সানা উল্লাহ সানু: মঙ্গলবার(১৩ এপ্রিল) ঘড়িতে তখন বেলা ১টা। ঠিক এ সময়ে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীহাট ঘাটে দেখা যায় লকডাউনের কারণে ঘাটে শতশত যাত্রী ভোলা যাওয়ার অপেক্ষা করছে। কেউ ফেরিতে উঠছে, কেউ মাছ ধরার ট্রলারে উঠছে, আবার কেউ স্পীডবোটে উঠছে। মাছ ধরার প্রতিটি ট্রলার ঘাটেই যেন হেলে ধুলে পড়ছে। তবুও যাত্রী উঠানো থেমে নেই। এর মাঝে ট্রলারের ম্যানেজার যাত্রী প্রতি ৫শ টাকা হারে ভাড়া দিতে হবে বলে দিক নিদের্শনা দিচ্ছিল।
এ অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে ওই ট্রলার থেকে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছিল, ভোলার যাত্রী ও কলেজ ছাত্র শাহ নেয়াজ। বিষয়টি কি এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠলেন, এ ঘাটে প্রভাবশালী চক্র মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠেছে।
সরেজমিনে মজুচৌধুরীরহাট ঘুরে দেখার পর মনে হয়েছে, আসলেই নিরবেই জীবন নিয়ে ব্যবসার করার নতুন এক জায়গা পরিণত হয়েছে এ ঘাট।
সুমন নামের এক পরিবন শ্রমিক জানায়, মজুচৌধুরীহাট ঘাটে বালুর ব্যবসা, ফেরি ব্যবসা, লঞ্চ ব্যবসা, নৌকায় যাত্রী ব্যবসা, স্পীড বোটে যাত্রী ব্যবসা, নৌকা দিয়ে ফেরিতে যাত্রী উঠানো ব্যবসা, মাছের ব্যবসা সবই হচ্ছে । সবখানে শুধু টাকা আর বিশৃঙ্খলা। এক জায়গায় এত কিছু চললে তো বিশৃঙ্খলা হবেই।
লঞ্চ ঘাটের দিকে যেতেই দেখা যায়, যেখানে এতদিন লঞ্চ ভিড়তো সেখানে এখন, মাছ ধরার নৌকা বা ট্রলারে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। আছে কয়েকটি স্টীল বডির ট্রলারও। স্লুইচ গেইটের পাশের এ ঘাটে এ রকম হৈচৈ চলছিল। যাত্রী নিয়ে যেন উৎসব। প্রতি যাত্রী ভাড়া ৫শ থেকে ১ হাজার।
বাজার ঘুরে ফেরি ঘাটের দিকে যেতে দেখা যায়, পুরো এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ। কোন কোন ট্রাক এলোপাতাড়ি বালু ভর্তি করছে। কিছু গাড়ি ফেরির দিকে যাচেছ। কিছু গাড়ি ফেরি থেকে উঠছে। পুরো সড়ক যেন হৈচৈ আর বিশৃঙ্খলার ভিন্ন এক জায়গা।
ফেরিতে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট কেটে শতশত যাত্রী ফেরিতে উঠছে। আর ছোট ছোট গাড়িতে ফেরি ভর্তি। পথে মালবাহী গাড়ির প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা সারি। কিন্ত ফেরিতে মালবাহী গাড়ি মাত্র কয়েকটি। সব মাইক্রো আর প্রাইভেট। পুরো এলাকায় কোন ধরনের পোশাক পরিহিত আইন প্রয়োগকারী কোন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়নি। কোন যাত্রীর মুখে মাস্ক নামের কিছু দেখা যায়নি।
ফেরির ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে জিজ্ঞাসা করা হলো ফেরিতে গাড়ির চেয়ে যাত্রী বেশি কেন ? তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে ঘাটের ব্যবস্থাপক মোঃ কাউছার জানান, ইজাড়াদারা যাত্রী উঠায়। তিনি আরো জানান, বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ছোটগাড়ির চাপ বেড়েছে প্রায় ৫গুন। সে কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।
এদিকে জানা যায়, নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে উপকূলের ডেঞ্চারজোন হিসেবে চিহিৃত করে সরকার। এসময়ে ছোট ছোট এমএল সাইজের সব ধরনের লঞ্চ ও মাছ ধরার ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিআইডব্লিউটিএ।
কিন্তু লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীহাট ঘাটে প্রভাবশালী সে চক্র কোন ভাবে মানছে এমন নিষেধাজ্ঞা। এ ঘাটে এ রকম প্রায় শতাধিক অবৈধ নৌযানে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। আর নিষিদ্ধ সময় বা যে কোন ধরনের উৎসবে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা যাত্রীদেরকে জিম্মি করে টাকা আয়ের নেশায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলবে………
461Share