লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরে সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক- আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের অর্থায়নে এবং লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুরের দশহাজার নদীভাঙ্গা মানুষ পাচ্ছেন একটি গণকবর ও মসজিদ। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন লক্ষ্মীপুর এসে ওই গণকবরের চলতি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনে এসে পুলিশের ডিআইজি জানান, চলতি মাসে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গণকবরটি স্থানীয়দের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
এসময় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. মোঃ কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিমতানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জসীম উদ্দিনসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারাসহ, ভবাণিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম রনি, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের সাংবাদিকরাসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
“মৃতদের কবর দেয়া নিয়ে দশহাজার নদীভাঙ্গা মানুষ দুঃচিন্তায়” এমন শিরোনামে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের একটি ভিডিও সংবাদ প্রচার করা হয়। উক্ত সংবাদটি নজরে আসে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক -আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ওই সংবাদের প্রতিবেদক সানা উল্লাহ সানু স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের পক্ষে আলোচনা করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশের আইজিপির নির্দেশে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ খোঁজ খবর নিয়ে ওই ভাগ্যহত মানুষের জন্য কবরের জমি কেনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ।
কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে সাড়ে উনত্রিশ শতক জমি কেনা হয়। এরপর ওই জমিতে মাটি ভরাট এবং বাউন্ডারি দেয়াল তুলে দেয়া হয়। কবরের পাশে তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, লাশ ধোয়ার ঘর, স্থাপন করা হয়েছে নলকূপ। কবরে আসার কাঁচা পথটিও ইটের সলিং করে দেয়া হয়েছে। কবর দেখা শোনার জন্য স্থানীয়দের মধ্যে একটি পরিচালনা কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। চলতি মাসে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গণকবরটি স্থানীয়দের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার প্রায় অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে আরও বহু এলাকায় নদী ভাঙ্গছে। নদীতে ভিটে মাটি হারানো অন্তত দুই হাজার পরিবারের দশ হাজার অসহায় মানুষ রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার পাশে ঘর তুলে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছে।
এইসব পরিবারের কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার জন্য কোনো কবরস্থান নেই। তাই তারা যেখানে-সেখানে লাশ দাফন করছেন। পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে কবর দেওয়া নিয়ে সবসময় দুঃচিন্তায় ভুগতে হচ্ছিল তাদের। পরিজনকে হারিয়ে শোকের পরিবর্তে উল্টো কবর দেওয়ার দুর্ভাবনা পোহাতে হতো তাদের। তাদের এ খবরটি লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত হলে এখন সেখানে পুলিশের আইজিপির পক্ষ থেকে একটি গণকবর ও মসজিদ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের এ মহতী উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশে পুলিশের আইজিপিসহ লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশকে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
16Share