সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সাগরে রহস্যময় বিষ্ফোরণে মৃত্যুপুরী লক্ষ্মীপুরের এক গ্রাম; ৫জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৬জন

সাগরে রহস্যময় বিষ্ফোরণে মৃত্যুপুরী লক্ষ্মীপুরের এক গ্রাম; ৫জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৬জন

সাগরে রহস্যময় বিষ্ফোরণে মৃত্যুপুরী লক্ষ্মীপুরের এক গ্রাম; ৫জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৬জন

কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে রহস্যময় এক বিষ্ফোরণে আহত ২১ জেলের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ ১১ জনের ৫জন মারা গেছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন বাকি ৬ জনের অবস্থাও আশংকাজনক। মারা যাওয়া ও আহত জেলেদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ও চর রমিজ ইউনিয়নে। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) মৃত ও আহত জেলেদের বাড়ি গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। এঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে  হাহাকার দেখা গেছে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা অবস্থায় তাদের ট্রলারে রহস্যময় এক বিষ্ফোরণে ১২জন অগ্নিদগ্ধসহ ট্রলারে থাকা ২১ জেলের সবাই আহত হয়। অগ্নিদগ্ধ আহত ৫জন ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ও ১জন নিজ বাড়িতে রয়েছেন। স্বজন ও চিকি]সকরা জানিয়েছে তাদের শরীরের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই পুড়ে গেছে ।

মৃত জেলেদের মধ্যে রয়েছে, চর গাজী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ টুমচর গ্রামের মো: নুর উদ্দিনের ছেলে মো: বেলাল হোসেন (২৮), মো: সিরাজুল হকের ছেলে মো: মেহেরাজ(২৬), চর লক্ষ্মী গ্রামের মো: আবদুজ জাহের ছেলে মো: মিলন(৩০), চর রমিজ ইউনিয়নের চর গোসাই গ্রামের মন্তাজল হকের ছেলে আবুল কাশেম মিস্ত্রী (৫৫),আবু তাহেরের ছেলে মো. রিপন মাঝি (৩৮)।

অন্যদিকে অগ্নিদগ্ধ আহত চিকিৎসাধীন জেলেদের মধ্যে রয়েছে চর লক্ষ্মী গ্রামের খুশিদ আলমের ছেলে মো:আলাউদ্দিন, কামাল উদ্দিনের ছেলে মো:সাহাবউদ্দিন,আবু তাহেরের ছেলে মো:আবু জাহের,সিরাজুল হকের ছেলে মো:মেহেরাজ উদ্দিন,সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো:মিরাজ উদ্দিন,মো:দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো:মিরাজের অবস্থা আশংকাজন। এর মধ্যে চর লক্ষ্মীগ্রামের আবদুর জাহেরের দুই ছেলের মধ্যে মেহরাজ (২৬)কে আহত অবস্থায় বাড়িতে দেখা গেছে এবং মো: মিলন মারা গেছেন।

এছাড়া এ ঘটনায় আরো ১০ জেলে সামান্য আহত হয়ে কক্সবাজারে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছে।

সামান্য আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসা চর লক্ষ্মী গ্রামের জেলে মো: শরীফ(২৫) জানান, মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নিষেধের কারণে ও পরিবারের অভাব মেটানোর জন্য গত কয়েক দিন আগে তারা একই গ্রামের মনির মাঝির নেতৃত্বের স্থানীয় ২১জন জেলে মিলে কক্সবাজারে যায়। সেখানে গিয়ে কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সোহেল কোম্পানী নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন এফবি ওশিন নামের একটি ট্রলারে মাছ ধরতে সাগরে যায়। ঘন্টায় ৬০ কিমি বেগে ট্রলার চলানোর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে তারা সাগরে জাল ফেলে। মধ্যরাতে তাদের ট্রলারে হঠাৎ একটা শব্দ করে। পরপর আরো দুটি শব্দ হয়। এরপর তারা কিছু লোক সাগরে পড়ে যায়, কিছু লোক কেবিনে এলোপাতাড়ি পড়ে থাকে। ট্রলারে থাকা একজনমাত্র লোক  রশি ফেলে সাগরে পড়ে যাওয়াদের উদ্ধার করে। এরপর তারা ওপরে উঠে দেখে তাদের সাথে কেবিনে থাকা সবাই বিভৎস্য হয়ে গেছে। হাউমাউ করে চিৎকার দিতেথাকেন তারা। এর একঘন্টা পর আরেকটি ফিশিং ট্রলার এসে ৩ ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে আমাদেরকে নেটওয়ার্ক এলাকায় নিয়ে আসে।

