সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেশে ৫০ভাগ মানুষের একমাস বসে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই- ফাতিহুল কাদির সম্রাট

দেশে ৫০ভাগ মানুষের একমাস বসে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই- ফাতিহুল কাদির সম্রাট

দেশে ৫০ভাগ মানুষের একমাস বসে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই- ফাতিহুল কাদির সম্রাট

ফাতিহুল কাদির সম্রাট: আল্লাহ যাদের প্রতি অতিশয় অসন্তুষ্ট, যারা তার করুণাবঞ্চিত, তাদের মধ্যে একটি শ্রেণি হলো অহংকারী গরিব। আরেকটি শ্রেণি হলো অপচয়প্রিয় মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের জীবনাচরণে, ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র এই অহংবোধ আর অপচয়প্রবণতা মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। তবে খালি কলসি বাজে বেশি এই আপ্ত বাক্যটি যে কতখানি সত্য তা করোনার আক্রমণে মাত্র দুমাসেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

রেমিটেন্স, তৈরি পোশাক শিল্প ও বেসরকারি খাতের আনুকূল্যে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু সেটা আহামরি কিছু নয়। এতেই আমাদের মাথা গেল খারাপ হয়ে। আমাদের ভাবগতিকে বাহাদুরি আর অপচয়প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠল। অহংকারে যেন মাটিতে পা পড়ে না আমাদের। কথায় কথায় আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে তাচ্ছিল্য করতে ছাড়লাম না। কোনো কোনো মহামানব আমাদের অর্থনীতির সাইজকে কানাডার চেয়েও বড় বলতে কসুর করলেন না। আমেরিকাকেও আমাদের মুখাপেক্ষী বলতে ছাড়লাম না কেউ কেউ। আমাদের চলাফেরায়, জীবনাচরণে ও খরচপাতিতে আলিশান ভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠল। আলোঝলমলে চাকচিক্যের আড়ালে চাপা পড়ে রইল আর্থসামাজিক ভঙ্গুরতার দীনহীন দশা।

টাকার বান্ডিল শব্দহীন আর খুচরা পয়সা ঝনঝনিয়ে উঠে। কাঙালের পকেটে খুচরা পয়সা এলে সে ইচ্ছে করেই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে হাঁটে, যাতে সবার কানে মুদ্রার আওয়াজটা পৌঁছায়। কারণে-অকারণে পয়সা ছিটাতে কসুর করে না দুপয়সার কাঙাল। ধনীদেরাও পাত্তা দেয় না সে। আমাদের অবস্থা হলো এই কাঙালের মতো। পয়সার দেমাকে হাজারি নোটকে উড়িয়ে দিলাম তুড়ি মেরে। এই হাতখোলা খরুচে ভাবটা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র সংক্রমিত হলো। বিলাস-ব্যসনে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করলাম ধনী দেশকেও। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের পর্যটন বিভাগ বিদেশি পর্যটকদের ওপর একটি জরিপ চোলিয়ে বলেছে, তাদের দেশে আসা বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে হাতখোলা দিলদরিয়া হলো বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের মানুষের শাহেনশাহ ভাব দেখে নাকি কলকাতার মানুষ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এদেশের রাজপথে সাঁই সাঁই জাপানি গাড়ি দেখে তারা নাকি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। এদেশের সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট বের হতে দেখে তারা অবাক না হয়ে পারে না। কলকাতার মানুষের কৃপণতা ও অতিথি আপ্যায়ন নিয়ে বাংলাদেশে অনেক মুখরোচক গল্প প্রচলিত। বাংলাদেশের মানুষের হাতখোলাভাব ও দরাজদিল আতিথেয়তা নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো আস্ত একটা উপন্যাসই লিখেছেন। পরিমিতিবোধ ও সংযমকে তারা জীবন সংস্কৃতির অংশ করে নিয়েছে যেটাকে আমরা কৃপণতা বলে উপহাস করছি অবিরাম। আমরা সেই ভারতীয়দে নিয়ে হাসাহাসি করছি যাদের করোনা প্যাকেজের সাইজ আমাদের বার্ষিক জিডিপির সমান।

