বছরের মেয়ে দিপা দাস, সেকান্দর, মহিউদ্দিনসহ পাঁচজন। তখন জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় ছাগল, হাঁস-মুরগি। স্লুইসগেট নির্মাণ হওয়ায় এখন আর কোনো সমস্যা নেই। সরস্বতী বালা (৫০) জানান, ৩-৪ বছর আগেও ঘরের হাঁড়িপাতিল পর্যন্ত পানিতে ভেসে গিয়েছে। এখন আর সেই দিন নেই। কৃষক নির্মল দাস জানান, জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতায় ৩-৪ বছর আগেও তার খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যেত। এ কারণে তিনি কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন জোয়ারভাটার জলাবদ্ধতা না থাকায় নতুন করে চাষবাস শুরু করেছেন। ব্যবসায়ী বেলাল জানান, একটি স্লুইসগেট বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন। এখন এলাকার ছোট-বড় ৫০টি মৎস্য ঘেরে মাছ চাষ হচ্ছে।
অনেকে শাক-সবজির চাষ করছেন। বড়খেরী ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ ফেরদৌস বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে পরিষদের সব সদস্য কাজ করছেন। রগুনাথপুর এলাকায় স্থানীয়দের দাবিতে একটি স্লুইসগেট তৈরির প্রয়োজনীয়তা তিনিও অনুভব করেছেন। সরকার স্লুইসগেট নির্মাণ করায় এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে।’
0Share