তারপর তারা তাদের কোম্পানীকে ফোন করে বিষয়টি জানালে, কোম্পানী স্পীডবোট পাঠিয়ে তাদের ট্রলার কক্সবাজার নিয়ে আসে। আহতদের কে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চট্টগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

জেলে মো: শরীফ আরো জানান, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ইঞ্জিনে বিষ্ফোরণ হয়েছে, কিন্ত আমরা দেখলাম আমাদের ইঞ্জিনে কিছুই হয়নি। গ্যাসের সিলিন্ডারগুলো ঠিক ছিল। ট্রলারও ঠিক ছিল। কিন্ত বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। কিভাবে আমরা এত লোক আহত হলাম ? ওই বিকট শব্দটি কিসের ছিল ? আমরা জানি না। শরীফ অভিযোগ করে জানান, আমাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর কোম্পানী আজ পর্যন্ত আর কোন খোঁজ নেয়নি।

এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের  চিকিৎসকরা তাদের ১২জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করেন। সেখানের চিকিৎসরা তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। এদিকে মারাত্মক আহত ও গরীব জেলেদের চিকিৎসা নিয়ে যখন সংকট দেখা দেয় সেসময় খবর পেয়ে তাদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’। স্বপ্ন নিয়ে আহত ১২ জেলেকে গত ২ মার্চ তারিখে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করায়। পাশাপাশি রোগীদের সেবায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে,  চিকিৎসা ও খরচের অর্থ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে  শুক্রবার রাতে ২ জন, শনিবার ১জন, সোমবার ১জন এবং মঙ্গলবার ১জন মারা যায়।

‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, মানবিক দিক থেকে বিপদে পড়া জেলেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন জেলের অবস্থা বেশি ভালো না। তিনি গরীব মারা যাওয়া ও চিকিৎসাধীন জেলে ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীসহ দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন জানান, অগ্নিদগ্ধ বেশিরভাগ জেলের বাড়িই তার এলাকায়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ওইসব জেলেদের পরিবার চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোমিন জানান, কি কারণে জেলেদের ট্রলারে বিষ্ফোরণ হয়েছে তার খোঁজ খবর নিবেন তিনি। অন্যদিকে খবর পেয়ে আহত ও মারা যাওয়া জেলেদের তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যারয়ে পাঠানো হয়েছে । দুই-এক দিনের মধ্যে তাদের কে সহায়তা করা হবে। অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় প্রণীত জেলে সহায়তা নীতিমালা-২০১৯ অনুসারে তারা কোন আর্থিক সহায়তা পাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সেজন্য তাদেরকে নিবন্ধীত জেলে হতে হবে। তবুও তারা যেহেতু জেলে সেকারণে তিনি প্রস্তাব পাঠাবেন।

দুঃসংবাদ আরও সংবাদ

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রিক্সাচালকের বসতঘর পুড়ে ছাই!

রামগতি বাজারে আগুন

রামগতিতে গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

রামগতির মেঘনা নদী থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পাচ্ছে না নৌ-পুলিশ

নিখোঁজের দুইদিন পর রামগতি মেঘনায় কিশোরীর লাশ উদ্ধার

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কমলনগরের সাংবাদিক রিয়াজের মায়ের মৃত্যু 

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com