পিরোজপুর শহরতলির কুমারখালী এলাকার রিকশাচালক রুস্তম আলী আকনের ছেলে আল আমীন। মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তাকে রোজগারের পথ বেছে নিতে হয়েছিল। সীমাহীন দরিদ্রতা শিক্ষাজীবনের আলো কেড়ে নিলেও হার মানেননি আল আমীন। অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল মেরামতের ওয়ার্কশপ দিয়ে মেকানিকের জীবন শুরু করে নিজের মেধা ও কৌশল খাটিয়ে ইজিবাইক তৈরি করে আল আমীন নিজেই বনে যান আবিষ্কারক। এরই মধ্যে একদিন টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে হেলিকপ্টার নির্মাণকাজ দেখেন। তার পর থেকে তিনি নিজেই হেলিকপ্টার তৈরির চেষ্টা শুরু করেন। ওয়ার্কশপ থেকে আয় করা টাকা দিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের পাখা, লোহার এঙ্গেল, জিআইপাইপ, এসএস পাইপসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনে এবং নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দিয়ে মেধা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে শুরু করেন হেলিকপ্টার তৈরির কাজ। আল আমীন জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নানা যন্ত্রাংশ ও মালপত্র কিনে কাঠামো তৈরি করে প্রথমে মোটর দিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি ছোট হেলিকপ্টার তৈরি করি। সেটি চালু করলে প্রায় দুই ফুট পর্যন্ত উপরে ওঠে। কিন্তু সেটির কোনো নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম ছিল না। পরে নিজের ব্যবহৃত ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন লাগিয়ে এবং একটু বড় কাঠামো তৈরি করে বর্তমান হেলিকপ্টারটি তৈরি করছি। হেলিকপ্টারটি আকাশে উড়ানোর জন্য এখন প্রয়োজন বড় পাখা এবং একটি নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম মেশিন। আর এজন্য প্রয়োজন পুরনো বা অকেজো কোনো হেলিকপ্টারের পাখা, যা সরকারি সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। আল আমীন আরও জানান, তার হেলিকপ্টার তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে বহু কষ্টে। সংসারের অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী থাকা সত্ত্বেও কেনা হয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। স্বপ্ন একটাই_ নিজের তৈরি হেলিকপ্টারে আকাশে উড়বেন একদিন। আল আমীন আশা করছেন, হেলিকপ্টারটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে সেটি ৩-৪ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়তে পারবে। আল আমীনের হেলিকপ্টার দেখতে প্রতিদিন ভিড় করে শত শত উৎসুক মানুষ। এর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পাশে দাঁড়ান তার বন্ধু-বান্ধব, স্কুল শিক্ষকসহ প্রশাসনের লোকজনও। আল আমীনের বন্ধু অটোরিকশাচালক তোতা মিয়া জানান, আল আমীনের হেলিকপ্টার তৈরির উৎসাহ-আগ্রহ দেখে আমরা তার পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াই। তাকে আরও উৎসাহ দিই, যাতে সে বড় একটা কিছু করে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে আল আল আমীনের হেলিকপ্টার তৈরির কাজ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
সমকালের সৌজন্যে প্রকাশিত
0Share