সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নদী ভাঙ্গন; উপকুলের মানুষের এক অভিযোগহীন রোদন ধ্বনি

নদী ভাঙ্গন; উপকুলের মানুষের এক অভিযোগহীন রোদন ধ্বনি

নদী ভাঙ্গন; উপকুলের মানুষের এক অভিযোগহীন রোদন ধ্বনি

মনজুর মোরশেদ: নদী ভাঙ্গন উপকূলীয় বাসিন্দাদের কাছে এক আতংকের নাম। শব্দটি শুনলেই চোখের কোনে ভেসে উঠে সব হারানো কিছু অসহায় মানুষের ছবি। প্রতিবছরই উপকুলীয় এলাকায় মাইলের পর মাইল জমি নদী গর্ভে চলে যায়। এক জরিপে দেখা যায় প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদী গর্ভে চলে যায়। এতে করে বসতভিটা জায়গা-জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। বিলীন হচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় লক্ষীপুরের কমলনগর ও রামগতি এলাকায় প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়। কমলনগর উপজেলার পাটারিরহাট, সাহেবেরহাট, চরকালকিনি ও চর ফলকন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্রতি বছরই ভাঙছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে চরলরেন্স ও চরমার্টিন ইউনিয়ন। অপর দিকে রামগতি এলাকার আলেকজান্ডার-বালুরচর, চর আগলী, চর রমিজ, চর গাজী, চর জব্বর, চর আব্দুল্লাহসহ কিছু অংশ নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে।
এই প্রলোয়ংকরী নদী ভাঙ্গন কেন হয়, কি কি বিষয়ের উপর নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা নির্ভর করে, কোন সময় নদী ভাঙ্গন বেড়ে যায়, জনজীবনে নদী ভাঙ্গনের প্রভাব, কিভাবে নদী ভাঙ্গন রোধ করা যায়, নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো মানুষের জন্য করণীয়, এসব নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের ধারাবাহিক আয়োজন।

প্রথম পর্বে আপনাদের সাথে নদী ভাঙ্গনের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো:

যদিও নদী ভাঙ্গন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তবুও মানুষের নানা কর্মকান্ড নদী ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই নদী ভাঙ্গনের শুধু প্রাকৃতিক নয় মানবসৃষ্ট কারণ ও রয়েছে। এখন দেখে নিই নদী ভাঙ্গনের কিছু প্রাকৃতিক কারণ।

নদী ভাঙ্গনের কিছু প্রাকৃতিক কারণ সমূহ
বাংলাদেশ একটি বদ্বীপঃ
বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ হওয়ায় এখানকার জমি পলি মাটি দিয়ে গড়া। এতে করে মাটির গঠন অনেক দূর্বল। এই দূর্বল মাটি নদীর পানির স্রোত সবসময় সইতে পারেনা। এতে করে সামান্য শক্তিশালী স্রোত এলেই নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
বন্যাঃ
নদী ভাঙ্গনের একটি অন্যতম কারণ হলো বন্যা। সাধারণত বর্ষাকালে আমাদের দেশে বন্যার প্রকোপ বেড়ে যায়। বন্যার সময় নদীতে পানির প্রবাহ খুব বেশি থাকায় ঐ পানির স্রোত মাটির স্তর ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে থাকে। এসময় নদীর তীরের পানির গতি বেশি থাকে এবং ঐ পানি তীরবর্তী মাটিতে আঘাত হেনে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি করে। এতে করে বন্যার সময় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
অতি বৃষ্টিপাতঃ
অতি বৃষ্টিপাতে ফলে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায় সেই সাথে বাতাসের প্রভাবে নদীর পানি উত্তাল থাকে। এতে করে অতি বৃষ্টিপাতের সময় নদীতে শক্তিশালী ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। তখন নদীর ঢেউ তার তীরবর্তী স্থানের উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে। এতে করে নদীর তীরের দুর্বল অংশের মাটি ভেঙ্গে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
নদীর তলানীতে পলি জমাঃ
প্রকৃতির নানা বিচ্যুতির কারনে নদীর তলানীতে পলি জমে থাকে। এতে করে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে করে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তীরে চাপ সৃষ্টি করে এবং নদীর তীর ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তন ঘটায়। এভাবে নদী ভাঙ্গন তরান্বিত হয়।
প্রবল স্রোতস্বিনী নদীঃ
কিছু কিছু নদী পানির প্রবাহের পরিমান বা পাহাড়ী ঢলের কারণে প্রবল স্রোতস্বিনী হয়ে থাকে। এসব নদীর পানির প্রবাহের তীব্রগতির কারণে নদীর ভাঙ্গন হতে পারে। এসব স্থানের নদী তীরের গঠন শক্তিশালী না হলে নদী ভাঙ্গন তরান্বিত হয়।
নদীর প্রশস্ততাঃ
নদীর প্রশস্ততা নদী ভাঙ্গনের সাথে সম্পর্কিত। নদীর প্রশস্থতা বেশি হলে নদী ভাঙ্গনের সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়।
নদীতে নতুন চর তৈরি হওয়াঃ
নদীতে পলি জমে চর তৈরি হয়। অনেক সময় নদীর মাঝখানে নতুন চর তৈরি হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এতে করে নদীর একপাড়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় এবং নদী গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য দিকে চলে যায়।

