এমআর সুমন, রায়পুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মোটরসাইকেল চোরদের একটি শক্তিশালী দল গড়ে উঠেছে। ২০ থেকে ২৫ জনের এই দল শহরে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এদের রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা নিয়মিতই এই অপরাধ করে যাচ্ছে। প্রতি দিনই উপজেলার ও শহরসহ বাসাবাড়ি থেকে একের পর এক মোটরসাইকেল চুরি হলেও চোর ধরা নিয়ে পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই। গত ছয় মাসে চুরি হওয়া কোন মটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা যায়, কারও মোটরসাইকেল চুরির আগে তার সম্পর্কে আগেভাগেই খবর নিয়ে থাকে চক্রের সদস্যরা। চুরি করা নিরাপদ মনে হলে সুযোগমতো মোটরসাইকেলটি নিয়ে নিজেদের সুবিধামতো স্থানে রাখে। এরপর এর মালিকের কাছে ফোন দিয়ে তাদের দাবিমতো টাকা দিয়ে সেটি ছাড়িয়ে নিতে বলে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে মোটরসাইককেলটি চিরতরে হারাতে হবে বলে সাবধান করে দেয় তারা। উপজেলার বিভিন্নস্থানে গত ৬ মাসে অন্তত শতাধিক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে মোটরসাইকেল মালিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। এদিকে, হয়রানি এড়াতে অধিকাংশ চুরির ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে মামলা কিংবা অভিযোগ করনেনি মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, জানানোর পরও পুলিশ চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোরদের আটক করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না।
ভুক্তভোগী, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৬ মাসে রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পালসার, জিকসার, ডিসকভার, বাজাজ ও হিরোসহ বিভিন্ন কোম্পানির ব্যক্তি মালিকানাধীন শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। আর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অনেক সময় চুরির মামলা নিতে চায় না। তারা বলেন, জিডি করে যান পুলিশ খোঁজখবর পেলে আপনাদের জানাবে। তাই অনেক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা থানা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি জানান, রায়পুরে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি চক্র রয়েছে। রায়পুরসহ পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে। চক্রের সাথে কথা বলে টাকা দিয়ে তারা তাদের মোটরসাইকেল ফিরে পেয়েছেন।
গত ৫ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় শহরের সিংহের পুল এলাকা থেকে মো. সবুজ আলম নামের এক ব্যবসায়ী সুজুকি জিকসার মোটরসাইকেল চুরি হয়। গত ৬ শনিবর জুলাই সোহেল হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির এ্যাপাচি ১৬০ সিসি কালো রংয়ের উপজেলার হায়দগঞ্জ বাংলা বাজার ভূমি অফিসের সামনে থেকে তালা ভেঙ্গে নিয়ে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। গত ৭ জুলাই রবিাবর শহরের ইমন নামের আরেক ব্যবসায়ী বাসা বাড়ী এলাকা থেকে পালসার ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল চুরি হয়। গত মাসের রায়পুর উপজেলা জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ার সময় মসজিদের সামনে থেকে ওষুধ ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। এর পর দিন সকালে সিনেমা হল রোড থেকে ইসমাইল নামের এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি হয়। গত ১৮ এপ্রিল পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসেন সর্দারের বাসা থেকে তালা ভেঙে মোটরসাইকেল নিয়ে যায় চোরেরা। এসব ঘটনায় থানা ১০টি সাধারণ ডাইরি করলেও এখনও মোটরসাইকেলগুলোর কোনো হদিস মেলেনি। এ ছাড়াও চলতি বছরের মার্চ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ছয় মাসে রায়পুর পৌরসভার গিয়াস উদ্দিন, মহসিন মিয়া, মো. ইব্রাহিমেরসহ শতাধিক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি হয়।
ভুক্তভোগী যুবলীগ নেতা হোসেন সর্দার জানান, পুলিশের কাছে অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। ইচ্ছে করলেই পুলিশ যেকোন সময় যেকোন স্থান থেকে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু এ বিষয়ে কেন জানি পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়–য়া জানান, প্রায় সময় মোটরসাইকেল চোরদের আটক করা হয়। পরে আবার জামিনে একই পেশায় যোগ দেয় তারা। চুরি রোধে পুলিশের আন্তরিকতার কোন ঘাটনি নেই। সাধারণ জনগণ একটু সতর্ক হলে আর চুরি হবে না। মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ হয়েছে। চুরির ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
692Share