গত কয়েক বছর বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় অনুষ্ঠান-আয়োজনে অনাবশ্যক ব্যয় তথা অপচয় দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। ইন্নাল মুবাজ্জিরিনা কানু ইখওয়ানাশ্শায়াতিন—কুরানের এই হুঁশিয়ারি আমার হৃদয়তন্ত্রে বেজেছে অবিরাম। নিজেকে শয়তানের ভাই মনে হয়েছে, কিন্তু আত্মগ্লানির পীড়নে দগ্ধ হওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না। করোনার আপৎকালে অপচয়িত অর্থের জন্যে পোড়াচ্ছে আরো বেশি।

সাম্প্রতিককালে বেহুদা খরচ ও ধনের বড়াই একটি জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে, যাকে বলে গরিবের ঘোড়ারোগ। দুপয়সার সঞ্চয় নেই, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নেই কিন্তু ফুটানির শেষ নেই। এদেশে কিছু মানুষের অবশ্য টাকার শেষ নেই। বিদেশে তাদের সেকেন্ড হোম আছে। দেশে আছে অভাবনীয় বিত্তবৈভব। ঢাকার কিছু বাড়ির দিকে তাকালে বোঝা যায় ইটের বদলে টাকা ব্যবহার করা গেলে অনেকে খুশি হতো। ধনিকশ্রেণির ব্যামোটা আরো জটিল। সর্দিকাশি-বাজার-শপিং সবকিছুর জন্যে ব্যাংকক –সিঙ্গাপুর না গেলে চলে না। সামাজিক নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, পুঁজিগঠন ও অর্থনৈতিক ভিত এইসব বিষয়কে এড়িয়ে দৃশ্যমান অবকাঠামো তৈরির নামে ব্যয়বহুল কার্যকমের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা যে শূন্যাকাশে বালাখানা নির্মাণ করেছি সেটি প্রমাণিত হয়েছে করোনার থাবায়। করোনা এসে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, দেশের ৫০ভাগ মানুষের একমাস বসে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই। অধিকাংশ মানুষের কোনো কোনো সঞ্চয় নেই। কোনো অর্থনৈতিক ব্যাকাপ নেই। তিনভাগের একভাগ মানুষের অবস্থা দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। দুদিন না যেতে হাত পাততে হয় নির্লজ্জভাবে। যে প্রতিবেশীদের কৃপণতা নিয়ে আমরা রসিয়ে রসিয়ে গল্প করি তাদের কিন্তু প্রায় সবার ব্যাংকে কিছু না কিছু সঞ্চয় এবং বীমা আছে। এদেশের অধিকাংশ মানুষের অর্থব্যবস্থাপনার কোনা পরিকল্পনা নেই, নেই ভবিষ্যতের ভাবনা। জাতীয়ভাবেও নেই মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়ানোর নির্দেশনা। ফলে সামান্য অভিঘাতেই বালির বাঁধের মতো আমাদের জীবন আজ বিপন্ন।

করোনার আপদ কেটে গেলে আমাদের এই অহং ও অপচয়প্রিয় মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার সাধনা করতে হবে। বদলে ফেলতে হবে নিজেদের জীবনদৃষ্টি। সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সঞ্চয়কে জাতীয় সংস্কৃতির অংশ করে নিতে হবে। দৃশ্যমান উন্নয়নের চেয়ে মানবিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। জৌলুস ও জারিজুরিকে সজ্ঞানে পরিত্যাগ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে হবে শক্ত ভিতের ওপর। করোনার পর এর চেয়েও দুরন্ত কোনো আপদ যে ধেয়ে আসবে না তা বলা যাবে না। তখন যেনো এখনকার মতো বিদিশা হতে না হয় সেজন্যে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

আমি সাহিত্যের মানুষ। অর্থনীতি নিয়ে কথা বলা সাজে না। তবু এক অন্তর্গত তাড়না থেকে কথাগুলো না বলে পারলাম না। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান,  বাংলা বিভাগ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ    

বাংলাদেশ | বিশ্ব আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনের ৪৭৭ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম

কলকাতায় শুরু হচ্ছে ‘ইন্দো-বাংলা নোয়াখালী উৎসব’

মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর কেঁদে দিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাত্তার পালোয়ান

উপহার খেদমত সেন্টার বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন

তানভীর আলাদিনকে প্রধান সমন্বয়কারী করে ফেনী থিয়েটারের কমিটি গঠন

লক্ষ্মীপুর সোসাইটি ইউ’কের দোয়া ও ইফতার মাহফিল

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com