নদী ভাঙ্গনের মানবসৃষ্ট কারন সমূহ
আসুন দেখে নিই কি কি মানবসৃষ্ট কারণে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
বন উজাড় করাঃ
গাছের শিকড় মাটির গভীরে গিয়ে মাটির গঠনকে শক্তিশালী করে। এতে করে নদীর তীরবর্তী মাটির ভিত্তি শক্তিশালী হয়। দিনে দিনে মানুষ নিজের প্রয়োজনে বন কেটে উজাড় করার কারণে নদীর তীরের মাটি দূর্বল হয়ে যায়। এতে করে নদীর তীব্র স্রোতের ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাটি ভেঙ্গে পড়ে নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
নদীর পাড়ে বসত বাড়ি ও স্থাপনা নির্মান করাঃ
মানুষ নদীর তীরবর্তী স্থানে বাড়ী ঘর ও নানা স্থাপনা নির্মাণের ফলে মাটি ধারন ক্ষমতা কমে যায় এবং ধ্রুত ভেঙ্গে পড়ে। তাই নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও নদী ভাঙ্গনের একটি কারণ।
নদী থেকে বালি উত্তোলনঃ
আমরা প্রায়ই নদী হতে বালু উত্তোলন করতে দেখি। এই বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। তাই নদী থেকে বালু উত্তোলন ও নদী ভাঙ্গনের জন্য দায়ী।
নদীতে বাধ দেয়াঃ
অনেক সময় আমরা নদীর উপর বাধ দিয়ে নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করা চেষ্টা করি। তৈরি করি বিদ্যুত কেন্দ্র, সেচ প্রকল্প। এতে করে আমরা সাময়িকভাবে কিছুটা উপকৃত হলেও এতে করে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার তৈরি হয়ে থাকে। নদীতে সৃষ্ট বাধ নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্থ করে এবং এতে করে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করাঃ
যুগ যুগ ধরে নদীর তীর ঘেষে তৈরি হয়েছে নানা জনপনদীর তীর অনেক সময় নদীর একতীরে অবস্থিত শহর রক্ষা করতে গিয়ে মানুষ শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে থাকে। এতে করে নদীর একপাড়ের ভাঙ্গন রোধ হলেও অন্য পাড়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
অপরিকল্পিত ড্রেজিংঃ
আমরা নদীতে নিয়মিতভাবেই ড্রেজিং করতে দেখতে পাই। সব সময় ড্রেজিং উপকারে আসে না। অপরিকল্পিতভাবে ডেজিং করার ফলে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততার মাঝে ভারসাম্য থাকে না। এতে করে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়ে থাকে। ¬¬¬¬¬¬¬¬

আজ আমরা নদী ভাঙ্গনের নানাবিধ কারণ নিয়ে আলোচনা করলাম।

নদী ভাঙ্গনের আরো নানা বিষয় নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে। নিয়মিত লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরে চোখ রাখুন।

লেখকঃ পরিবেশ কর্মী

নদীভাঙন | জলবায়ু আরও সংবাদ

মিধিলি: মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব মেঘনার ৪০ বেদে পরিবার

‘জমি ভেঙে যাচ্ছে, কলিজা ফেটে যায়’

ব্লক দিয়ে মেঘনার বাঁধ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন

তিন হাজার শীতার্তকে কম্বল সোয়েটার দিয়েছে কমলনগর রামগতি বাঁচাও মঞ্চ

কমলনগরে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধৈর্য্য ধরতে বললেন মন্ত্রী

নদীভাঙন থেকে বাঁচতে লক্ষ্মীপুরে নদীপাড়ে এলাকাবাসীর কান্নাকাটি ও দোয়া মোনাজাত

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com