মজুরির টাকা না দেওয়ায় সুপারভাইজারকে পিটিয়ে হত্যা করে লক্ষ্মীপুরে যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এ ঘটনায় ইউসুফ ভূঁইয়া নামে একজনকে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউসুফ এর কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। মুক্ত ধর জানান, গত ৯ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদরের ঝুমুর মোড়স্থ জছলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ইকোনো সার্ভিস নামের একটি পরিবহনের ভেতর থেকে রিয়াদ হোসেন লিটন এর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লিটন ওই বাসের সুপারভাইজার ছিলেন।
মৃত লিটন লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ নগর এলাকার মৃত দুধু মিয়ার ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ জানিয়েছে, সে ভবঘুরে জীবন যাপন করতে থাকলে ওবায়দুর নামে তার এক প্রতিবেশী ভাই তাকে বাসে হেলপারের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করলে সে রাজি হয়ে যায়। তখন ওবায়দুর তার পরিচিত ‘ইকোনো সার্ভিস’ এর চালক নাহিদের সাথে কথা বলে তার সাথে সেই বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করে দেন।
গত ০৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে ঢাকাস্থ মানিকনগর ওই বাস কাউন্টার থেকে চালক নাহিদের সাথে পরিচিত হয়ে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন (৩৭), পুরাতন স্টাফ শিপনসহ যাত্রী নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে লক্ষীপুর পৌছে সকল যাত্রীদেরকে গন্তব্যে নামিয়ে লক্ষীপুর সদর থানাধীন ঝুমুর মোড়স্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উক্ত গাড়িটি পার্কিং করে।
পুরাতন স্টাফ শিপন দুই দিনের ছুটিতে যাবে বিধায় তার ভোর থেকে সহকারী হিসেবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ইউসুফ ভুইয়া (২৫) গাড়িটি পানি দিয়ে পরিস্কার করতে থাকে। চালক নাহিদ হোসেন, সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও সহকারী শিপন তাদের সারাদিনের প্রাপ্য মজুরী ভাগ বাটোয়ারা করে নাহিদ ও শিপন বাড়ীর উদ্দেশ্যে চলে যায়। পরে রাত একটার দিকে নতুন সহকারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ইউসুফ গাড়িতে অবস্থানরত সুপারভাইজার লিটনের নিকট তার পারিশ্রমিক চাইলে লিটন জানায় যে, তার ডিউটি এখনো শুরু হয়নি।
৯ এপ্রিল ভোর হতে তার ডিউটি শুরু হবে এবং লক্ষীপুর-ঢাকা প্রতিটি আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য সে ৪০০ টাকা পাবেন। টাকা পয়সার বিষয়ে কোন কথা থাকলে গাড়ীর চালক নাহিদ ওস্তাদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউসুফ ঢাকা হতে লক্ষীপুর পর্যন্ত পুরাতন সহকারী শিপনের সাথে কাজ শিখতে শিখতে এসেছে বিধায় তাকেও প্রারিশ্রামিক দিতে হবে এ নিয়ে প্রথমে তক-বিতর্ক এবং পরে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়।
একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা প্রায় দেড় ফুট লম্বা লোহার তৈরী হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে উপর্যুপরি মাথা বরাবর আঘাত করলে সে ওই গাড়ির ভেতরই মৃত্যুবরণ করে। তখন সহকারী ইউসুফ তাকে গাড়ির সিটের উপর বসিয়ে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রিয়াদ হোসেন লিটনের স্ত্রী হালিমা আক্তার বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি মামলা করেন।
0Share